পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRe স্ত্রীকভার বেশভূষা অন্যান্ত পরিচারিকাগণের ঈর্ষার কারণ হইয়া দাড়াইল । রাজাও মাঝে মাঝে আসিয়া কস্তার নাচ দেখিয়া প্রীতিলাভ করিতেন। বয়েfবৃদ্ধি সহকারে শরীর-মনের স্কৃত্ত্বির সঙ্গে সঙ্গে তাহার নাচেরও উন্নতি দেখা গেল । তিন বৎসর বয়স হুইবার আগেই তাছাকে হরিরাম গায়িকা করিয়া তুলিল। বালিকার নিকট আসিবার সময় হরিরাম তাহার জন্ত প্রতিদিন একগাছি করিয়া ফুলের মালা লইয়া আসে । মালাটি তাহার গলে পরাইয়া, হাতে একটি বাণী তুলিয়া দেয়। শিক্ষানিপুণ বালিকা—বাণীটি দুই হাতে ধরিয়া নুপুর পর পা-দুটি একটির উপর আর একটি রাখিয়া হরিরামের মোট গলার সঙ্গে মিলাইয়া আধ আধ কোমল কণ্ঠে গান ধরে— নাচে আমার গোপালমণি দেখবি তোরা অtয়,-— তার, পীতধড়া মোহন-চুড়া—নূপুর বাজে পায় ! তার—বনমালী গলায় দোলে, ( সে যে ) রুণুঝুণু রঙ্গে চলে— তাঁর, নয়ন-কোণে চাদের আলো ঝলকিয়ে যায় ! দেখবি যদি শুামের লীলা, আয় গে৷ ছুটে বজবালা, তার হাতের বঁাশী –শোন রে আসি কি মধুর গায় ! গান আরম্ভ হইবার পর হরিরামের তুড়ির সঙ্গে সঙ্গে বালিকার নৃত্য আরম্ভ হয়—এই মনেীমোহন নৃত্য দেখিবার জন্ত রাজবাড়ীতে ছুটাছুটি পড়িয়া যায়। রাজার ইচ্ছা হইল—কন্তfর এই নৃত্য-গীতে তিনি বন্ধুবান্ধবদিগকে এক দিন পরিতৃপ্ত করেন । কিন্তু পুরুষ-মজলিসে আনীত হইয়া বালিকা এমনি নিস্তব্ধ গম্ভীর হইয়া গেল যে, পিতার শত অনুরোধেও একটি প। তাহার নড়িল না । কস্তার যে বেশ একটু জিদ আছে, সেই দিন হইতে তাহ বেশ বুঝা গেল । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ জ্যোতিৰ্ম্ময়ী যখন ৭৮ বৎসরের বালিকা তখন রাজবাড়ীতে উপযুপিরি দুই তিনটি শোচনীয় ঘটনা ঘটিল। রাজার দুই কস্তারই বিবাহ হইয়াছিল অল্প বয়সে, এক জমীদারের দুই পুত্রের সহিত । জ্যেষ্ঠা হিরন্ময়ীর ত্রয়োদশ বর্ষ বয়সে প্রসবের সময় অকালমৃত্যু ঘটিব, আর ইহার অল্প দিন পরে কিরণময়ীও ইহলোক ত্যাগ করিল। কি পীড়ায় ৰে তাহার মৃত্যু হইল—অতুলেশ্বর তাছা জানিতেও পারিলেন না । স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী সৰ শেষ হইয়া যাইবার পর তাহার নিকট এ খবর আসিল । রাণী তখন অন্তঃসত্ত্ব ছিলেন—এই অল্প সময়ের মধ্যে দুই কন্যার মৃত্যুশোক তাহার সহ হইল না, অকালপ্রসবে তিনিও ইহলোক ত্যাগ করিলেন । রাজবাড়ীর সকলেই শোকনিমগ্ন হইল, বালিকার জীবনেও একটা সুগভীর কষ্টের রেখা পড়িল, কিন্তু মৰ্ম্মাহত হইলেন অতুলেশ্বর। এই আঘাতে মহাকাল-চক্রের কক্ষবিচুত হইয়া উiস্থার জীবন যেন ভিন্ন পথে প্রধাবিত হইল। দুঃখের মধ্য দিয়া ভগবান যেন তাঁহাকে নব জন্মদানে নূতন জ্ঞানে প্রবুদ্ধ কল্পিলেন । অতুলেশ্বর স্বভাবতঃ উদার প্রকৃতি—মনে মনে বুঝিতেন স্ত্রী-শিক্ষা স্ত্রী-স্বাধীনতা দেশের পক্ষে, জাতির পক্ষে, কল্যাণজনক ! কিন্তু এ সত্য র্তাহায় মনে এমন বদ্ধমুল ভাবে বসে নাই—যে, আজন্ম সংসারের বেড়া ভাঙ্গিবার সাহস তাহার জন্মায়, আজ তিনি বুঝিলেন—স্ত্রী-শিক্ষা কেবল মাত্র কল্যাণজনক তাহ নয়—স্ত্রী-জাতির জ্ঞাননেত্র উন্মেষের উপর জাতির গতি-মুক্তি একান্ত ভাবে নির্ভর করিতেছে । তিনি প্রতিজ্ঞা করিলেন-—জ্যোতিৰ্ম্মীকে অীর ছোট বেলায় বিবাহ দিবেন না–এবং তাহাকে রীতিমভ লেখাপড়। শিখাইবেন । এই সময় প্রসাদপুরে ম্যাষ্টি ষ্ট্রেট বদল হইল । নূতন ম্যাজিষ্ট্রেট ক্লাউডেন সাহেবের পত্নী রাজায় এই শোকের সময় অন্তিরিক ভাবে সহানুভূতি দেখাইতে লাগিলেন । ক্রমশঃ উভয়ের মধ্যে বেশ একটু বন্ধুত্ব জন্মিল, তাহীর সহিত কথাবাৰ্ত্তlয় – রাজা মনের ইচ্ছ। কার্য্যে পরিণত করিতে যেন দৈবশক্তি লাভ করিলেন । র্তাহার সাহাধ্যে এবং তাহার পরামর্শে রাজান্তঃপুরে একটি বালিক-বিদ্যালয় স্থাপিত হইল। বাঙ্গলা পড়াইতে কলিকাতা হইতে দুই জন শিক্ষয়িত্রী অসিলেন, ইংরাজীর জন্ত স্থানীয় মিশনারী মেম দুই জন নিযুক্ত হইলেন । রাজবাটীর বালিকাগণ এবং প্রজাদিগের কস্তাও অনেকে এখানে শিখিতে লাগিল । ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী নিজে দুই তিন দিন বিদ্যালয়ে আসিয়া সেলাই শিথাইতেন,—পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ইহার তত্ত্বাবধান করিতেন—এবং মাসে একবার করিয়া ছাত্রীদিগের পরীক্ষা গ্রহণ করিতেন । জ্যোতিৰ্ম্মীয় মেধাশক্তি দেখিয়া তিনি বিস্মিত হইতেন । যাহা তাহাকে শেখান হইত, অতি সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সে তাহা অভ্যস্ত করিয়া লইয়া অপেক্ষাকৃত জটিল পাঠ গ্রহণের জন্ত আগ্রহ প্রকাশ করিভ ।