পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র এইরূপ নানা বাধা-বিন্ন খণ্ডন করিয়া তেজস্বিনী নারী অবশেষে জয়লাভ করিল। অল্পদিনের মধ্যেই তাহার সমিতি বড় ছোট ছেলের দলে পূর্ণ হইয়া উঠিল। রাজবংশীয় এবং প্রজাবংশীয় যুবকদিগের সম্মিলনে রীতিমত ব্যায়াম কার্য চলিতে লাগিল । লাঠিখেলার সর্দার হইল হরিরাম, তাহার সহকারী স্বরূপ আরও কয়েকজন পাইক নিযুক্ত হইল। তাহারা ছোট খাড়া চালাইতেও শিখাইত । ইহা ছাড়া কুস্তি, দৌড়ধাপ, হাডুডুডু, ব্যাটবল প্রভৃতি নানারূপ বায়াম ক্রীড়া চলিত। প্রত্যেক খেলার জঙ্গ সপ্তাহে দুষ্ট একদিন করিয়া সময় নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইল । ইতিমধ্যে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ছোট লাঠি লষ্টয়া অন্তঃপুরেও একটি ক্লাশ খুলির দিল । ফুটবল ক্রিকেট খেলা হইত একটু দূরের মাঠে, কিন্তু লাঠি গেলা ইত্যাদির জন্ত ছেলেদের দল সপ্তাহে তিন দিন রাজবাটীর পশ্চাত্তের আম-বাগানে আসিয়া জমা হষ্টত । রাজা খেলার সময় সব দিন উপস্থিত থাকিতে পারিতেন না, কিন্তু তিনি উপস্থিত থাকিলে০ অধিনায়কতা করিত তাহার কন্যা । ছেলেরা সকলেষ্ট বয়সে তাহার বড়—বালিকার পিতার বয়সী ছ’চারজন লোক ও ইহার মধ্যে ছিলেন—যেমন পণ্ডিত মহাশয় ! কিন্তু সকলকেই জ্যোতিৰ্ম্ময়ী সেনাপতির দ্যায় পরিচালনা করিত। কোন ছেলের পদাঙ্গুলিটুকুও সীমানা রেখার বাহিরে পড়িয়া গেলে জ্যোতিৰ্ম্মল্পীর ইঙ্গিতে সে তটস্থ হইয়া যথাস্থানে দাডাইত। লাঠিখানা কেছ ঈষৎ অযথাভাবে ধরিলে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী নিজে লাঠি বাগাষ্টয়া ধরিয়া তাহীকে শিক্ষা দিত। কোন দলে কোন ছেলে দ্বন্দ্বযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী তুষ্টবে, তাহাও ঠিক করিয়া দিত জ্যোতিৰ্ম্ময়ী । কেবল হার-জিতের মীমাংসা করিতেন স্বয়ং রাজা । জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর পরিচালনায় পণ্ডিত মহাশয়ের দ্যায় শ্মশ্রীধারী ব্যক্তিও যেন লাটিমের ন্যায় ঘুরিতেন। তাহার উৎসাহ কটাক্ষে শ্ৰান্ত খেলোয়াডগণও নব বলে যেন বলীয়ান হইয়া উঠিত। সমিতির অভিধান হইতে শ্রাস্তি ক্লাস্তি কথা দুইটা একেষারেই যেন উঠিয়া গিয়াছিল। এইরূপে নামে মাত্র পণ্ডিতমহাশয় রহিলেন কৰ্ত্তা, কিন্তু আসলে কর্তৃত্ব করিত তাহার ছাত্রী । ইহাতে রাজ-আত্মীয়গণের মনের মেঘও ক্রমশঃ কাটিয়া গেল। রাজা এই ক্ষণজন্ম নারীর কার্য্যকলাপ মুগ্ধ নেত্ৰে দেখিয়া ভাবিতেন,— না জানি কোন মহাকাৰ্য্য সাধন-উদ্দেশ্যে ইহার জন্ম ?—অথবা এই অসাধারণ রমণীর জীবনের পরিণতি অবশেষে সাধারণ ভাবেই সম্পন্ন হইবে ? છ8-ગના ১৩৭ মনোদেবতার নিকট হইতে রাজা এ প্রশ্নের কোন উত্তর পাইতেন না । বাধার আর শেষ নাই । বায়াম-পরীক্ষার দিন সন্নিকট, রাজা সহসা ঘোড়া হইতে পড়িয়া জখম হইলেন। তিনি অপরাহে অশ্বারোহণে বাইতেছিলেন জীবনপুরের সীমানা পরিদর্শনে, ইহার প্রান্তে তাহার এক সরিকের জমাদারী । সরিক অপর কেত নহেন, বিজনকুমারের পিতা । তষ্ঠার পূর্বপুরুষ শঙ্কর রায় বিচিত্রাদেবীর দূরসম্পৰ্কীয় পুল্লতাত ছিলেন । রাজা কন্যাকে রাজ্যাধিকার প্রদান করিয়া তাহার ভ্রাতৃবংশকে বিষাদপুর জমাদারী দিয়া যান। কিন্তু এই দানে সন্তুষ্ট বা কৃতজ্ঞ হওয়া দূরে থাকুক, শঙ্কর রায়ের সন্তানসন্ততিগণ বংশপরম্পরায় চিরদিনই বিচিত্রা দেবীর বংশের প্রতি একটা বিদ্বেষ পোষণ করিয়া আসিতেছেন । কন্যাকে আবার কোন রাজা বিষয়বিভব প্রদান করে । রাণীর নামে রাজসিংহাসনে বসায় ? প্রধান বংশের কাহাঁকেও তিনি পোষ্যপুত্ৰ লইতে পারিতেন না কি ? তাহা না করিয়া হায়ত: প্রসাদপুর-বংশকেই তিনি ত ফাকি দিলেন । যাহার বিষয় ছিল, তিনি যে ইচ্ছা করিলে এক কাণাকড়ি ও তাহণদের নাও দিতে পারিতেন, এ কথা মনে করিয়া কেহ এ ব’শের প্রতি কথন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নাই । বরঞ্চ অপকাশ পাইলেক্ট প্রসাদপুরের রাজাকে তাহার ক্লশ দিয়াই আনন্দ অনুভব করে। উভয়পক্ষীয় প্রজার মধ্যে দাঙ্গাহাঙ্গামা ত এজন্য প্রায় লাগিম্বাক্ট আছে । অথচ প্রকাশ্লে ইহাদের মধ্যে ভদ্রতাদেীজন্তের ক্রটি নাই। কোন ক্রিয়াকৰ্ম্মে উভয়দলেই নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণ পাইয়া থাকেন এবং দেখা হইলেই উভয় পক্ষ—বিশেষতঃ বিষাদপুর-পক্ষ মিষ্ট সম্ভাষণে অায়ীয়তার উৎস ছুটাইয়া দেন । আপাতত: বিজনকুমারের পিতা সুজন রায় বিষাদপুরে আসিয়াছিলেন—অতুলেশ্বরের প্রজাগণ র্তাহার আগমনে অতিরিক্ত উংপাত-সম্ভাবনায় উৎকষ্ঠিত হইয়া উঠিয়ছিল । এ সম্বন্ধে স্বজন রায়েয় মস্তিষ্ক এত উৰ্ব্বর যে, তাহার কার্য্যপ্রণালী আগে হইতে বুঝিয়া সাবধানতা অবলম্বন করাও সহজ নহে । যাহা হউক, রাজা উভয় সীমানার মধ্যে লোকজন যথেষ্ট রাখিয়া দিয়াছিলেন এবং প্রায়ই প্রতিদিন নিজে একবার এদিকে আসিয়া খোঁজ-খবর লইয়া যাইতেন। — আজ পরিদর্শনের পয় গৃহে ফিরিতে প্রায় সন্ধ্যা