পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র তিনি আশা করিয়াছিলেন,--বিজনের গলায় এই মালা পড়িবে। তাহা হইলেই তিনি প্রকৃতভাবে মুখী হইতেন,—কিন্তু তাছা হইল না,—তবুও নিতাস্তই যে অসন্তুষ্ট হইলেন, তাহীও নহে । জহরীর নিকট জহরের অনাদর হয় না। শরৎকুমারের বীরত্বে মনে মনে তিনি তাহণকে প্রশংসা না করিয়া থাকিতে পারিলেন না । নাতনীকে পরে ঠাট্টা করিয়া বলিলেন,—“স্বৰম্বর হলি নাকি রে ? সন্ন্যাপী বই আর কি কোন বর মিলল না-আমার নাতনীটির ” জ্যোতিৰ্ম্মীর মুখ লজ্জায় লাল ন হইয়। মলিন হইরা গেল। এই মাল্যদানের অর্থ কি লোকে এইরূপ করিবে না কি ! ইহা ত তাহার স্বপ্নের ও অগোচর। আর শরৎকুমার ? তিনি কি ভাবিয়া ছেন ? অন্তে যে যাচাই ভাবুক—শরৎকুমার কখনই এরূপ ভুল বুঝিবেন না । - তথাপি জ্যোতিৰ্ম্ময়ী মনে মনে ভারী একটা অস্বস্তিকর লজ্জা, বেদন অমুভব করিল। পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ উন্মেষণ প্রসাদপুরের বাtয়াম-উৎসব দর্শন শচীন্দের ভাগ্যেও ঘটিয়া গেল । জন্মাষ্টমীর ছুটা উপলক্ষে বিজমকুমারের অতিথিরূপে সে সমরে সে বিষাদপুরেই বাস করিতেছিল । বাড়ী ফিরিয়া আসিতে হাসি ধরিয়া পড়িল "দাদা, কি দেখে এলে গল্প কর না ? কাগজে ত পড়লুম, খুব সেখানে ঘটা হয়ে গেছে ।” হাসি অপেক্ষী শচীন বয়সে বৎসর দুই মাত্র বড় । ছেলেবেলা ৬৭ বৎসর পর্য্যন্ত একত্রে খেলাধুলা করিমাছে, এক পণ্ডিতের কাছে পড়িয়াছে ; কিন্তু যখন হইতে রীতিমত ভাবে শচীনের পাঠ্য-জীবন আরম্ভ হইয়াছে, স্কুলের, ছেলেদের সহিত ভাবটা জমিরা उँटैब्रारई, डेशन *छ शनिरक न ८रन ७क थाः নজরে দেখে ; মস্ত মুরুবিবয়ানা চালে চলিয়া—দরকারে অ-দরকারে পদে পদে জানান দেয় যে, সে তাহার শ্রদ্ধাভাজন দাদা – বয়স্ত বন্ধু নহে। হাসি কোন কথা জিজ্ঞাসা করিলেই—বিশেষতঃ যদি সে কথা তাহার স্কুল বা বন্ধু-বান্ধব সম্বন্ধীয় প্রশ্ন হয়—তাহ। হইলেই ধমক দিয়া বলিয়া উঠে,—“তোর লে খবরে কাজ কি " হাসির এমন রাগ ধরে । সেদিন পর্য্যস্ত S80 দু’জনে মায়ের কোল অধিকার করিবার জন্ত ঝগড়া করিয়াছে, রূপকথা শুনিবার জন্ত দিদিমাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছে, বাবার দুই হাত দু’জনে অধিকার করিয়া লইয়া দু’পাশে চলিতে চলিতে নিজের গল্পের স্রোতে অন্তের মুখ বন্ধের চেষ্টা করিয়াছে। বাগানে ফুল তুলিয়াছে, তারা গণিয়াছে, পরস্পরকে হারাইবার অভিপ্রায়ে মুখস্থ কবিতা মাৰুিক্তি করিস্বাছে । আর আজ হঠাৎ দাদা ধে কি করিয়া এতটা বাড়িয়া উঠিল সে তাহ বুঝিতেই পারে না । দেহায়তনে শচীন চিরদিনই শ্রেষ্ঠ, সুতরাং দাদার শরীরের বাড়টা হাসির নজরে পড়ে না,—মুখের নবীন গোপ-দাড়ির রেখাকেই সে ইহার মুলীভূত কারণ বলিয়া মনে মনে ঠাওরাইয়া লইয়া রাগ করিতে করিতেও হাসিয়া বলে—“ইস্, ভারী যে মুরুব্বি-আন, —তবুও ত এখনও শর-দার মত গোপ-দাড়ি হয় নি।” শর-দ। এ সম্বন্ধে বুঝি তাহার আদর্শ পুরুষ ! এক দিন দেখা গেল,—এষ্ট সামান্ত শ্মশ্ররেখাও শচীনের বালক-বদন হইতে অন্তৰ্দ্ধান করিয়াছে, সম্ভবতঃ হাসির—হাসির জালাতেই ইহার উপর সে বীতশ্রদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল । কিন্তু তবুও ত বোনের হাসি শচীন থামাইতে পারিল না। দাদার শ্মশ্রুহীন চেহারা দেখিয়া আরো বেশী করিয়া হাসিয়৷ হাসি বলিল,—“বেশ হয়েছে ছোড়দাদা ! দেখ ভাই একবার আয়না দিয়ে নিজের মুখখান । ঠিক আমার মতই তোমার মেয়েলি চেষ্টার হয়েছে ! বিজনদীও এইরূপ কামায়,--- না ?” শচীনের অপহ হইল, সে রাগিয় মুখ গেম্স করিয়া চলিয়া গেল । আজি মা গিয়াছেন নিমন্ত্রণে, ছোড়দাদার সান্ধ্যভোজনের সময় পরিবেশন করিতেছিল হাসি । সে যে চুপ করিয়া বসিয়া তাহাকে খাওয়াইবে-এমন প্রত্যাশা করা যায় না । কিন্তু অশ্চির্য্যের বিষয় এই যে—অ!জ হাসির প্রশ্নে শচীন ধমক দিয়া উঠিয়া তাহাকে নিরুত্তর করিল না । প্রসাদপুরের উৎসবদৃপ্তের তরঙ্গাঙ্কিত স্কৃতি, তাহার মুরুবিয়ানার বাধ ঠেলিয়া আজ উপরে উঠিছে চাহে, সে তাহ রোধ করিতে অসমর্থ। তাই প্রসন্নভাবেই কহিল— “শুধু একটি জিনিষ দেখলুম।” “কি জিনিষ ?” “প্রসাদপুরের রাজকুমারীকে ৷” হাপি আগ্রহে বলিয়া উঠিল—“দেথেছ তাকে ? আমার বড় দেখতে ইচ্ছা করে । শুনেছি, খুৰ মুলারী তিনি ?”