পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেশীয় রাজ্য ( & অঙ্গুষ্ঠ দান করিব না। এ কথা মনে রাখিতেই হইবে, নিজের প্রকৃতিকে লঙ্ঘন করিলে দুর্বল হইতে হয় । ব্যান্ত্রের আহার্যপদার্থ বলকারক সন্দেহ নাই, কিন্তু হস্তী তাহার প্রতি লোভ করিলে নিশ্চিত মরিবে । আমরা লোভবশত প্রকৃতির প্রতি ব্যভিচার যেন না করি । অামাদের ধর্মেকর্মে ভাবে-ভঙ্গিতে প্রত্যহই তাহা করিতেছি, এইজন্য অামাদের সমস্যা উত্তরোত্তর জটিল হইয়া উঠিতেছে— আমরা কেবলই অকৃতকার্য এবং ভারাক্রান্ত হইয়া পড়িতেছি। বস্তুত জটিলতা আমাদের দেশের ধর্ম নহে । উপকরণের বিরলতা, জীবনযাত্রার সরলতা আমাদের দেশের নিজস্ব— এইখানেই আমাদের বল, আমাদের প্রাণ, আমাদের প্রতিভা। অামাদের চণ্ডীমণ্ডপ হইতে বিলাতি কারখানাঘরের প্রভূত জঞ্জাল যদি বাট দিয়া না ফেলি তবে দুই দিক হইতেই মরিব, অর্থাৎ বিলাতি কারখানাও এখানে চলিবে না, চণ্ডীমণ্ডপও বাসের অযোগ্য হইয়া উঠিবে। আমাদের দুর্ভাগ্যক্রমে এই কারখানাঘরের ধুমধূলিপূর্ণ বায়ু দেশীয় রাজ্যব্যবস্থার মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে, সহজকে অকারণে জটিল করিয়া তুলিয়াছে, বাসস্থানকে নির্বাসন করিয়া দাড় করাইয়াছে। যাহারা ইংরেজের হাতে মানুষ হইয়াছেন তাহারা মনেই করিতে পারেন না যে, ইংরেজের সামগ্রীকে যদি লইতেই হয় তবে তাহাকে আপন করিতে না পারিলে তাহাতে অনিষ্টই ঘটে এবং আপন করিবার একমাত্র উপায় তাহাকে নিজের প্রকৃতির অনুকূলে পরিণত করিয়া তোলা, তাহাকে যথাযথ না রাখা । খাদ্য যদি খাদ্যরূপেই বরাবর থাকিয়া যায়, তবে তাহাতে পুষ্টি দূরে থাক, ব্যাধি ঘটে। খাদ্য যখন খাদ্যরূপ পরিহার করিয়া আমাদের রসরক্ত-রূপে মিলিয়া যায় এবং যাহা মিলিবার নহে পরিত্যক্ত হয়, তখনি তাহা অামাদের প্রাণবিধান করে । বিলাতি সামগ্রী যখন আমাদের ভারত প্রকৃতির দ্বারা জীর্ণ হইয়া তাহার আত্মরূপ ত্যাগ করিয়া আমাদের কলেবরের সহিত একাত্ম হইয়া যায় তখনি তাহা আমাদের