পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী বুঝলে ভাই, আর একদিন এস, এ-কথা হবে এখন। বোস হাসি ।” হাসি ইতিমধ্যে উঠিয়া শুiমাচরণকে প্রণাম করিয়া দাড়াইয়া ছিল। শ্রামাচরণ বলিলেন, “বোস হাসি—তোমার বাবার শাপের পাত্ৰ ক’রো না আমাকে । আমি চলুম–আচ্ছা আর এক দিন আসিব ।” বলিয়া শু্যামাচরণ দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন, কৃষ্ণলাল নিশ্চিন্তচিত্তে হাসিকে তাহার দর্শন-তত্ত্ব বুঝাইতে লাগিলেন । কৃষ্ণলাল যতই ভাবিতেছেন, যতই শাস্বাণোচন করিতেছেন, ততই ওঙ্কারশব্দের মাহাত্ম্য র্তাহাস মনে বদ্ধমুল হইয়া বসিতেছে। ঋষিদের এই ওঙ্কারপ্রতিপাদ্য লুপ্ত জ্ঞান ঘদি তিনি জন-সমাজে পুন: প্রচার করিতে পারেন—তবেই তাছার জীবন-জন্ম সার্থক । কিন্তু তাহার এই মহন্ধুদ্দেশ্যসিদ্ধির পথে বাধা-বিঘ্ন বিস্তর। প্রথম বাধা - বিযয়কার্য্যের জঞ্জাল, কিছু না করিলেও কাগজ-পত্রগুলাও ত সই করিতে হয়। দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত বাধী—স্বয়ং তাহার গৃহিণী । কৰ্ত্ত বখনই বেশ সংযতচিত্তে তাহার প্রতিপাদ্য বিষয় সম্বন্ধে কোন একটি জটিল সমস্ত পুরণ করিতে বসেন—আশ্চৰ্য্য! তখনই কি গৃহিণীর মাথায় টনক নড়ে! ভূষণ-ঝঙ্কারে অবিলম্বে র্তাহার আগমনবাৰ্ত্তা ঘোষিত হইয়া উঠে, আর কৰ্ত্তার আমূল চিন্তা--বিকারগ্রস্ত, বিপৰ্য্যস্ত, বিশৃঙ্খল হইয়া পড়ে। এক দিন বড় দুঃখে তাহীকে বলিতে শুনিয়াছিলাম, “এমন কাৰ্য্য জীবনে ধদ আর কক্ষণে করি ত আমার নামই মিথ্যা।” আমি সভয়ে সঙ্কোচে জিজ্ঞাসা করিলাম—“কি কাৰ্য্য করবেন না আর মুকুয্যে-ম’শায় ? এবার কি লেখনী ছাড়বেন ?” - মুকুয্যে-মশায় রাগিয়া আগুন হইয়া উঠিলেন। র্তাহার এমন রাগ আমি জীবনে কথনও দেখি নাই.; --মুখ লাল করিয়া কহিলেন, “আরে মুখ ? তা নয় ! লেখা ছাড়লে বাচব কি নিয়ে ?” “তবে ?”— “তবে কি একটুকু বুঝিসনে রে নির্বদ্ধি, জীবনে আর কখনও দারপরিগ্রহ করব না !” উত্তরে বলিলাম, ধন্স—ধন্য ! সাধু-সাধু। এওদিনের পর একটা কথার মত কপ শোনা গেল!” কিন্তু মনের ভিতরকার সংশয় তব মিটিল না । অবস্থাস্তরে সর্বদাই ত লোকের মতান্তর ঘটিয়া SRS থাকে। এই ত সে দিন পত্নীপ্রেমগদগদচিত্ত আমীদের সদাই ভক্ত-নীতির জন্য ক’নে খুজিতে গিয়া নিজেই—যাকৃ সে কথা ! সকাল বেলাটা কৰ্ত্তী একরূপ নিরাপদ। কাজকৰ্ম্ম ফেলিয়া গিন্নি বড় একটা এ দিকে ঘেসেন না – তাই এ সময়টা তাহার দর্শনতত্ত্বের মীমাংসায় বুদ্ধিটা বেশ খেলিতে থাকে। কিন্তু এই সময়ে তিনি এক জন শ্রোতার বড় অভাব অনুভব করেন। কিছুদিন হইতে হাসি র্তাহার অভাব দূর করিয়াছে। তাহাকে বেশ একটি সমজদার সহিষ্ণু শ্রোতারূপে তিনি পাইয়াছেন। ইহার নিকট ব্যাখ্যা করিতে করিতে র্তাহার জটিল তত্ত্বস্বত্র ও সহজে উন্মুক্ত হইয়া আসে। তাই প্রাতঃকালটা এ কার্য্যে বাধা পড়িলে-—তিনি বড়ই উদভ্ৰান্ত হইয় উঠেন। আপাতত: কাগজে লিখিত ঔ-শব্দটি লেখনীর অগ্রভাগ-নিদিষ্ট করিয়া হাসিকে বলিতেছিলেন, “বুঝলে ত হাসি ?” হাসি অক্ষরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিয়াই কহিল, "কতক কতক ” "আচ্ছা, তা হ'লে গোড়া থেকে বলছি, ভাল ক’রে বোঝ মা । শাস্ত্ৰমতে পরমাত্মার হৃদয়-আকাশ হইতে উৎপন্ন অ, উ, ম্ এই বিবর্ণের সন্ধিজাত ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এই ত্রিগুণাত্মক ব্ৰহ্মবোধক ওম্ শব্দ, বেদের সনাতন বীজমন্ত্র এব” জীবা স্থার হৃদয়ে স্বতঃ বিরাজমান ও স্বতঃ প্রকাশমান । এখন বিচার ক’রে দেখ, অ উ এই শব্দ দু’টি কি ? স্বরবর্ণ, কেমন ?” “ás! (" “আণর ম ?” "ব্যঞ্জনবর্ণ।” “আচ্ছ বেশ,— ব্যঞ্জনের কি স্বরবর্ণ ছাড়া পৃথক অস্তিত্ব আছে ?” “ন, তাদের আলাদা উচ্চারণ হয় না।” “সেই জন্ত পরমাত্মা স্বর এবং জীবাত্মা ব্যঞ্জনবাচক এবং পৃথক হইয়াও পরস্পর সংযুক্ত। অন্ত ভাষায়, - বিন্দুর সমষ্টিতেই যেমন এই বিশাল পরিদৃশুমান জগৎ, সেইরূপ পরমাত্মারূপ বিশ্ব-কোষে অবস্থিত স্বজনশক্তির বশবৰ্ত্তী এই জীবাত্মা-বিন্দু মানবদেহে স্বাতন্ত্র্য লাভ করিৰামাত্র ওম্ শব্দের উচ্চারণে ভগবানের সহিত আপনার একাত্মতা প্রতিপাদম দ্বারা তাঙ্গর বগুত স্বীকার করে । বুঝলে ত হাসি ?” গসি হাসিয়া বলিগ, “মনে হ হচ্ছে এইবার বুঝেছি!”