পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ግ8 স্বদেশ তবে এই প্রণালী অনুসারে সকল সময়েই সমাজে সামঞ্জস্য থাকে— এক দিকে হঠাৎ হুড়ামুড়ি পড়িয়া অন্য দিক শূন্ত হইয়া যায় না। সকলেই আপন আদর্শ রক্ষা করে এবং আপন কাজ করিয়া গৌরব বোধ করে। কিন্তু কাজের একটা বেগ অাছেই । সেই বেগে সে আপনার পরিণাম ভুলিয়া যায়। কাজ তখন নিজেই লক্ষ্য হইয়া উঠে। শুদ্ধমাত্র কর্মের বেগের মুখে নিজেকে ছাড়িয়া দেওয়াতে স্থখ আছে। কর্মের ভূত কর্মী লোককে পাইয়া বসে। * শুদ্ধ তাহাই নহে। কার্যসাধনই যখন অত্যন্ত প্রাধান্ত লাভ করে তখন উপায়ের বিচার ক্রমেই চলিয়া যায়। সংসারের সহিত, উপস্থিত আবশ্বকের সহিত কর্মীকে নানা প্রকারে রফা করিয়া চলিতেই হয়। অতএব যে সমাজে কর্ম অাছে সেই সমাজেই কর্মকে সংযত রাখিবার বিধান থাকা চাই, অন্ধ কর্মই যাহাতে মনুষ্যত্বের উপর কর্তৃত্ব লাভ ন! করে এমন সতর্ক পাহারা থাকা চাই। কৰ্মীদলকে বরাবর ঠিক পথটি দেখাইবার জন্য, কর্মকোলাহলের মধ্যে বিশুদ্ধ স্বরটি বরাবর অবিচলিতভাবে ধরিয়া রাখিবার জন্য, এমন এক দলের আবশু্যক যাহারা যথাসম্ভব কর্ম ও স্বার্থ হইতে নিজেকে মুক্ত রাখিবেন। তাহারাই ব্রাহ্মণ । এই ব্রাহ্মণেরাই যথার্থ স্বাধীন। ইহারাই যথার্থ স্বাধীনতার আদর্শকে নিষ্ঠার সহিত, কাঠিন্যের সহিত সমাজে রক্ষা করেন । সমাজ ইহাদিগকে সেই অবসর, সেই সামর্থ্য, সেই সম্মান দেয়। ইহাদের এই মুক্তি, ইহা সমাজেরই মুক্তি। ইহারা যে সমাজে আপনাকে মুক্তভাবে রাখেন ক্ষুদ্র পরাধীনতায় সে সমাজের কোনো ভয় নাই, বিপদ নাই । ব্রাহ্মণ-অংশের মধ্যে সে সমাজ সর্বদা আপনার মনের, আপনার আত্মার স্বাধীনতা উপলব্ধি করিতে পারে। অামাদের দেশের বর্তমান ব্রাহ্মণগণ যদি দৃঢ়ভাবে উন্নতভাবে আলুব্ধভাবে সমাজের এই পরম ধনটি রক্ষণ করিতেন, তবে ব্রাহ্মণের অবমাননা সমাজ কখনোই ঘটিতে দিত না