পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\58 স্বদেশ যুরোপ বলে, এই সন্তোষই, এই জিগীষার অভাবই জাতির মৃত্যুর কারণ । তাহা যুরোপীয় সভ্যতার মৃত্যুর কারণ বটে, কিন্তু আমাদের সভ্যতার তাহাই ভিত্তি। যে লোক জাহাজে আছে তাহার পক্ষে যে বিধান, যে লোক ঘরে আছে তাহারও পক্ষে সেই বিধান নহে। যুরোপ যদি বলে, সভ্যতামাত্রেই সমান এবং সেই বৈচিত্র্যহীন সভ্যতার অাদর্শ কেবল যুরোপেই আছে, তবে তাহার সেই স্পর্ধাবাক্য শুনিয়াই তাড়াতাড়ি আমাদের ধনরত্নকে ভাঙা কুলা দিয়া পথের মধ্যে বাহির করিয়া ফেলা সংগত হয় না। বস্তুত সন্তোষের বিকৃতি অাছে বলিয়াই অত্যাকাজক্ষার যে বিকৃতি নাই এ কথা কে মানিবে ? সস্তোষে জড়ত্ব প্রাপ্ত হইলে যদি কাজে শৈথিল্য অানে ইহা সত্য হয়, তবে অত্যাকাজক্ষার দম বাড়িয়া গেলে যে ভূরি-ভূরি অনাবশ্বক ও নিদারুণ অকাজের স্বষ্টি হইতে থাকে এ কথা কেন ভুলিব ? প্রথমটাতে যদি রোগে মৃত্যু ঘটে, তবে দ্বিতীয়টাতে অপঘাতে মৃত্যু ঘটিয়া থাকে। এ কথা মনে রাখা কর্তব্য, সন্তোষ এবং আকাজক্ষা দুয়েরই মাত্রা বাড়িয়া গেলে বিনাশের কারণ জন্মে । অতএব সে অালোচনা ছাড়িয়া দিয়া ইহা স্বীকার করিতেই হইবে, সন্তোষ সংযম শাস্তি ক্ষমা, এ সমস্তই উচ্চতর সভ্যতার অঙ্গ । ইহাতে প্রতিযোগিতা-চকুমকির ঠোকাঠুকি-শব্দ ও ফুলিঙ্গবর্ষণ নাই, কিন্তু হীরকের স্নিগ্ধ নিঃশব্দ জ্যোতি আছে। সেই শব্দ ও স্ফুলিঙ্গকে এই ধ্রুব জ্যোতির চেয়ে মূল্যবান মনে করা বর্বরতামাত্র। যুরোপীয় সভ্যতার বিদ্যালয় হইতেও যদি সে বর্বরতা প্রস্থত হয় তবু তাহ বর্বরতা। / আমাদের প্রকৃতির নিভৃততম কক্ষে যে অমর ভারতবর্ষ বিরাজ করিতেছেন, আজি নববর্ষের দিনে তাহাকে প্রণাম করিয়া আসিলাম । দেখিলাম, তিনি ফললোলুপ কর্মের অনন্ত তাড়না হইতে মুক্ত হইয়া শাস্তির ধ্যানাসনে বিরাজমান, অবিরাম জনতার জড়পেষণ হইতে মুক্ত