পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(৪)

ফিরিয়া আসিতেছেন, এমন সময়ে পিতামহ তাঁহাকে কহিলেন. “আজ আমাদের একটা এঁড়ে বাছুর হইয়াছে।” বিদ্যাসাগরের জন্মগ্রহণসংবাদ এইরূপে বিজ্ঞাপিত হইয়াছিল। এইরূপ দরিদ্রতাময় সংসার—এইরূপ দরিদ্রভাবের মধ্যে তাঁহার আবির্ভাব ঘটিয়াছিল। তিনি এই চিরপবিত্র দরিদ্রভাব কখনও বিস্মৃত হয়েন নাই। তাঁহার জীবন দারিদ্র্যসহচর ব্রহ্মচারীর ন্যায় পরার্থপরতাময় ছিল। তিনি প্রভূত অর্থের অধিকারী হইয়া ও দরিদ্রভাবে যে কঠোর ব্রতপালন করিয়া গিয়াছেন, সেই ব্রতচর্য্যাই তাঁহাকে অলোকসামান্য মহাপুরুষের মহিমান্বিত সিংহাসনে স্থাপিত করিয়াছে। তিনি দরিদ্রের জন্য দরিদ্রের গৃহে আবির্ভূত হইয়াছিলেন, চিরজীবন দরিদ্রভাবে দরিদ্রপালন করিয়াই অনন্তপদে বিলীন হইয়াছেন। দরিদ্রের পর্ণ কুটীরে যে পবিত্র বহ্নিশিখার উদ্ভব হইয়াছিল, তাহার প্রখরদীপ্তি বিশ্বজয়ী রাজাধিরাজকেও হীনপ্রভ করিয়াছে।

 বিদ্যাসাগর ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। পৃথিবীতে যে সকল মহাপুরুষ মহৎ কার্য্যে প্রসিদ্ধিলাভ করিয়াছেন, বিদ্যাসাগর তাঁহাদের অপেক্ষাও মহত্তর। তিনি প্রতিভাশালী পণ্ডিত অপেক্ষা মহত্তর, যে হেতু, তিনি প্রতিভার সহিত অসামান্য তেজস্বিতার পরিচয় দিয়াছেন। তিনি তেজস্বী মহাপুরুষ অপেক্ষা মহত্তর, যে হেতু, তিনি তেজস্বিতার সহিত স্বার্থত্যাগের পরাকাষ্ঠা দেখাইয়াছেন। তিনি দানশীল ব্যক্তিগণ অপেক্ষা মহত্তর, যে হেতু, তিনি দানশালতাপ্রকাশের সহিত বিষয়বাসনা এবং আত্মগৌরবঘোষণার ইচ্ছা সংযত রাখিয়া। ছেন। তাঁহাকে অনেক ভার সহিয়া, অনেক বাধা অতিক্রম করিয়া, অনেক কষ্টভোগ করিয়া, বিদ্যাভ্যাস করিতে হইয়াছিল। ইহাতে তিনি একদিনের জন্যও অবসন্ন হয়েন নাই। যখন তিনি লেখাপড়া শিখিবার জন্য কলিকাতায় উপনীত হয়েন, তপন তাঁহার বয়স আট