পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> & স্বদেশ হয় অবিশ্রাম চলো এবং জীবনচর্চা করো, নয় বিশ্রাম করে এবং বিলুপ্ত হও, পৃথিবীর এই রকম নিয়ম। অতএব আমরা যে জগতের মধ্যে লুপ্তপ্রায় হয়ে আছি, তাতে কারো কিছু বলবার নেই। তবে সে সম্বন্ধে যখন বিলাপ করি তখন এই রকম ভাবে করি যে, পূর্বে যে নিয়মের উল্লেখ করা হল সেটা সাধারণত খাটে বটে কিন্তু আমরা ওরই মধ্যে এমন একটু স্থযোগ করে নিয়েছিলুম যে আমাদের সম্বন্ধে অনেক দিন খাটে নি। যেমন মোটের উপরে বলা যায় জরামৃত্যু জগতের নিয়ম কিন্তু আমাদের যোগীরা জীবনীশক্তিকে নিরুদ্ধ করে মৃতবৎ হয়ে বেঁচে থাকবার এক উপায় আবিষ্কার করেছিলেন । সমাধি-অবস্থায় তাদের যেমন বৃদ্ধি ছিল না তেমনি হ্রাসও ছিল না। জীবনের গতিরোধ করলেই মৃত্যু আসে কিন্তু জীবনের গতিকে রুদ্ধ করেই তারা চিরজীবন লাভ করতেন । আমাদের জাতি সম্বন্ধেও সেই কথা অনেকটা খাটে । অন্য জাতি যে কারণে মরে আমাদের জাতি সেই কারণকে উপায়স্বরূপ করে দীর্ঘ জীবনের পথ আবিষ্কার করেছিলেন । অণকাজক্ষার আবেগ যখন হ্রাস হয়ে যায়, শ্রাস্ত উদ্যম যখন শিথিল হয়ে আসে তখন জাতি বিনাশপ্রাপ্ত হয়। আমরা বহু যত্নে দুরাকাজক্ষাকে ক্ষীণ ও উত্তমকে জড়ীভূত করে দিয়ে সমভাবে পরমায়ু রক্ষা করবার উদ্যোগ করেছিলুম। মনে হয় যেন কতকটা ফললাভও হয়েছিল । ঘড়ির কাটা যেখানে আপনি থেমে আসে সময়কেও কৌশলপূর্বক সেইখানে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবী থেকে জীবনকে অনেকটা পরিমাণে নির্বাসিত করে এমন একটা মধ্য-আকাশে তুলে রাখা গিয়েছিল যেখানে পৃথিবীর ধুলো বড়ো পৌছত না, সর্বদাই সে নির্লিপ্ত নির্মল নিরাপদ থাকত। কিন্তু একটা জনশ্রুতি প্রচলিত আছে যে, কিছুকাল হল নিকটবর্তী কোন এক অরণ্য থেকে এক দীর্ঘজীবী যোগমগ্ন যোগীকে কলিকাতায়