পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“কিন্তু সকলের মনের ভাব এই রকম না হ’লে ত কোন কাজ হয় না।" বলিল কুনীবালা ; – উত্তরস্বরূপ পণ্ডিতমহাশয় বলিলেন—“মনের ভাবের অভাব বশতই ষে লোক নিরুদ্যম—আমার তা মনে হয় না । গভরমেণ্টের অসন্তুষ্টি বলে ত একটা জিনিষ আছে!” বালিকা জোতিৰ্ম্ময়ী এইবার অবাকৃ ইষ্টমা গেল, —কথাটা এমনই তাহাব .নিকট ভlস্তজনক মনে হইল, হাসিয়া সে বলিল—“গভরমেন্টের ভয় ? কেন ? গভরমেণ্ট আমাদের ত শত্রু নন, আমাদের মঙ্গলাকাজী রাজা । * আমাদের পীড়ন করে যারাতারা সাধারণতঃ ছোট লোক ইংরাজ-নয়ত হীনচেতা গভরমেণ্ট কৰ্ম্মচারী। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের অপরাধের দায়ী কি গভরমেণ্ট ? গভরমেণ্টই ত আমাদের মঙ্গল-কামনায় সকরে, গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন ক’রছেন,—আর আমরা ব্যায়াম-চৰ্চা করতে গেলে তারা নিষেধ করবেন ? এ কখনষ্ট হ’তে পারে না । দেশেব লোকের মন যে কত চীন দুৰ্ব্বল হ'য়ে পড়েছে-- এইরূপ বুথ 'ভয়ই তীব পমাণ । একথা শুনলে আমাদের ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব নিশ্চয়ই হাসবেন ।” পণ্ডিত বলিলেন—“আমরা ত গভরমেণ্ট কৰ্ম্মচারীকে গভরমেণ্ট থেকে পৃথক করতে পারিনে । তারা পদে পদে তাদের কার্য্যে, তাদের ব্যবহারে জানিয়ে দেন যে, আমরা তাদের ‘ক্তত’-বঠনেরও যোগ্য নই। কৰ্ম্মচারীদের আমাদের প্রতি এই যে অসম্মান, ঘুণ, গভরমেন্ট তা থেকে কি আমাদেয় রক্ষা করতে চেষ্টা করেন ?” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী বলিল –“অবশুষ্ট করেন, নইলে শাসন-নীতির অর্থ কি ? গভরমেন্ট ত আর আমদের জন্তে এক আর ইংরাজের জন্যে অন্ত আলাদা আইন করেন নি। দণ্ডনীতি ত ইংরাজ ভারতবাসী উভয়ের পক্ষে একই ! এইখানেই ব্রিটিশ রাজ্যের উদারতা ।”

  • হ্য, বহির পাতাতে বটে, কিন্তু কাৰ্য্যতঃ ঠিক বিপরীত ।”

“আপনি আবার ব্যক্তিবিশেযের সঙ্গে গভরমেণ্টকে এক করছেন । গম্ভরমেণ্ট যে অত্যাচারীর পক্ষপাতী-—এইরূপ মনে করাই যথার্থ বিদ্রোহিতা । আমি যদি বিচারক হতুয—অীর দেখতুম, কোন ইংরাজের প্রতি কোন বাঙ্গালী অত্যাচার করছে-- তা হ’লে তাকে একতিলও কম দণ্ড দিতুম না।– এ আমি খুৰ জানি। দ্যায়ের কাছে ত স্বদেশ বিচিত্র ゞミQ বিদেশ নেই । আর এত বড ভারত্মসাম্রাজ্য যারা শাসন করছেন—এ রকম পক্ষপাতী অনীতি কি র্তারা অবলম্বন করতে পারেন ?" পণ্ডিত বলিলেন—“তুমি এখনও অৰ্ব্বাচীন, পরে বুঝবে তা পারেন কি না এবং করেন কি না ? আমরা যদি ইংরাজের সমাধিকার পেতুম— তা হ’লে ত আমাদের ক্ষুণ্ণ হবার কোন কাবণ থাকত না । দু'হাত তুলে আশীৰ্ব্বাদ করতে করতে পুল্লকস্তাকে রাজার হাতে সাপে দিয়ে বুদ্ধকালে নিশ্চিন্ত মনে বনগমন করতুম । ষ্টলবার্টবিলেব সময় কি হয়েছিল রাজাবাহুড়িরকে জিজ্ঞাস ক’রে । অণর একজন ট্যাসফিরিঙ্গি ও অস্ত্র-ধারণের অধি কারী, কিন্তু তোমার বাবার ও লাইসেন্স দিয়ে তবে ঘরে অস্ত্র রাখতে হয় । তিনি ত কনগ্রেসের এক জন নেতা, কোন দুঃখে কন্‌গ্রেসের সূচনার্তাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানবে । তুমি এইমাত্র বল্লে রাজা আমাদের মঙ্গল-চেষ্টার বিরোধী হ’তে পারেন না, কিন্তু কোনো গভরমেণ্ট কৰ্ম্মচারী দেশের লোকের কনগ্রেসে যোগ দিতে সাহস করেন না কেন ?—ন গভরমেণ্ট কনগ্রেসকে সুনজরে দেখেন না। আর রাজপুরুষের এই বুথ সন্দেহ, ভূল বিশ্বাসষ্ট আমাদের উদ্যমহীনতার প্রকৃত কারণ " জ্যোতিৰ্ম্ময়ী নিস্তব্ধভাবে সকল কথা শুনিল, এই বিষয়ের একটা দিক যেন দে আজ প্রথম দেপিতে পাইল। কিছু পরে বলিয়া উঠিল--"কোন মিথ্য বা ভুল চিরদিন কথনে স্থায়ী হয় না । এমন এক সময় নিশ্চয় আসবে, যখন রাজা প্রজী উভয়েই আপনাদের ভুল বুঝতে পারবে। প্রজা বুঝবে আমাদের নিজেদের মঙ্গল-উদ্দেশু-সাধনের জন্তে রাজ-ভয়ের বাধা কাটিয়ে উঠতে হবে, মীর রাজাও বুঝবেন, প্রজার মঙ্গলে রাজারই মঙ্গল –তাহারই শক্তি বুদ্ধি, অতএব প্রজtশক্তিকে বাধা দেওয়ার পরিবর্তে প্রশ্ৰয় দেওয়াই রাজ-কৰ্ত্তব্য ।” কুন্দবালা বলিল—“কোন ভুল কি সহজে ভাঙ্গে রাজকুমারি ? ভুল ভাঙ্গতে অনেক সময় জীবন পৰ্য্যন্ত নাশ হয় ।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর নয়নে অমুরাগ-আলোক,—স্বরে উৎসাহ-বহ্লি জলিয়া উঠিল, মুৰ্ত্তিমতী কল্যাণী যেন কহিল—“বেশ, প্রাণ দিয়েও যদি এ ভুল ভাঙ্গাতে হয়, তাতেও আনন্দ ছাড়া দুঃখ করবার কি আছে ? আমি একজন সামান্ত বাঙ্গালী মেয়ে, অদ্যায়ের দমনে এত তেজ, এত বল অনুভব করছি আমি কোথা থেকে ? আমাদের দেশের আকাশে বাতাসেন্টু