পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(১০)

বিজাতীয় ভাবেরই পরিপোষক হইয়া উঠেন। জাতীয় ভাষায় কথাবার্তা কহিতে তাহাদের প্রবৃত্তি থাকে না—জাতীয় পরিচ্ছদের সম্মানরক্ষা করিতেও তাহাদের সাহস হয় না। তাহারা আপনাদের অহঙ্কারে আপনারাই স্ফীত হইয়া, আপনাদের কার্য্যে আপনাদিগকেই গৌরবান্বিত মনে করিয়া, সংসারক্ষেত্রে বিচরণ করিয়া থাকেন। তাহাদের হিতৈষিতা থাকিতে পারে, ভূয়োদর্শন থাকিতে পারে, কার্যপটুতা থাকিতে পারে, কিন্তু একমাত্র বৈষম্যবুদ্ধি বিপত্তিপূর্ণ তরঙ্গাঘাতে তৎসমুদয়ই বিজাতীয় ভাবের অতল সাগরে নিমজ্জিত হইয়া গিয়াছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় ইহাদের——এই পরমুখপ্রেক্ষী, পরানুগ্রহপ্রার্থী, শিক্ষিত পুরুষগণেরও শিক্ষার স্থল। তিনি ধুতি চাদর পরিয়া, পূর্ব্বতন লেফটেনেণ্ট গবর্নর হালিডে সাহেব, বীডন সাহেব প্রভৃতির . সহিত দেখা করিতে যাইতেন। কথিত আছে, “বীডন সাহেব বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ধুতি চাদর দেখিয়া, সময়ে সময়ে বিরক্ত হইতেন। একদা গ্রীষ্মকালে বিদ্যাসাগর মহাশয় লেটেনেণ্ট গবর্ণরের সহিত দেখা করিতে গিয়া দেখেন যে, বীডন সাহেব গ্রীষ্মতিশয্যে ঢিলে পাজামা ও পাতলা কামিজ পরিয়া রহিয়াছেন। তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়কে দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন, “এখন ইচ্ছা হয়, তোমাদের ন্যায় পরিচ্ছদ পরিধান করি।” বিদ্যাসাগর মহাশয় গম্ভীর ভাবে উত্তর করিলেন, “তাহাই কেন করুন।” উত্তর শুনিয়া লেফটেনেণ্ট গবর্ণর বলিলেন, “ওরূপ পরিচ্ছদ পরিধান করা আমাদের দেশাচারবিরুদ্ধ-দেশাচারবিরুদ্ধ কাজ কেমন করিয়া করি।” এবার বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তেজস্বিতার সহিত অপূর্ব অভিমানের আবির্ভাব হইল। স্বদেশীয় ভাবের প্রাধান্যরক্ষার জন্য তেজস্বী পুরুষ-সিংহ, লেফটেনেণ্ট গবর্ণরকে অম্লানবদনে কহিলেন, “আপনাদের বেলা দেশাচার প্রবল—আর আমাদের