পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি ভ্রম জন্মে। অনাদির চিবুক বিশেষরূপে মাতুলবংশক্রম ঈষদ্দীর্ঘ, ওষ্ঠাধর প্রফুল্প এবং দেহগঠনও স্লাজার তরুণ বয়সের অনুরূপ ছিপছিপে পাতলা । তবে অতুলেশ্বরের মুৰ্ত্তিতে, সারল্যের সহিত র্তাহার স্বকীয় সম্পত্তি যে একটি অনুপম গাম্ভীৰ্য্যমিশ্রিত, অনাদির চেহারায় এই ভাবটিরই একান্ত অভাব । বয়োবুদ্ধি সহকারে ও যে এই স্বভাবচঞ্চল বালকটি এক দিন মাতুলের উক্ত ঐসম্পদের অধিকারী হইতে পারে, তাহীকে দেখিয়া—অস্ততঃ এখন দেখিয়া,--- সে সম্ভাবনাটুকু কাহারও মনে উদয় ভয় না। অনাদির দৈহিক সবল রূপ এক দিকে যেমন মুখের সরলীকে পরিস্ফুট করিয়া তুলিয়াছে, অন্ত দিকে তাহার ওষ্ঠাশ্রিত যৎসামান্ত গোপের রেখাপাত স্বাভাবিক বালভাবের সহিত মিলিয় তাহার প্রকৃত বন্ধঃক্রমকে ক্যtমারা-চিত্রের তীয় লোকনম্বনে ক্ষুদ্রতর —অপ্রকৃতরূপে প্রতিফলিত করিতেছে। অনাদির বয়স ২২, কিন্তু হাসি তাহাকে সমবয়স্ক ভাবিয়া তাহার প্রতি সস্নেহে দৃষ্টিপাত করিল। সাজ-সজ্জা এই রাজবংশীয় যুবকের একেবারেই সাদাসিধা। পরিধানবস্ত্রে নিপুণ ভূত্যের বহু শ্রমসাধ্য অলিম্বিত কেঁচার পত্তন বা পিরাণে গিলার কুঞ্চন নাই। সদ্যঃণেত মোট ধুতী পিরাণের উপর তাহার গায়ে একখান। আলোরান মাত্র জড়ান, তাহাতেই তাহাকে গ্ৰীকমুক্তর ন্তায় মুন্দর মানাষ্টয়াছে। বেমানান হইয়াছে কেবল তাহার পায়ে দেশী মোটা চামড়ার দেশী মুচির গড় চট জুতাজোড়া। ইহাদিগকে পায়ের আগার টানিয়া টানিস্থ অনভ্যস্তপদে সে যখন চটপট চলে, তখন হাস্তসংবরণ দুঃসাধ্য হইঃ উঠে। রাজকুমারী তাহীর পায়েব দিকে চাহিয়া হাসিয়া বলিলেন, “আমরা ভাই, নৌকাবাত্রায় চলেছি, গঙ্গাযাত্রীর অভিপ্রায় ত আমাদের নেই। তুমি যদি এই চট প’রে নৌকায় উঠতে যাও, তা হ’লে আজি আমাদেয় অতলে তলাবার সম্ভাবনা ৷” অনাদি হাসিয়! নিও ।”— বলিল, “কখনো না,—দেখে “না ভাই, আমি দেখতে চাইনে, সে সখ, আমার মোটেই নেই। আচ্ছা, তোমাকে যে সে-দিন জুই এক জোড় দিলুম-পরবে না কখনো ?” “পরব—পর্ব। অত বাহারে জুতা কি অণটপৌরে পর্বর জিনিষ ? তোমার বিয়ের দিন পরব।” “দেখ অনাদি-দা-জালিও না বলছি। বাহারে SS জুত না পরতে চাও, তা হ'লে দরোয়ানি মোট নগর পর । তোমার এ চটর চেয়ে সেও ঢ়েব ভাল ।” "দেখ ভাই রাজকুমারী-দি, আiব যা বলতে হয় বলো, আমার চটীর নিন্দে কোরো না, সেটা আমার প্রাণে সষ্টবে না, জীন ত, বিদ্যাসাগর মশায় এই চটজুতাকে পারে স্পর্শে মানুষ ক’রে দিয়ে গেছেন ৷” অনাদির বলিবার ভঙ্গিতে সকলেষ্ট হাসিল -- হাসি জুতাধারীর সৎসাহসে জুতার প্রতিও শ্রদ্ধাকৃষ্ট নয়নে চাহিল। অণুভা অনাদির কথার উত্তরে কহিল—“আর আমাদের কুমার বাহাদুর—মহতের জুতা ধারণ ক’রে মানুষ হবার চেষ্টা কবৃছেন ।” “অরি তোমরা পাঁচ জনে মিলে আমাকে বাঁদর নাচfবার চেষ্টা কর্ছ। ধষ্ঠ ধন্ত ।” অনাদির এই কথlর উত্তরে অণুভা কোন কথা বলিবার পূৰ্ব্বেই হাসি কহিল, "কুমার সম্বোধন আপনি পছন্দ করেন না দেখছি, অনাদি-দী ব’লেই কি তবে আপনাকে ডাকৃব ?” অনাদির অমান্ত্রিক ভাব-ভণিতায় প্রথম দর্শনেই তাহায় প্রতি যে আত্মীয়তাভাবের উদ্রেক হইয়াছিল, সহাস্ত স্নিগ্ধমধুর স্বরে তাহ ব্যক্ত করিয়া হাসি এই প্রশ্ন করিল। অনাদি তাহার উত্তরে প্রফুল্পভাবে কহিল, "এ অনাবশ্যক প্রশ্ন হাসিদিদি ! আমি ত আপনাকে, হাসিদি, বলতে আপনার অনুমতির অপেক্ষ রাখিনি ।” রাজকুমারী কহিলেন, “বেশ করেছ, তুমি মস্ত বীরপুরুষ । এখন শ্ৰীজুতাসহ চরণ জোড়াটি বাড়াও দেখি ! যে রকম গল্প ফেদেছ, এইখানেই দেখছি, আমাদের তুমি স্তম্ভlরুতি দান করবে ।” “তাই না কি ? তাই না কি ? আমি কি মশল্পদের দাড় করিয়ে রেখেছি না কি ? যেতে হবে কোথায় ? জলকে ? তবে আসতে অজ্ঞে হোক।” বলিতে বলিতে পদদাপে সিড়ির ঘরটা সজাগ করিয়া তুলিয়া সহসা ফিরিয়া দাড়াইয়া সে কহিল, *ওঃ, আসল কথাটা বলতে যে একেবারেই ভুলে গেছি। হরিরাম তোমার সঙ্গে একবার দেখা করতে চায়। সে গাড়ীবারীন্দায় অপেক্ষা করছে।” রাজকুমারী বলিলেন, “কিন্তু তার সঙ্গে যদি এখন দেখা করি—ত হ’লে আজ আর নৌকায় যাওয়া হবে না। এমনিতেই দেরা হয়ে পড়েছে। তুমি তাকে ব’লে এস, ভাই, যে, সন্ধ্যাবেলা দেখা করব এখন । ব’লেই কিন্তু তুমি শীপ্ৰ চ'লে এস, আমবা