পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե- স্বদেশ শ্বসিত সহস্ৰবাহু লৌহদানবদের কারাগার নির্মাণের যোগ্য ! তোমাদের অস্থির উদ্যমের বেগে এর প্রাচীন ইষ্টকগুলিকে ভূমিসাৎ করে দিতে পার বটে, কিন্তু তার পরে পৃথিবীর এই অতি প্রাচীন শয্যাশায়ী জাতি কোথায় গিয়ে দাড়াবে ! এই নিশ্চেষ্ট নিবিড় মহা নগরণরণ্য ভেঙে গেলে সহস্ৰ মৃত বৎসরের যে একটি বৃদ্ধ ব্রহ্মদৈত্য এখানে চিরনিভৃত আবাস গ্রহণ করেছিল সেও যে সহসা নিরাশ্রয় হয়ে পড়বে। এরা বহু দিন স্বহস্তে গৃহনির্মাণ করে নি, সে অভ্যাস এদের নেই, এদের সমধিক চিন্তাশীলগণের সেই এক মহৎ গর্ব । তারা যে কথা নিয়ে লেখনীপুচ্ছ আস্ফালন করে সে কথা অতি সত্য, তার প্রতিবাদ করা কারো সাধ্য নয় । বাস্তবিকই অতি প্রাচীন আদিপুরুষের বাস্তুভিত্তি এদের কখনো ছাড়তে হয় নি। কালক্রমে অনেক অবস্থাবৈসাদৃশু, অনেক নূতন স্থবিধা-অস্থবিধার স্বষ্টি হয়েছে ; কিন্তু সবগুলিকে টেনে নিয়ে মৃতকে এবং জীবিতকে, সুবিধাকে এবং অসুবিধাকে প্রাণপণে সেই পিতামহপ্রতিষ্ঠিত এক ভিত্তির মধ্যে ভুক্ত করা হয়েছে। অসুবিধার খাতিরে এরা কখনো স্পর্ধিত ভাবে স্বহস্তে নূতন গৃহ-নির্মাণ বা পুরাতন গৃহ-সংস্কার করেছে এমন গ্লানি এদের শত্রুপক্ষের মুখেও শোনা যায় না। যেখানে গৃহছাদের মধ্যে ছিদ্র প্রকাশ পেয়েছে সেখানে অযত্নসভূত বটের শাখা কদাচিৎ ছায়া দিয়েছে ; কালসঞ্চিত মৃত্তিকাস্তরে কথঞ্চিৎ ছিদ্ররোধ করেছে । এই বনলক্ষ্মীহীন ঘন বনে, এই পুরলক্ষ্মীহীন ভগ্ন পুরীর মধ্যে, আমরা ধুতিটি চাদরটি পরে অত্যন্ত মৃদুমন্দভাবে বিচরণ করি ; আহারান্তে কিঞ্চিৎ নিদ্রা দিই ; ছায়ায় বসে তাস পাশা খেলি ; যা-কিছু অসম্ভব এবং সাংসারিক কাজের বাহির তাকেই তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি ; যা-কিছু কার্যোপযোগী এবং দৃষ্টিগোচর তার প্রতি মনের অবিশ্বাস কিছুতে সম্যক দূর হয় না ; এবং এরই উপর কোনো ছেলে