পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা (ty একই কালে সমস্ত বিরোধী শক্তি পাশাপাশি কাজ করিতেছে ; কিন্তু তাহাদের বৈচিত্র্য সত্ত্বেও তাহদের মধ্যে একটি পারিবারিক সাদৃশু দেখিতে পাই, তাহাদিগকে যুরোপীয় বলিয়া চিনিতে পারা যায়। চারিত্রে মতে এবং ভাবেও এইরূপ বৈচিত্র্য এবং বিরোধ। তাহারা অহরহ পরস্পরকে লঙ্ঘন করিতেছে, আঘাত করিতেছে, সীমাবদ্ধ করিতেছে, রূপান্তরিত করিতেছে এবং পরস্পরের মধ্যে অকুপ্রবিষ্ট হইতেছে। এক দিকে স্বাতন্ত্র্যের দুরন্ত তৃষ্ণা, অন্য দিকে একান্ত বাধ্যতাশক্তি ; মনুষ্যে মনুষ্যে আশ্চর্য বিশ্বাসবন্ধন, অথচ সমস্ত শৃঙ্খলমোচনপূর্বক বিশ্বের আর কাহারো প্রতি ভ্ৰক্ষেপমাত্র না করিয়া একাকী নিজের স্বেচ্ছামতে চলিবার উদ্ধত বাসনা । সমাজ যেমন বিচিত্র, মনও তেমনি বিচিত্র । আবার সাহিত্যেও সেই বৈচিত্র্য । এই সাহিত্যে মানবমনের চেষ্টা বহুধা বিভক্ত, বিষয় বিবিধ, এবং গভীরতা দূরগামিনী । সেইজন্যই সাহিত্যের বাহ আকার ও আদশ প্রাচীন সাহিত্যের ন্যায় বিশুদ্ধ সরল ও সম্পূর্ণ নহে। সাহিত্যে ও শিল্পে ভাবের পরিস্ফুটত সরলতা ও ঐক্য হইতেই রচনার সৌন্দর্য উদ্ভূত হইয়া থাকে। কিন্তু বর্তমান যুরোপে ভাব ও চিস্তার অপরিসীম বহুলতায় রচনার এই মহৎ বিশুদ্ধ সারল্য রক্ষা করা উত্তরোত্তর কঠিন হইতেছে। আধুনিক যুরোপীয় সভ্যতার প্রত্যেক অংশে প্রত্যংশেই আমরা এই বিচিত্র প্রকৃতি দেখিতে পাই । নিঃসন্দেহ ইহার অসুবিধাও আছে । ইহার কোনো একটা অংশকে পৃথক করিয়া দেখিতে গেলে, হয়তো প্রাচীন কালের তুলনায় খর্ব দেখিতে পাইব ; কিন্তু সমগ্রভাবে দেখিলে, ইহার ঐশ্বর্য আমাদের কাছে প্রতীয়মান হইবে। যুরোপীয় সভ্যতা পঞ্চদশ শতাব্দ-কাল টিকিয়া আছে এবং বরাবর অগ্রসর হইয়া চলিয়াছে। ইহা গ্রীক সভ্যতার ন্যায় তেমন দ্রুত বেগে