পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নূতন ও পুরাতন a অঙ্কিত করেছে । এক দিক থেকে একে নগর বলা যেতে পারে, এক দিক থেকে একে অরণ্য বলা যায়। এখানে কেবল ছায়া এবং বিশ্রাম, চিন্তা এবং বিষাদ বাস করতে পারে । এখানকার ঝিল্পিমুখরিত অরণ্যমর্মরের মধ্যে, এখানকার বিচিত্রভঙ্গী জটাভারগ্রস্ত শাখা-প্রশাখা ও রহস্যময় পুরাতন অট্টালিকাভিত্তির মধ্যে শতসহস্র ছায়াকে কায়াময়ী ও কায়াকে মায়াময়ী বলে ভ্রম হয়। এখানকার এই সনাতন মহাছায়ার মধ্যে সত্য এবং কল্পনা ভাই-বোনের মতো নির্বিরোধে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ প্রকৃতির বিশ্বকার্য এবং মানবের মানসিক স্বষ্টি পরম্পর জড়িত বিজড়িত হয়ে নানা আকারে ছায়াকুঞ্জ নির্মাণ করেছে। এখানে ছেলেমেয়েরা সারাদিন খেলা করে কিন্তু জানে না তা খেলা, এবং বয়স্ক লোকেরা নিশিদিন স্বপ্ন দেখে কিন্তু মনে করে তা কর্ম। জগতের মধ্যাহ্ন-স্বর্যালোক ছিদ্রপথে প্রবেশ করে কেবল ছোটো ছোটো মানিকের মতো দেখায়, প্রবল ঝড় শত শত সংকীর্ণ শাখাসংকটের মধ্যে প্রতিহত হয়ে মৃদু মর্মরের মতো মিলিয়ে আসে। এখানে জীবন ও মৃত্যু, স্থখ ও দুঃখ, আশা ও নৈরাতের সীমাচিহ্ন লুপ্ত হয়ে এসেছে ; অদৃষ্টবাদ এবং কর্মকাণ্ড, বৈরাগ্য এবং সংসারযাত্রা একসঙ্গেই ধাবিত হয়েছে। অবিশু্যক এবং অনাবশ্বক, ব্ৰহ্ম এবং মৃংপুত্তল, ছিন্নমূল শুষ্ক অতীত এবং উদ্ভিন্নকিশলয় জীবন্ত বর্তমান সমান সমাদর লাভ করেছে। শাস্ত্র যেখানে পড়ে আছে সেইখানে পড়েই আছে। এবং শাস্ত্রকে আচ্ছন্ন করে যেখানে সহস্ৰ প্রথাকীটের প্রাচীন বল্মীক উঠেছে সেখানেও কেহ অলস ভক্তিভরে হস্তক্ষেপ করে না । গ্রন্থের অক্ষর এবং গ্রন্থকীটের ছিদ্র দুই এখানে সমান সম্মানের শাস্ত্র । এখানকার অশ্বখবিদীর্ণ ভগ্ন মন্দিরের মধ্যে দেবতা এবং উপদেবতা একত্রে আশ্রয় গ্রহণ করে বিরাজ করছে। এখানে কি তোমাদের জগৎযুদ্ধের সৈন্যশিবির স্থাপন করবার স্থান । এখানকার ভগ্ন ভিত্তি কি তোমাদের কলকারখানা, তোমাদের অগ্নি