পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রাহ্মণ ●: এবং এমন কথা কখনোই বিচারকের মুখ দিয়া বাহির হইতে পারিত না যে, ভদ্র ব্রাহ্মণকে পাদুকাঘাত করা তুচ্ছ ব্যাপার। বিদেশী হইলেও বিচারক মানী ব্রাহ্মণের মান আপনি বুঝিতে পারিতেন। কিন্তু যে ব্রাহ্মণ সাহেবের আপিসে নতমস্তকে চাকরি করে, যে ব্রাহ্মণ আপনার অবকাশ বিক্রয় করে, আপনার মহান অধিকারকে বিসর্জন দেয়, যে ব্রাহ্মণ বিদ্যালয়ে বিদ্যাবণিক, বিচারালয়ে বিচারব্যবসায়ী, যে ব্রাহ্মণ পয়সার পরিবর্তে আপনার ব্রাহ্মণ্যকে ধিক্‌কৃত করিয়াছে, সে আপন আদর্শ রক্ষা করিবে কী করিয়া ? সমাজ রক্ষা করিবে কী করিয়া ? শ্রদ্ধার সহিত তাহার নিকট ধর্মের বিধান লইতে যাইব কী বলিয়া ? সে তো সর্বসাধারণের সহিত সমানভাবে মিশিয়া ঘৰ্মা ভকলেবরে কড়াকড়ি-ঠেলাঠেলির কাজে ভিড়িয়া গেছে। ভক্তির দ্বারা সে ব্রাহ্মণ তো সমাজকে উর্ধের্ব আকৃষ্ট করে না, নিম্নেই লইয়া যায়। এ কথা জানি, কোনো সম্প্রদায়ের প্রত্যেক লোকই কোনো কালে আপনার ধর্মকে বিশুদ্ধভাবে রক্ষা করে না, অনেকে স্থলিত হয়। অনেকে ব্রাহ্মণ হইয়াও ক্ষত্রিয় ও বৈশ্বের ন্যায় আচরণ করিয়াছে, পুরাণে এরূপ উদাহরণ দেখা যায়। কিন্তু তবু যদি সম্প্রদায়ের মধ্যে আদর্শ সজীব থাকে, ধর্মপালনের চেষ্টা থাকে; কেহ আগে যাক, কেহ পিছাইয়া পডুক, কিন্তু সেই পথের পথিক যদি থাকে— যদি এই আদশের প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত অনেকের মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায়— তবে সেই চেষ্টার দ্বারা, সেই সাধনার দ্বারা, সেই সফলতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বারাই সমস্ত সম্প্রদায় সার্থক হইয়া থাকে । আমাদের আধুনিক ব্রাহ্মণসমাজে সেই আদর্শই নাই। সেইজন্যই ব্রাহ্মণের ছেলে ইংরাজি শিখিলেই ইংরাজি কেতা ধরে, পিতা তাহাতে অসন্তুষ্ট হন না। কেন এম. এ. পাস-করা মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞানবিং চট্টোপাধ্যায় যে বিদ্যা পাইয়াছেন তাহা ছাত্রকে ঘরে ডাকিয়া আসন হইয়া বসিয়া বিতরণ করিতে পারেন না ? সমাজকে শিক্ষাঋণে ঋণী