পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

) లిచ్చె জ্যোতিৰ্ম্মীর কথা মনে পড়িল। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব বলিলেন –

  • আমি যখন সুলতানপুরে ছিলুম, তখন রাজ প্রাসাদে নিমন্ত্রণে গিয়ে একবার বড় লজ্জায় পড়তে হয়েছিল । ঘরের মধ্যে দুখানি রাজসিংহাসন রাখা হয়েছিল, আমাদের তাতে বসতে ব’লে রাজা রইলেন দাড়ায়ে ; আমি নিজে না ব'সে তারি একখানাতে আমার স্ত্রীর পাশে রাজাকে জোর কু’রে বসিয়ে দিলুম।—” .#

ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী হাসিয় বলিলেন,--”বেচারার চেহারাখানা যদি তখন দেখতেন রাজা 1—সে চেহারা আমি কখনও ভুলতে পারব না। আমার স্বামী থাকৃবেন দাড়িয়ে আর তিনি কি না বসবেন রাজতত্তে ! এমন বে-অদিপী তার কাছ থেকে ত প্রত্যাশা করা যায় না ; তিনি কাতরভাবে তখনি উঠে পড়লেন ।” রাজা গম্ভীরভাবে বলিলে, -“মাপ করবেন মিসেস ক্লাউডেন, অতিথিকে দাড় করিয়ে নিজে বসাটা আমরা সত্যই লে-আদপা মনে করি ।” ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী বলিলেন,--“আমরাও অতিথিকে দাড় করিমে নিজে বসিনে । তবে মর্য্যাদা দান-ছলে নিজের অমর্য্যাদ ক’রে অতিথিকে অস্বচ্ছন্দ ক’রে তুলিনে।” রাজা বলিলেন, “চৌকীতে বসতে ত আমরা অভ্যস্ত নই মিসেস ক্লাউড়েন। ও সব ফ্যাসীন আধুনিক ইংরাজী অনুকরণ। আমরা গালচের উপরই ঘরে সদ-সৰ্ব্বদা বসি । আপনার আমাদের রীতিনীতি জানেন না বলেই রাজার ব্যবহার অদ্ভূত ভেবেছেন ।” ম্যাজিষ্ট্রট বলিলেন,—আপনাদের রীতি-নীতি সব বুঝিনে ব'লে অনেক সময় ভুল ধারণা জন্মায় সন্দেহ নেই ; কিন্তু বড় বড় হরফে জাক সুস্পষ্ট স্তুতিবাদগুলোকেও যদি রীতিনীতির দোহাই দিয়ে ভুল বুঝতে পারতুম তা হ’লে খুলীই হতুম রাজা ।” রাজ৷ এবার হাসিয়া বললেন,—“আপনার হলেন আমাদের হর্তা-কর্তা, একটু আধটু স্তুতিবাদ করতে হয় বৈ কি । রাজা আছেন আমাদের বিদেশে লুকিয়ে, তার ত দর্শন পাইনে ; আপনাদেরই রাজাসনে বসিয়ে আমরা ভক্তি প্রকাশ করি । আপনারাও যেমন আমাদের মৰ্ম্মে প্রবেশ করতে পারেন না, আমরাও তেমনি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনে, আমাদের কোন ব্যবহারে আপনার সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হবেন । কাজেই কোন কোন সময় স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী অদ্ভুত ব্যাপারও যে একটা না হয়ে পড়ে, তা নর * ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী বলিলেন —“বেশ, তা হ’লে অন্ত দিকটাও দেখুন, ক্রমাগত দু'হাতে সেলাম পাওয়া অভ্যাস হয়ে গেল, এক দিন এক হাতের সেলামে কি যন ওঠে ? তখন তার অন্তরূপ অর্থ করাই আমাদের পক্ষেও স্বাভাবিক নয় কি ? প্রখম থেকে উভয় পক্ষ যদি যথাযথভাবে চলে ত আর কোনরূপ অনর্থের কারণ ঘটে না ।” • রাজা বলিলেন,—“সাহস পাই কৈ মিসেস ক্লাউডেন ? সকলেই ত আর ক্লাউডেন সাহেব বা র্তার মেম নন ; সেলাম না করলে যখন পিঠে লগুড়াঘাত পড়বে জানি, তখন পিঠ বাচিয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ ।” ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব হাসিলেন ; তাহার পত্নী বলিলেন—“আমি হ’লে কিন্তু এ বুদ্ধিকে জলাঞ্জলি দিয়ে এমন তেজে চলি-যাতে লগুড়াঘাত পিঠে পড়তে অবসর না পায় । জানেন ত রাজা, একটা তেজী বেড়াল কি কুকুর দেখলে সশস্ত্র মানুষও পিছিয়ে দাঁড়ায় ।” “কিন্তু সে শুধু মুহূৰ্ত্তের জন্য - তার পর অমার্জনীয় অপরাধের শাস্তি হাতে-হাতেই তার লাভ হয় । আপনার স্বাধীন জীব, আপনাদের মুখে তেজের কথা শোভা পায়—কিন্তু অকারণে যারা নিষ্পেষিত, রঙি মেঘ দেখলেও তাদের মনে অণগুনের আশঙ্কা জাগে ।” ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী কহিলেন,—“কিন্তু এরূপ ভয়কে বিসর্জন না দিলে ত কোন জাতির মঙ্গল নেই।” রাজা একটু হাসিয়া বলিলেন—“আপনিই তা হ’লে দেখছি জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর গুরু। এইরূপ ভাবের কথা আজকাল তার মুখে ত ক্রমাগতই শুনি ।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর নামে ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নীর মুখ হৰ্ষোজ্জল হইয়া উঠিল ; আবেগভরে বলিলেন—“What a darling girl she is রাজা কহিলেন,—"Daring too ! এর মধ্যে সে এক কাও ক’রে বসেছে,—প্রসাদপুরের ধত স্কুলে ব্যারাম-শিক্ষা প্রবর্তনের হুকুম দিয়েছে।” গুনিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট-দম্পতি একই সঙ্গে বলিয়া উঠিলেন— “ভালই ত কয়েছে।” “কিন্তু বহুপূৰ্ব্বে আমার শ্মশ্রীহীন অবস্থায় আমিও এই রকম কাজ একবার করতে গিয়েছিলুম, তাতে কমিশনার সাহেব তখন বাধা দেন।” মেমসাহেব এই কথা শুনিয়া উত্তেজিত স্বরে