পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহারাণী রাজার কাছে, সুযোগমত এক দিন এ কথা পাড়িলেন,—রাজা কিন্তু এ প্রস্তাব একেবারেই অগ্রাহ করিয়া বসিলেন,– বলিলেন, “বাপকে বেটা ত? অমন কুচক্রী বাপের ছেলের সঙ্গে সম্বন্ধ ক’রে কখনই আমি বিয়ে দেব না ; তবে মেয়ে যদি কোন দিন আপন থেকে ওকে বিয়ে করতে যাম ত স্বতন্ত্র কথা, কিন্তু তারও কোনই সম্ভাবনা নেই ।” মহারাণী মনে মনে ভারী রাগিয়া গেলেন,— রাজার যে কি রকম মতিগতি হইয়াছে,—ভাল কথা যা বলা যায় তাই মন্দ হইয় ওঠে। তবুও হাল ছাড়িলেন না – ভাবিলেন, “বেশ, তবে তাই হবে,— মেয়ে নিজেই যাতে পছন্দ ক’রে বিয়ে করতে চায়সেই চেষ্টাই দেখা যাবে।” ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ ঘোড়া হইতে পড়িয়া রাজার যেরূপ আঘাত লাগিয়াছিল ; আসলে সেরূপ কোন ক্ষন্তি হয় নাই । জামুর অস্থি সরিয়া পড়িলেও ভাঙ্গিয়া যায় নাই । সেই জন্ত যথাশীঘ্র তিনি আরোগ্য লাভ করিলেন । ডাক্তার তাহাকে নিরাপদ দেখিয়া দু'এক দিনের মধ্যেই চলিয়া গেলেন। কাজকৰ্ম্ম ফেলিয়া হামাচরণও অধিক দিন থাকিতে পারিলেন না । কলিকাতার দলের মধ্যে শরৎকুমার একাকী মাত্র রাজচিকিৎসকরূপে তাহার সেবার জঙ্গ এখানে রছিয়া গেলেন । রাজা ঘোড়া হইতে পড়িয়া গিয়া পৰ্য্যন্ত জ্যোতিম্মী পুর্কের স্তায় নিয়মিতরূপে ছেলেদের ব্যায়াম খেলার সময় উপস্থিত থাকিতে পারে না । ছেলেরা আপনারা খেলে, ঝগড়া করে, সর্দারদের উপর সর্দারি করিয়া শিক্ষার বিশৃঙ্খলা আনয়ন করে। পণ্ডিত মহাশয়ের সাধ্য কি তাহীদের রাশ টানিয়া সোজা রাখেন ! অথচ শরৎকুমার যখন মাঝে মাঝে তাহাদের নিকট আসিয়া দাড়ান–র্তাহাকে সর্দাররূপে মানিতে তাহারা অপমান বোধ করে না । কেন না, প্রতিপদেই তাহার নায়ক-যোগ্য ভাব তাহারা অনুভব করিয়া স্বতঃই তাহার প্রতি শ্রদ্ধাझडे श्ब्रां खेरठं । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী বিকাল বেলা পিতার নিকট থাকিয়৷ প্রায়ই শরৎকুমারকে এ-সময়টা খেলিবার ছুটি দেন । শরৎ কোন দিন বা ফুটবল কোন দিন বা ক্রিকেট বিচিত্র ১৩৯ খেলায় যোগদান করেন,--আর কোন দিন বা লাঠি খেলার স্থলে উপস্থিত থাকিয়া কাহারও ভুলচুক দেখিলে সংশোধন করিয়া দেন। শরৎকুমার ইহাঁদের মধ্যে সম্প্রতি দুইটি অভিনব খেলার প্রবর্তন করিয়াছেন । গংকা, এবং ইংরাজী প্রথায় দস্তান ধরণে ঘুদঘুলি খেলা । এই স্থানে গৎক। থেলার একটু ব্যাখ্য। করিলে র্যাহারা এ খেলা দেখেন নাই, তাহীদের বুঝিতে স্ববিধা হইবে । গৎকী চামড়া মোড়া একরূপ ছোট লাঠি, ইহা থাকে খেলকের ডান হাতে, অণর বাম হতে থাকে ইয়ুপ দ্বারা আটা দুইটা ছোট শৃঙ্গ দ্বারা প্রস্তুত একটা লম্বা হরিণ-শৃঙ্গ । ইহা ঢাল স্বরূপে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। প্রয়োজনস্থলে ইহা দ্বারা বিপক্ষের প্রহার হইতে সাধারণতঃ আত্ম ক্ষণ করা হয় এবং সুবিধা মত বিপক্ষকে ইষ্ট দ্বারা খোচা দেওয়া ও চলে । এই খেলায় ডান প। সম্মুখে রাখিয়া সাম্নের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িয়া অদ্ধভঙ্গ ঠাটে দাড়াইতে হয় । রাজা বেশ ভাল হইয়া উঠিলেন । জন্মাষ্টমীর উৎসব-দিনে বালিকা পঞ্চদশ বৎসর বয়ঃক্ৰম পূর্ণ করিবে, সেই দিন তাহার ব্যাপ্লাম-সমিতির পরীক্ষা • উৎসব। কিছু দিন হইতে উদ্যোগ-আয়োজন আরম্ভ হইয়াছে। ভাদ্রমাস, কি জানি যদি বৃষ্টি আসিয়া পড়ে, মাঠের স্থানে স্থানে ছোট তাম্বু পড়িল । ফুটবল প্রভৃতি দৌড়ধাপ খেলার মুক্তমাঠ এক পাশে রাখিয়া অন্স পাশে একটা ব ৬ চালা বাধা হইল, চালার মধ্যে প্রেসিডেণ্টের মঞ্চের চারিদিকে দর্শকদিগের স্তরনিৰ্ম্মিত আসন এবং মধ্যস্থলে ঘুষাঘুষি ও লাঠি খেলা প্রভৃতির স্বনিৰ্ম্মিত স্থান । শরৎকুমার কলিকাতার অভিজ্ঞ লোক ; তাহার উপরেই প্রধানতঃ এই আয়োজনের নেতৃত্বভার পড়িয়াছে তিনিও প্রসন্নচিত্তে এ ভার গ্রহণ করিয়াছেন । রাজা কন্যার সহিত মাঝে মাঝে এখানে তত্ত্বাবধান করিতে আসেন ; শরতের কার্য্যোদ্যম, ক্ষিপ্রকারিতা এবং দূরদর্শিতা দেখিয়া পিত কল্প উভয়েই মুগ্ধ হইয়া যান। শরৎ যেন চলিয়া কাজ করিতে জানে না, সে কাজ করে ছুটিয়া । অধিকন্তু রাজা এ সম্বন্ধে এমন কোন উপদেশও ইঙ্গিত করিতে পারেন ন—-যাহ ইতিপূৰ্ব্বে শরৎ ভাবিয়া ঠিক করিয়া না লইয়াছে । ছেলের দলের আনন্দ-উৎসাহের সীমা নাই । দুৰ্গা-পূজার প্রতিমা-গঠনের সময় বেরূপ আনন্দোৎসাহে