পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ©8 বিশ্বাস । ক্লাউডেন সাহেবের আদর্শে এ সম্বন্ধে তাহার মতামত রচিত হইয়াছে । আর নিজের দেশের লোক হষ্টয়া মুন্সেফ মহাশয় এরূপ অবিচার করিলেন । কেবল ক্ষোভ নহে—ইহার সষ্টি ত একটা লজ্জার ব্যথা, একটা নৈরাঙ্গ তাঙ্গাকে পীড়ন করিতে লাগিল । ব্যায়ামশিক্ষার কি ফল, যদি দেশের লোকের নৈতিকবল, ধৰ্ম্মবল না থাকে ? যে দেশের কাব্যগাথা, পুরাণ-ইতিহাস সত্যের, দ্যায়ের জয় ঘোযণা করিতেছে, সেই দেশের লোকের আজ এত অধোগতি ! তাহার পাণের মধ্যে একটা নিদারুণ হাঁহাকার উঠিল। দুরাশা! দুরাশী ! তাহার চারিদিকে কৰ্ম্মনাশা দুর্ভেদ্য অন্ধকার । দুস্কৃতি-তরঙ্গময় সাগর দুস্তর । সাধ্য নাই, তাহার সাধ্য নাই, তরণী রক্ষা করিতে সাধ্য নাই তাহার ! বাজা-লাইব্রেরীতে থিসফিষ্ট পত্র গুপীকৃত ইষ্টয়া পড়িয়াছিল। আজকাল জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ক্রমাগত তাহাট পড়ে, পড়িয়া এক জন জাগ্ৰত গুরু পাইবার জন্ত মৰ্ম্মান্তিক আকাঙ্ক্ষা তাহার প্রাণে জাগে । সে আজ কাতব প্রার্থনায় আকাশের দিকে চাহিয়া করযোড়ে মনে-মনে কহিল,—“ভগবান সৰ্ব্বশক্তিমান কর্ণধার, কোথায় তুমি কোথায় ? আলোক দেখাও, গুরুবেশে ধ্রুব তারারূপে উদয় হইয়া পথ দেখাইয়া লইয়ু চল তুমি- এই দুৰ্ব্বল শক্তিহীন৷ ক্ষুদ্র নারীকে ” শয়নের পূৰ্ব্বে রাত্রিকালে বাতায়নে দাড়াইয়া জ্যোতিৰ্ম্ময়ী এইরূপ প্রার্থনা করিতেছিল। নিশীথগগনের অন্ধকার মেঘ ভেদ করিয়া একটি জ্যোতিৰ্ম্ময় রেখা যেন সহসা তাহার নয়নে চমকিয়? উঠিল । বিছানায় গুইয়াও সেই আলোক দেখিতে দেখিতে বালিকার নেত্র নিমীলিত হইয়া পড়িল । কিন্তু এ কি । সহসা সে কিরণ-রেখা কোথায় লুকাইয়া পড়িল একি দারুণ অন্ধকার । কিছুই যে দেখা যায় না । কোথায় তাহারা ? আত্মীয়বন্ধু-বান্ধব, স্বজাতি-বিজাতি কোথায় সকলে ? আকাশ কোন দিকে ? পাতাল কোন পথে ? কোথা, কোথা ! আমি কোথা । এ কি গভীর, এ কি নিবিড়, এ কি হর্ভেদ্য অন্ধকার । আশে পাশে অতি নিকটে নরনারীর ঘন বেষ্টন—তাহাদের উষ্ণ নিশ্বাস-বায়ু অঙ্গে আসিয়া লাগিতেছে ; কিন্তু নয়ন বিস্ফারিত করিয়াও কাহাকেও আর দেখা যায় না। শুধু চতুৰ্দ্ধিক হইতে আৰ্ত্তনাদ উঠিতেছে, “রক্ষা কর—রক্ষা কর ।” স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী কাহার অমন কাতর স্বর ? পিতা না ডাকিতেছেন ? হায় হায় । রক্ষা করিব কি করিয়া ?--অপেক্ষা কর-অপেক্ষা কর-বল পাইয়াছি—মহাবল ! মহাশক্তি আমাতে অধিষ্ঠিত ; আমাতে অবিভূতি ! এই খড়গ নিক্ষেপ করিলাম--অন্ধকার দূর হৌকৃ—বিপদমেঘ কাটিয়া যাউক । কিন্তু হায় ! এ কি করিলাম ? কি হইল এ ? অন্ধকার ফাটিয়া গেল, বিদীর্ণ তিমিরোদগীর্ণ আলোকপুঞ্জ ঝলকে কাহার মূৰ্ত্তি ও বিভাসিত হইয়৷ উঠিল ? কে ও ধরালুষ্ঠিত ? সেই মুশাণিত অস্ত্র অন্ধকার ভেদ করিয়া কাহার বক্ষ বিদ্ধ করিয়া রহিয়াছে ; ও না শরৎকুমার ? জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর বিস্ফারিত আকুল দৃষ্টি সহসা নিমীলিত হইল । পুনরায় চক্ষু খুলিয়া বালিকা দেখিল, আর সে দৃপ্ত নাই । ভীষণ রবে মুহুমুহুঃ বজ্ৰ ধ্বনিত হইল ! সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বকোশব্যাপী উল্কাপিণ্ডরাশি উদ্ধ হইতে নিম্নে, নিম্ন হইতে উদ্ধে ছুটিঙ্গে লাগিল ! এ কোন নিষ্ঠুর অদৃশু দেবতা অগ্নি গোলক লইয়া লুফালুফি খেলিতেছে! গেল গেল স্বষ্টি বুঝি ধ্বংস হইয়া গেল । আকাশ-পাতাল জলিয়া উঠিল ; দৈত্য-দ্যনব, নরনারী জীবজন্তু পুড়িয়া ঝলসিয়া উঠিল,-—তবু তাঁহাদের মৃত্যু নাই ; সেই অনন্ত দাহ লইয়া তাহার শুধু আৰ্ত্তনাদ করিতেছে—“ত্রাফি ত্রাহি ।” জ্যোতিন্ময়ীর নেত্র দিয়া অগ্নিময় অশ্ৰুজল উথলিয়া উঠিল, সে সকরুণ স্বরে চীৎকার করিয়া কহিল “আসিতেছি আমি আসিতেছি—এই অশ্রীর অনল দিয়া আমি বজ্রানল নিৰ্ব্বাপিত করিব । অপেক্ষ কর অপেক্ষ কর— আমি আসিভেছি * কিন্তু এ কি ! তাহার যে নড়িবার ক্ষমতা নাই, —পদ নিশ্চল ! দেঙ্গ অবশ । অসীম ক্রোধে আস্ফালিত করিয়া দুই বাহু সে উদ্ধে তুলিবামাত্র তাহা পক্ষাকার ধারণ করিল,—দেহ সহসা লঘু হইয়া গেল, —জ্যোতিৰ্ম্ময়ী উড়িল,-অগ্নির মধ্য দিয়া উড়িল, উড়িতে উড়িতে জলিয়া যাইতে লাগিল—জলিতে জলিতে নিস্তেজ হতচেতন হইয়া নিমে পড়িয়া গেল । পুনরায় সচেতন হইয়া দেখিল, অভ্ৰভেদী শিখরতলে দাড়াইয়া আছে। নিম্নে মনোমোহন স্বগুণমল ভূমি, তরুরাজি, ফল-ফুলে সমাচ্ছন্ন, পুঞ্জে পুঞ্জে সুগন্ধ উত্থিত হইয়া বায়বাকাশ পূর্ণ করিতেছে, বিহঙ্গকুলের ঐক্যতানগীতিতে দিগৃদিগন্ত পুলকশিহরিত, তটিনী মুখকল্লোলে প্রবাহিত, সমুদ্র নিস্তরঙ্গ মহা স্থির ! তীরে দাডাইম আলোকরূপী