পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S \e স্বদেশ রাস্তা, পবিত্র ব্যক্তির কমলচরণতলের অযোগ্য। এখন যদি প্রতিষ্ঠ} চাও তো চিত্তের উদার প্রসার, সর্বাঙ্গীণ নিরাময় সুস্থ ভাব, শরীর ও বুদ্ধির বলিষ্ঠত, জ্ঞানের বিস্তার এবং বিশ্রামহীন তৎপরতা চাই। সাধারণ পৃথিবীর স্পর্শ সযত্নে পরিহার করে মহামান্য আপনাটিকে সর্বদা ধুয়ে-মেজে ঢেকে-ঢুকে অন্য সমস্তকে ইতর আখ্যা দিয়ে ঘৃণা করে আমরা যেরকম ভাবে চলেছিলুম তাকে আধ্যাত্মিক বাবুয়ানা বলে— এই রকম অতিবিলাসিতায় মচুন্যত্ব ক্রমে অকর্মণ্য ও বন্ধ্যা হয়ে আসে । জড় পদার্থকেই কাচের আবরণের মধ্যে ঢেকে রাখা যায়। জীবকেও যদি অত্যন্ত পরিষ্কার রাখবার জন্য নির্মল স্ফটিক-আচ্ছাদনের মধ্যে রাখা যায় তা হলে ধূলি রোধ করা হয় বটে, কিন্তু সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যও রোধ করা হয়, মলিনতা এবং জীবন দুটোকেই যথাসম্ভব হ্রাস করে দেওয়া হয় । আমাদের পণ্ডিতেরা বলে থাকেন, আমরা যে একটি আশ্চর্য আর্য পবিত্রতা লাভ করেছি তা বহু সাধনার ধন, তা অতি যত্বে রক্ষা করবার যোগ্য ; সেইজন্যই আমরা স্লেচ্ছ যবনদের সংস্পর্শ সর্বতোভাবে পরিত্যাগ করতে চেষ্টা করে থাকি । এ সম্বন্ধে দুটি কথা বলবার অাছে। প্রথমত, আমরা সকলেই যে বিশেষরূপে পবিত্রতা চর্চা করে থাকি তা নয়, অথচ অধিকাংশ মানবজাতিকে অপবিত্র জ্ঞান করে একটা সম্পূর্ণ অন্যায় বিচার, অমূলক অহংকার, পরম্পরের মধ্যে অনর্থক ব্যবধানের স্বষ্টি করা হয়। এই পবিত্রতার দোহাই দিয়ে এই বিজাতীয়-মানব-ঘৃণা আমাদের চরিত্রের মধ্যে যে কীটের ন্যায় কার্য করে তা অনেকে অস্বীকার করে থাকেন। র্তারা অম্লানমুখে বলেন, কই আমরা ঘৃণা কই করি ? আমাদের শাস্ত্রেই যে আছে, বস্থধৈব কুটুম্বকম্। শাস্ত্রে কী আছে এবং বুদ্ধিমানের ব্যাখ্যায় কী দাড়ায় তা বিচার্য নয়, কিন্তু আচরণে কী প্রকাশ পায় এবং সে আচরণের আদিম কারণ যাই থাক তার থেকে সাধারণের চিত্তে স্বভাবতই