পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२ ।। স্বদেশ মানসিক বঁধে নির্মাণ করে কালস্রোত বন্ধ করে দিয়ে সমস্ত নিজের মনের মতো গুছিয়ে নিয়ে বসে ছিলুম। চঞ্চল পরিবর্তন ভারতবর্ষের বাহিরে সমুদ্রের মতো নিশিদিন গর্জন করত, আমরা অটল স্থিরত্বের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে গতিশীল নিখিল সংসারের অস্তিত্ব বিস্মৃত হয়ে বসে ছিলুম। এমন সময় কোন ছিদ্রপথ দিয়ে চির-অশাস্ত মানবস্রোত আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে সমস্ত ছারখার করে দিলে । পুরাতনের মধ্যে নূতন মিশিয়ে, বিশ্বাসের মধ্যে সংশয় এনে সস্তোষের মধ্যে দুরাশার অাক্ষেপ উৎক্ষিপ্ত করে দিয়ে সমস্ত বিপর্যস্ত করে দিলে ! মনে করে, অামাদের চতুর্দিকে হিমাদ্রি এবং সমুদ্রের বাধা যদি আরো দুর্গম হত তা হলে এক দল মানুষ একটি অজ্ঞাত নিভৃত বেষ্টনের মধ্যে স্থির শাস্ত ভাবে এক প্রকার সংকীর্ণ পরিপূর্ণতা লাভের অবসর পেত । পৃথিবীর সংবাদ তারা বড়ো একটা জানতে পেত না এবং ভূগোলবিবরণ সম্বন্ধে তাদের নিতান্ত অসম্পূর্ণ ধারণা থাকত ; কেবল তাদের কাব্য, তাদের সমাজতন্ত্র, তাদের ধর্মশাস্ত্র, তাদের দর্শনতত্ত্ব, অপূর্ব শোভা স্থষমা এবং সম্পূর্ণতা লাভ করতে পেত ; তারা যেন পৃথিবী-ছাড়া আর-একটি ছোটো গ্রহের মধ্যে বাস করত ; তাদের ইতিহাস, তাদের জ্ঞানবিজ্ঞান মুখসম্পদ তাদের মধ্যেই পর্যাপ্ত থাকত। সমুদ্রের এক অংশ কালক্রমে মৃত্তিকাস্তরে রুদ্ধ হয়ে যেমন একটি নিভৃত শান্তিময় সুন্দর হ্রদের স্বষ্টি হয়, সে কেবল নিস্তরঙ্গভাবে প্রভাতসন্ধ্যার বিচিত্র বর্ণচ্ছায়ায় প্রদীপ্ত হয়ে ওঠে, এবং অন্ধকার রাত্রে স্তিমিত নক্ষত্রালোকে স্তম্ভিতভাবে চিররহস্তের ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে থাকে । কালের বেগবান প্রবাহে, পরিবর্তনকোলাহলের কেন্দ্রস্থলে, প্রকৃতির সহস্ৰ শক্তির রণরঙ্গভূমির মাঝখানে সংক্ষুব্ধ হয়ে, খুব একটা শক্ত রকম শিক্ষা এবং সভ্যতা লাভ হয় সত্য বটে, কিন্তু নির্জনতা নিস্তব্ধতা গভীরতার মধ্যে অবতরণ করে যে কোনো রত্ন সঞ্চয় করা যায় না তা