পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(১৬)

পবিত্র কর্ম্মের মধ্যে পরিগণিত ছিল। তাঁহার গ্রন্থাবলী কৃতী পুত্রের ন্যায় তাঁহাকে প্রচুর অর্থ আনিয়া দিত; তিনি উহার অধিকাংশ পরপেষণে ও পরদুঃখমোচনে ব্যয় করিতেন। গরীব দুঃখীরা কেবল প্রত্যহ তাঁহার দ্বারে উপস্থিত হইয়া দান গ্রহণ করিত না। অনেকে তাঁহার নিকট মাসে মাসে আপনাদের ভরণপোষণের জন্য অর্থ পাইত। তিনি প্রাত্যহিক, মাসিক, নৈমিত্তিক দানে হৃদয়নিহিত দয়ার তৃপ্তি সাধন করিতেন। এ বিষয়ে তাহার নিকটে জাতিভেদ ছিল না, শ্রেণীভেদ ছিল না, সম্প্রদায়ভেদ ছিল না। তিনি সকলেরই স্নেহময়ী ধাত্রী, প্রতিভাজন পরিজন ও বিশ্বপ্রেমময়ী জননীর তুল্য ছিল্লেন। যেখানে উপায়হীন রোগার্ত ব্যক্তি দুরন্ত রোগের দুঃসহ যাতনায় কাতরতা প্রকাশ করিত, সেইখানেই তিনি তাহার রোগ শান্তির জন্য অগ্রসর হইতেন; যেখানে নিঃস্ব ও নিঃসম্বল লোকে গ্রাসাচ্ছাদনের অভাবে কষ্টের একশেষ ভোগ করিত, এবং এই রোগশোকদুঃখময় সংসারে শশাচনীয় দারিদ্র্যভাবে আপনাদের অনন্ত যাতনার পরিচয় দিত, সেইখানেই তিনি তাহাদের দুঃখমোচনে উদ্যত হইতেন; যেখানে অভাগিনী অনাথা শশাকের প্রতিমূর্তিস্বরূপ নির্জন পর্ণকুটীরে নীরবে বসিয়া থাকিত, এবং হৃদয়ের প্রচণ্ড হুতাশন নিবাইবার জন্যই যেন নিরন্তর নয়নসলিলে আপনার বক্ষোদেশ ভাসাইয়া দিত, সেইখানেই তিনি তাহার কষ্ট দূর করিবার জন্য যত্নের পরাকাষ্ঠা দেখাইতেন। সম্রান্ত ব্রাহ্মণ হইতে অরণ্যবিহারী অসভ্য সাওঁতাল পর্য্যন্ত সকলেই এইরূপে তাঁহার অসীম করুণায় শান্তিলাভ করিত। যে পাপপঙ্কে ডুবিয়া স্বজনভ্রষ্ট ও সমাজচ্যুত হইয়াছে, সমাজের অত্যাচারেই হউক, পরের প্রলোভনেই হউক, আত্মসংযমের অভাবেই হউক, যে সহায়শূন্য হইয়া দুস্তর দুঃখসাগরে ভাসিয়া বেড়াইতেছে, তিনি তাহার প্রতিও করুণাপ্রকাশে সঙ্কুচিত