আমার কোন আত্মীয় একখানি ভারতবর্ষের ইতিহাস লিখিতেছেন। তাঁহার অনুরোধ পরতন্ত্র হইয়া আমি ঐ পুস্তক তাঁহার সহযোগে পাঠ করিয়া দেখিতেছি। যে দিন তাঁহার অনুবাদিত তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ পাঠ করি সেই দিন হঠাৎ আমার কণ্ঠতালু বিশুষ্ক হইতে লাগিল, শরীর পুনঃ পুনঃ লোমাঞ্চিত হইল, পুস্তক পাঠ যেন মহা ভার হইয়া পড়িল। পাঠ নিবৃত্ত করিয়া ঐ তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ অন্যরূপে পরিসমাপ্ত হইলে কি হইত, এই বিষয় ভাবিতে লাগিলাম। কিন্তু শরীরের যে ভাব উপস্থিত হইয়াছিল, তাহা ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। সুস্থ হইবার মানসে শয়ন করিলাম। নিদ্রাবস্থায় যে কত স্বপ্ন দেখিলাম, আনুপূর্ব্বিকক্রমে মনে নাই। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই, প্রত্যুষে নিদ্রাভঙ্গ হইলে দেখি, কয়েক খণ্ড কাগজ আমার শিরোদেশে রহিয়াছে। তাহার লেখা দেখিয়া কখন বোধ হয় আমার নিজের লেখাই হইবে, কখন বোধ হয়, আমার না হইতেও পারে। ফলতঃ ও বিষয়ে কিছুই স্থির করিয়া বলিবার যো নাই। নিদ্রাবস্থাতেও যে কেহ কেহ কখন জাগ্রতের ন্যায় কার্য্য করিয়াছে, তাহার অনেক উদাহরণ ইতিবৃত্তে পাওয়া যায়। আমার ওরূপ হয় না, এ সময়েও হয় নাই। কিন্তু যেমন ঘুমাইয়াও জাগা যায়, তেমনি জেগেও ঘুমান যাইতে পারে। বাহা হউক, শাস্ত্রে বলে—স্বপ্নলব্ধ ঔষধ এবং উপদেশ কদাপি অগ্রাহ্য নহে। শাস্ত্রানুবর্ত্তিকার্য্য করাই উচিত বোধে এই “স্বপ্নলব্ধ ভারত ইতিহাস” এডুকেশন গেজেটে প্রচারিত করিতে দিলাম।[১]
- ↑ এডুকেশন গেজেটে ১২৮২ সালের ৬ই কার্ত্তিক হইতে প্রতি সপ্তাহে এক অধ্যায় করিয়া প্রকাশিত হয়।