পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৬ "এখনও হয় নি! এ ষ্টীমারে তা হ’লে দেখছি তোর যাওয়াই হবে না । আজকালকার ছেলেদের যে কি রকম পাথুরে চাল হয়েছে,—তারা থাকবেন টিট হ’য়ে ব’গে—আর কাজগুলো যেন আপনি এসে ধরা দেবে! এমন গল্পংগচ্ছ কেন, বাপারখানা কি বল দেখি ?” “টাকা কম প’ড়ে গেল ।” “টাকা কম পড়ে গেল । যত কিছু খরচ হ’তে পারে হিসাব ধ’রে তার উপর আমি যে একশ’ টাকা বেশী দিয়ে দিলুম। কত টাকা কম পড়েছে ?” “আড়াইশ ।” “আড়াইশ ? সৰ্ব্বনাশ ! অত টকা কি ক’রলে তুমি ” শরৎকে নীরব দেখিয়া লজ্জিত মনে করিয়া বলিলেন—“থাকু আর বলতে হবে না—বুঝেছি ব্যাপারখানা কি ! ধিমিতি লোকে বেড়ে চোমরা ক’রে ধরেছে আপনাকে আর সমিলাতে পার নি, হাজার হোকু ইংরেজ বাচ্ছরি খোসামোদ ! মনটা গোলে মোম হ'য়ে পড়ে—তখন কি আর টাকাকড়ি মনে থাকে । উপেন-দাদী এ কথাটা বড়৬ ঠিক বলেন —ইংরাজে যত দিন পায়ের জুত বুরুস না করে, তত দিন রাঙ্গা মুথের মোহ ছোটে না । সাযে কি তোকে বিলাত পাঠাতে চাই—নিজের সাধ ত মিটুল না, চিরকালই নিগার রয়ে গেলুম ”-- শরৎ একটু ইসিয়া বলিল “না মামা—” “অ|রে অfর লজ্জায় কাজ কি ? যা হয়েছে তা হয়েছে,—তবে নবাবের ভায়ে যে নস, ভবিষ্যতে এটা মনে রাখিস । সেকালে আমরা কি রকম চালে চলেছি শুনবি ? একখানা অফিসের কাপড়ে ১০টি বছর কাটিয়েছি, তার পর যদি তোমার মামীর অনুরোধের দায়ে না পড়তে হ’তো,—অীর রাজাবাহছরের দেওয়ান পদটা না পেতুম, তা হ’লে আরও কত দিন যে চাপকানটা আমার চেপে থকৃতেন, তা বলতে পারিনে ৷” কথাটা বলিয়। হামাচরণ বাবু একট চাপ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন, সম্প্রতি বৎসরখানেক মাত্র তাহার স্ত্রীবিয়োগ হইয়াছে। মামীর নামে শরতেরও চক্ষু ছলছল করিয়া উঠিল। মামীর স্নেহে সে মাতার অভাব কখনও অনুভব করে নাই । তিনি তাহাকে এতই ভাল বাসিতেন যে, মেয়েরা অনেক সময় ঈর্ষাকাতর হইয়া মাকে অমুযোগ করিত। মা হাসিয়া বলিতেন,—“তোরা আমার মেয়ে বইত নর— ও যে আমার পুত্র-সস্তান ।” আসল কথা বালক পিতৃ-মাতৃহীন বলিয়া আপনার স্নেহে তিনি তাহাকে স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী ভুলাইয়া রাখিতে চাহিতেন। তিনি যে তাহার আপনার মা নন—মাতুলানী মাত্র, শরৎ শিশুকালে তাহা জানিতই না,—বড় হইয় যখন জানিল, তখনও তিনি শরতের হৃদয়-সিংহাসনে মাতৃরূপেই অধিষ্ঠিত রছিলেন । কিছুপরে শুiমাচরণ বলিলেন—“কি এত কাপড় কিনেছিস নিয়ে আয় দেখি, কখনও ত ওরকম কাপড় পরা হয় নি,—দেখেও একবার চক্ষু সার্থক করি--- “না, আমার কাপড়ে অত খরচ হয় নি। আপনি কাপড়ের জন্তে যে টাকা দিয়েছিলেন, তার চেয়ে বরঞ্চ কম টাকাই লেগেছে।” “তবে কিসে অত খরচ ক’রে এলি ?” “এক জন বন্ধুকে ধার দিয়েছি।” এইবার তিনি সত্যসত্যই রাগিয়া গেলেন। “বন্ধুকে ধার দিয়েছ ! তোদের কি একটুও ধৰ্ম্মজ্ঞান, কাওস্তান নেই ? আজকালকার ছেলেরা কি এতদূর পাষও হৃদয়হীন ! জানিস কত কষ্ট ক’রে তোকে আমার বিলাত পাঠাতে হ’চ্ছে ? বড় মেয়েটিকে এবার ভাল ক’রে পূজার তত্ত্ব পর্য্যন্ত করা হ’লো না। বেশ বুঝেছি সেজন্যে তার কত গঞ্জনা সহ ক’রতে হবে । মেজমেয়েটি আসন্নপ্রসব,— তাকেও আনতে পারছিনে ; আনলেই ত খরচ-পত্র আছে । ছোটটির বিয়েটাও পিছিয়ে দিতে হ’চ্ছে। শুধু ত তোর প্যাসেজ-মনি নয়—বিলাত যাবামাত্র ভৰ্ত্তির খরচ প্রভৃতি কত খরচ আছে। যত দিন তুই পাশ হয়ে ফিরে না আসবি, তত দিন আমার আর মুক্তি নেই। আর তুই এর মধ্যে বন্ধুকে ধার দিয়ে নৰাবি ক’রতে গেলি !” রাগের মুখে বলিয়া ফেলিয়া শু্যামাচরণ ভাবিলেন —“অত কথা না বলিলেই হইত।” শরৎ নতমুখে রহিল। মাম যে কতদূর কষ্ট স্বীকার করিয়া তাহাকে বিলাত পাঠাইতেছেন, ঠিক সে . জ্ঞানটা এত দিন তাহার ছিল ন! ! আজি সহসা তাহার যেন অন্ধ নয়ন খুলিয়া গেল। কিছু পরে সে বলিল, "তবে মাম। আমি বিলাত যাব না—এইখানেই প্রাকৃটিস্ করি।” “অমনি রাগ হ’লে । আজকালকার ছেলেদের একটা কথা বলার ধো নেই ; আমার বাবা রাগের সময় আমাকে কত গালিগালাজই না দিতেন,~~ কিন্তু সেই বিষের মধ্যেও আমরা অমৃত উপলব্ধি করেছি। আমি ত কোন জন্মে দেবদেবী মানিনে, ঈশ্বর আছেন কি না আছেন তাও জানিনে, কখনও জানতে চাইওনি ; কিন্তু বাবার মনে জাম্বাত লাগবার