পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী তাহাকে কস্তার হার ভালবাসিতেন। সদাসৰ্ব্বদা নিজের বাটতে লইয়া যাইতেন । রাজা বিকালে বায়ুসেবনে গমনকালে প্রায়ই কস্তাকে সঙ্গে লইতেন । সকালে সে ঘোড়ায় চড়িতে শিথিত । অনেক সময় পিতার সহিত শীকারেও যাইত। মেয়েদের নির্ভীকতা শিক্ষা দিবার প্রয়োজন আছে,—ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী - রাজাকে ইহা বেশ করিয়া বুঝাইয়াছিলেন । একবার জ্যোতিৰ্ম্ময়ী শীকারস্থলে তাকার সাহসের আশ্চর্য্যরূপ পরিচয় দিয়াছিল। একটা শীকারী হাতা সেখানে কি কারণে কে জানে মাহুতের অবাধ্য হইয়া বেগে ছুটিয়া—সকলকে ভয়বিহ্বল করিয়া তুলিল। নাহুত যদি একেবারে বে-একৃতার হইয়া পড়ে, তবে হস্তী যে কত লোককে পদদলিত—আহত করিবে, তাহার ঠিক নাই। এই আতঙ্ক-চাঞ্চল্যের মধ্যে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী প্রশান্তভাবে বাশিধ্বনির মত মধুর অথচ উচ্চস্বরে,-- ডাকিল—“মিতিয়া –মিতিয়া” ! সে স্বরে ধাবমান হস্তীর গতিবেগ সহসা স্তম্ভিত হইয়া পড়িল--উদ্ধকর্ণ হইয়। সে দাড়াইল,—-অfবার বালিক। ডাকিল— ”আও ভাইয়া—আও মিতিয়া”- হাতী ধীরে ধীরে তখন জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর হস্তীর নিকট আসিয়া শুও তুলিয়া ধরিল ; বালিকা সেই সময় আদর করিয়া স্কন্ধবিণম্বিত শীকার-বুলি হইতে এক থও কুটি বাষ্টির করিয়৷ তাহাকে প্রদান করিল,--সে সেলাম করিয়া প্রসন্নচিত্তে তাহ গ্রহণ করিয়া শাস্ত ইষ্টয় গেল । বালিকা যে হাঁতীশালায়, ঘোড়াশালায় গিয়া জীবজন্তুর সহিত ভাব করে—ম্যাজিষ্ট্রেট-দম্পতি তাই এই প্রথম জানিলেন । সুতরাং এ ঘটনায় তাহার তেমন বিস্মিত হইলেন না, কিন্তু ভূত্যের সকলেই সবিস্ময় বলিল—“জন্মাষ্টমীর দিনে বালিকার জন্ম—তাহার দৈবশক্তি হইবে না ।” এইরূপ অনাচারের মধ্যে কক্সাকে লালিত পালিত করিতে দেখিয়া মহারাণী মনে মনে ক্ষুব্ধ হইতেন,-–কিন্তু প্রকাশ্বে কিছু বণিতেন না। রাজা মেয়েকে সঙ্গে রাখিয়া মনের মত শিক্ষা-দীক্ষা দিয়া যদি শোক ভুলিয়া থাকেন, ত তিনি কোন প্রাণে তাহাকে নিরস্ত করিবেন ? আর কত দিনই বা এ খেলা ! যত দিন কস্তার না বিবাহ হয় – সেই ক’টা দিন বই ত নয় ? লউন এই কয়েক দিন রাজা তাহার সখ মিটাইয়া !—কিন্তু মহারাণী যখন দেখিলেন বায় বৎসরের মেয়েরও বিবাহের নামগন্ধ রাজা মুখে আনেন ন , তখন তিনি ভীত হইয়া জেদ ধরিয়া বসিলেন,—“মেয়ের বর খোজ, বিবাহ দাও,— وه د سـ تخنه SశిS তাহাকে অন্তঃপুরিক কর,--আর তোমার সঙ্গে সঙ্গে রাখিও না ।” রাজা কিন্তু এবার অটল, তিনি একান্ত দৃঢ়তার সহিত বলিলেন,--ন মা, আমি আর ছোটবেলায় মেয়ের বিবাহ দেব না, আমাকে ঐ অনুরোধ ক'রো না ।” 学 মা উত্তরে প্রথমতঃ কোন কথা খুজিয়া পাইলেন ন। দুইটি কস্তার অকাল-মৃত্যুর স্মৃতি তাহাকেও নিস্তব্ধ করিয়া তুলিল ! কিছু পরে দুঃখের চিস্তা মনের মধ্যে চাপিয়া লইয়। হাসিয়া বলিলেন— “মেয়েকে স্বয়ংবর করবি না কি রে?” এইরূপ কৌতুকবাক্যে পুত্রের মন হইতে শোকস্থতি তাড়াইয়৷ দিবেন, এই তাহার অভিপ্রায় । র্তাহীদের কথা হইতেছিল অস্তঃপুরের দালানে একখানা তক্রপোষের উপর বসিয়া । স্বামীর মৃত্যুর পর হইতে মহারাণী কোমল শয্যা গ্রহণ করিতেন না । রাজা মাতার কথায় পাশের উন্মুক্ত আকাশ-খণ্ডের দিকে চাহিয়া কণ্ঠাগত সুদীর্ঘ নিশ্বাস সস্তুপণে ধীরে ধীরে ফেলিয়। উত্তরে বলিলেন, “ক্ষতি কি ? আগে ত সেই রকমই হ’তো ।”

  • সে কাল নেই রে—কতবার সে কথা বোঝাব তোকে ? যা যায়, তা কি আর ফেরে অতুল !” অনিচ্ছাসত্ত্বেও মহারাণীর মুখ হইতে এই কথাই বাহির হইয়া পড়িল-- সঙ্গে সঙ্গে নয়নে জলও ভরিয়া উঠিল । এবার রাজার পাল1, মায়ের অশ্রজল নিবারণ উদ্দেশে তিনি কৌতুকচ্ছলে বলিলেন,—

"কেন মা, কালচক্র ঘুরে ফিরে ত সেই একই পথে আসে,—এ কাণকে সে কাণ ক’রে তুলুব অ1মরা, সে জন্য ভাবনা কি ! সেই চেষ্টাতেই ত আমি আছি--সেটা কি বুঝছ না মা ?” "বুঝছি ব'লেই ত ভয় পাই । অসাধ্যসাধন করতে গিয়ে কি-একটা অদ্ভুত কাও ক'রে বসবি ! তা বাছা বিয়ে এখন নাই দিলি-পাত্র দেখে রাখতে ক্ষতি কি ?” "বড় না হ’লে যখন বিয়ে দেবই না, তখন পাত্র দেখে লাভও ত নেই । বরঞ্চ ক্ষতি এই—পরে আরও ভাল পাত্র যদি পাওয়া যায়, তখন তাকে গ্রহণ করবার আর উপায় থাকবে না ।” এই সময় সঙ্গস জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর সময়োচিত আবিভাবে সে কথা বন্ধ হইয়া গেল । সে দিন ম্যাজিষ্ট্রেটের বাড়ী তাহদের নিমন্ত্রণ ছিল । বালিকা সে জন্ত প্রস্তুত হইয়া পিতাকে ডাকিতে আসিয়াছিল । কিন্তু নিমন্ত্রণে যাইবে বলিয়৷ সজাড়ম্বর