পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী দান করিলেন –গুহিণী আহিলাদিত হইয়া বলিলেন, “দেখলে,—আমি ত বলেছিলুম, তুমি গেলেই কাৰ্য্যসিদ্ধ হবে। কথা শোন না—এই বড় দুঃখ ।” হাসি ছাড়া আর সকলেই জানিল ; বিজনকুমারের সহিত তাহার শীঘ্রই বিবাহ হইবে। কৃষ্ণলালের সৌভাগ্যের সীমা নাই। ২৪ ঘণ্টাও অতিবাহিত হয় নাই, কেবল রাত্রিটা মাত্র কাটিয়াছে অমনি প্রাতঃকালে ম্যানেজার ডিফুজ সাহেব কৃষ্ণলালের নিকট অগসিয়া উপস্থিত হইলেন । অভিপ্রায় কি ? না, তাহার দর্শনতত্ত্ব শুনিবেন, কৃষ্ণলালের বুঝি এত আনন্দ জীবনে কখনও হয় নাই। তিনি ওঙ্কারশবালিখিত কাগজখানি সাহেবের চোখের উপর খুলিয়। রাখিয়া প্রথমে ওঙ্কার-শব্দের অর্থ এবং মাহাত্ম্য ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হইলেন। সাহেব তাহার প্রতি-ব্যাখ্যায় বার বার মুগ্ধতাবাচক শব্দের ব্যবহার করিতে লাগিলেন—এবং তর্জমা করিবার অভিপ্রায়ে নোট লইতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ পরে সহসা ঘড়ি দেখিয়া ব্যস্তভাবে উঠিয়া দাড়াইয়। বলিলেন, “আজ আর সময় নাই, অল্প কাজে যেতে হবে এখনি । এমন intercsting কথা ছেড়ে যেতে ইচ্ছাও করে ন+~~কিন্তু কি করি ? আবার কাল আসিব ।” পরে পরস্পরের ধন্যবাদ বিনিময় শেষ হইয়া গেলে বলিলেন, “ব্যাঙ্কে কি টাকা রাখা হবে ? মিষ্টার রায় জানতে চেয়েছেন।” কৃষ্ণলাল বলিলেন, “অবশুই হবে, আজই হ’তে পারত, কিন্তু হেম ত এখানে এখন নেই।” হেম অসিলে ব্যাঙ্কে যে টাকা দেওয়া হইবে না, তাহা সাহেব বিলক্ষণ জানিত, জানিয়াই সকালে আসিয়াছিল। সে বলিল—“হেম না এলে কি কোন কাজ হয় না—টীকা ব্যাঙ্কে দেওয়া ত কঠিন কথা কিছু নয়। আমাকে যদি একটা চেক সই ক’রে দেন ত—* “তা দিতে পারি—দিতে পারি ; কিন্তু চেক বই যে হেমের কাছে—সে এলে চেক পাঠিয়ে দেব—- ডিফুজ বুঝিল, এ আশাটা ত্যাগ করিতে হইবে। সে বলিল, “বেশ, হেমকে দিয়েই পরে ব্যাঙ্কে চেক পাঠালে চলবে ; কিন্তু আপনি ত ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর হবেন বলেছেন—ত হ’লে এই কাগজটা যদি সই ক’রে দেন।” কাগজখানা পকেট হইতে বাহির করিয়া সে তাহাকে দিল—তিনি টেবিলের উপর wk-vs Sb-6: রাখিয়া নাম সই করিলেন,—ডিকুজ বলিল, “প’ড়ে দেখবেন না ?” কৃষ্ণলাল বলিলেন, “প’ড়ে আর দেখব কি ? তোমরা কি আর আমাকে ঠকাবে ?” সাহেবের কঠিন হৃদয়ও সহসা একটুখানি করুণা হইয়া উঠিল । এই চিত্তবিকারে মনে মনে একটু হাসির তাড়াতাড়ি কাগজখান লইয়া সে চলিয়া গেল । হেম পরে আসিয়া এই সংবাদে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িল। ইহার পর ম্যানেজার বা মুজন রায়ের টিকিও আর দেখা গেল না। পনের দিন ন। যাইতেই খবর পাওয়া গেল, স্বজন রায়ের ব্যাঙ্ক ফেল হইয়াছে। নবম পরিচ্ছেদ কৃষ্ণলাল প্রত্যহ সকালে একবার দু-চার মিনিটের জন্ত খবরের কাগজে চোখ বুলাইরা লন। আজ বেঙ্গলীখানা খুলিতেই প্রথমে নজরে পড়িল—“রায়ব্যাঙ্ক ফেল হইয়াছে।” একটা মুক্তির দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া তিনি ভাবিলেন, “ভাগ্যিস ও ব্যাঙ্কে টাকা রাখা হয় নাই।” এই সময় হাসি আসায় তিনি সে চিন্তা ভুলিয়া গেলেন । কাগজখান ফেলিয়া দিয়া হাসিকে দর্শনতত্ত্ব বুঝাইতে বসিলেন। সবে মাত্র ওঁ শব্দের প্রথম গ্রস্থির সহিত মধ্যগ্রস্থির যোগাযোগ ব্যাখ্যা আরম্ভ করিয়াছেন,—ভূত্য আসিয়া খবর দিল—“রায়-মশাস্ত্ৰ এসেছেন ।” বলিতে বলিতে সে ভূপতিত খবরের কাগজখান কুড়াইয়া ভাজ করিতে প্রবৃত্ত হইল। কর্তা জিজ্ঞাসা করিলেন, “রায় মশায় । রায় মশার কে ? কোন রায় মশায় ?” ভূত্য কোনও উত্তর দিবার পূৰ্ব্বেই স্বয়ং সুজন রায় ፳፰ রূপে আবিভূত হইয় তাহার সমস্ত পুরণ করিয়া দিলেন। ভূত্য তখন কাগজখানা পাশের টেবিলে রাখিয়া নীরবে সরিয়া পড়িল । “এ কি, তুমি ভায়া ।” আনন্দ-বিস্ময় গদগদচিত্তে কৃষ্ণলাল উঠিয়া দাড়াইলেন, হাসি আগে উঠিয়া দাড়াইয়াছিল। কর-মর্থনে স্বজন রায়কে সাদৃত করিম কৃষ্ণলাল কছিলেন, “এই আমার কন্যা হাসি। প্রণাম কর ম৷ ” সুজন রায় ৰে হাসিকে দেখিবার অভিপ্রাম্বেই