পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী তাঙ্গাদের দশ সমধিক বিষম হইয়া উঠে । অতিথিকে গালিচার উপর বসিতে বলিয়া নিজের বসিবার স্থানটা যখন তিনি গালিচাশূন্ত করিতে থাকেনতখন অতিথিও তাহার দৃষ্টান্ত অনুকরণ করে। উভয় পক্ষের ঠেলাঠেলিতে সেখানা তত্তণর প্রান্তদেশের পরিবর্বে মধাদেশে পুটুলি বাধিতে থাকে। যদি ইতিমধ্যে হাসি অসিয়া উপস্থিত হয়—তবেই তাহার হাসির সঙ্গে সঙ্গে এই সব বিশৃঙ্খলা অবিলম্বে শৃঙ্খলায় পরিণত হয়। সৌভাগ্যবশতঃ আজ তক্তার গালিচা ও কুসন রৌদ্রে দেওয়া হইয়াছিল—স্বতরাং তাছাদের আর ঠেলাঠেলির মধ্যে পড়িতে হইল না। দিদিমার ইচ্ছা ছিল—শুiমাচরণ তক্তার উপর বসেন, আর তিনি পাশে দাড়াইয়া তাঙ্গার বক্তব্য শোনেন,–কিন্তু শুামাচরণকে সেই আদেশ মানাইতে ন পারিয়া অবশেষে তাহার অনুরোধই তিনি মানিতে বাধ্য হুইলেন । দিদিমা তত্তশয় বসিলে পর শ্যামাচরণ ও বসিয়া—কন্তর বিবাহের কথা পাড়িলেন । দিদিম শুনিয়া বলিলেন, “হ্যাঁ, তোমার মেয়েটি ত বড় হ'য়ে উঠেছে, অস্বাণে বিয়ে হ'লেই ভাল হয় ৭ই কি । তবে কি জfন বাবা খামাচরণ, হাঁসির বিসেটাও সঙ্গে সঙ্গে হ’য়ে গেণে ও যেন ঠিক হতে ।” শুiমাচরণ বলিলেন, “তাতে আর বাধা কি ! শুনেছি ত বিজনের সঙ্গে সম্বশ্ব পাকা হয়ে অাছে।” দিদিমা এক বীর চারিদিকে চাহিয়া দেখিয়া মৃদুকণ্ঠে বললেন, “গুজব কথা খাম । দিনকতক বিজনকুমার এথানে যাতায়াত ক’রত— তাই কথাটা উঠেছিল, কিন্তু আজকাল ত তাঁকে দেখতেই পাইনে । তবে বোমার সেই ইচ্ছে এণন ও চার পোয় ।” হ্যামাচরণ বলিলেন, "মন্দ ইচ্ছা ত নয় ; হ’লে ত ভালই হয় ।” “হ্যা, আমার এই ইটের বরও যদি সোনার হ'য়ে যায়—তা হ’লে কি আমি মন বলব। কিন্তু সম্ভব অসম্ভব ত একটা আছে। রাজা-রাজড়াকে মনে পোষা কি মামাদের মত লোকের সাজে ! বৌমার যদি এতটুকু বুদ্ধি আছে। অমন সোনার ছেলে শরৎ, তাকে কি না অগ্রাহ করলে ! সেই পাপেই এখন এত নিগ্ৰহ ।” বলিতে বলিতে দিদিমার যেন কণ্ঠরোধ হইয়া আসিল । শ্যামাচরণ মাথা চুলকাইতে লাগিলেন,--মনে মনে কথাটার সত্যতা অনুভব করিলেন,–কিন্তু ৬ষ্ঠ-২৩ Šዓፃ নিজের ভাগনের প্রশংসাব কথায় ত আর নিজে সায় দিতে পারেন না ! দিদিমা আবার কাতর অনুনয়-ভরা কণ্ঠে কহিলেন, “এখনো কি তা হয় না বাবা ? তুমি যদি বল ত তোমার ভাগনে কি সে কথা ঠেলতে পারে ?” শুiমাচরণ বলিলেন, “আমি যত দূর বুঝতে পারছি, তা হবে না মা । সম্ভবতঃ রাজবাড়ীতেই তার বিয়ে হবে । আর সেইটেই তাঁর পক্ষে মঙ্গল,— অামি ত তাতে নারাজ হ’তে পারিনে মা !” দিদিমীর সদ প্রফুল্ল মুখকান্তি নৈরাশুমান হইয়া পড়িল । মনের কোণে তিনি শরৎকেই নাতজামাইরূপে প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন,—এই কথায় আশাহত হইয়া তাহর অন্তরতল হইতে বেদনার দীর্ঘনিশ্বাস উঠিল । কিন্তু সে নিশ্বাস-হাহাকার সবলে চাপিম ধরিয়া তিনি প্রশান্ত ভাবেই বলিলেন, “তই হোক তবে,--আশীবাদ করি শরৎ মুখী হোক । আহা পিতৃমাতৃহীন বালক,–ভগবান তাঁর মঙ্গল করুন। চিরদিনই আমি মনে জানি —এক দিন সে বড়লোক হবে,—বাছার যেমন বুদ্ধি, তেমনি তেজ ! এমন হীরার টুকরো ছেলে হাসির অদৃষ্টে হোল না । হায় রে ?” অনিচ্ছা সত্ত্বেও এইরূপ দুঃখের উক্তি দিদিমার মুখ হইতে বাছি । হষ্টয়া পড়িল । গ্রামাচরণ সাল্গুন। বাক্যে কহিলেন, "ভাবছেন কেন মা ; হাসির ভাগ্যে ভাল বরই মিলবে । সংসারে যোগ্যতর বর ও ত ঢ়ের অাছে ;–দেখবেন একটি মিলে যাবে।” “সেই আশীৰ্ব্বাদই কর বাছা ! তোমার উপরই এ ভার রইলো, একটি ভাল ঘর বর দেখে দু'হাত এক ক’রে দাও । এই কাজটি তোমায় করতেই হবে।” বলিতে বলিতে আগ্রহে নিকটে আসিয়া দুষ্ট হাতে শুiমাচরণের হাত ধবিলেন । শ্রামাচরণ ধীরে ধীরে আক্রাস্ত হাতখানি ছাড়াইয়া লইয়া যুক্তকরে শিরম্পর্শ করিয়া কহিলেন, “গুরুজনের হাত টুয়ে শপথ করতে ভয় পাই মা, কিন্তু আপনার আদেশ মাথায় রাখলুম।” শ্যামাচরণ দিদিমার নিকট হইতে বিদায় লইয়া গৃহিণীর মহলে গেলেন । গৃহিণীর তরকারী কোটা তখন শেয হইয়া গিয়াছে। তিনি বারান্দায় বঁটির উপর বসিয়া ঠাকুরকে থালায় রক্ষিত বিভিন্ন ব্যঞ্জনবিভাগ বুঝাইয়া দিতেছেন, আর অদূরে তোলা উক্সনে ঝি রািবড়া করিতেছে ; তাহীরই দিকে বারবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছেন। গুণমাচরণ দুয়ু হইতেই হুঙ্কার ছাড়িলেন, “বলি বৌঠাকরুণ— ঘরে আছেন ত?” কৃষ্ণলাল সম্পর্কে হ্যামাচরণের শ্বালকশ্রেণীভুক্ত,