পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী ২৭১ জীবনের উদ্দেশ্য নহে। তুমি দেশের কাজে জীবন দান করিয়াছ, ইহা ভুলিও না গো—ভুলিও नां * জ্যোতিৰ্ম্মী গৃহে ফিরিয়া দেখিলেন, কুন্দ উপস্থিত নাই,—যে দাসী তাহার অপেক্ষায় ছিল—সে বলিল, “কুন্দ-দিদি এসে চ'লে গেলেন,—আপুনি এলে ডাকৃতে বলেছেন।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী বলিলেন, “না, ডাকৃতে হবে. না—” দাসী কাকুইখান লইয়া তাহার চুল আঁচড়াইতে গেল। জ্যোতিৰ্ম্ময়ী তাহাকে নিরস্ত করিয়া নিজেই তাড়াতাড়ি কোনরূপে দীর্ঘ কেশদাম সংবুত করিয়া বাধিয়া লইলেন । তাহার পর যথাসাধ্য বিনাড়ম্বরে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সাজপৰ্ব্ব সমাধা করিয়া লইয়। পিতার নিকট ছুটিলেন । যাইবার সময় দাসীকে বলিয়া গেলেন, “পণ্ডিত-মহাশয়কে গিয়ে বল, আজ আর পড়ব না, --তিনি ঘরে যেতে পারেন ৷” পিতৃকক্ষে আসিয়া জ্যোতিৰ্ম্ময়ী দেথিলেন, রাজা তখনো প্রস্তুত নহেন, তিনি বেশ মগ্নভাবেই খাতার উপর কলম চালাইতেছিলেন । র্তাহীয় জন্য পিতা অপেক্ষা করিয়া নাট দেথিয়া তিনি সস্তুষ্ট হইলেন,— কোন কথা না কহিয়া ধীরপদে আসিয়া তাহার স্বন্ধের উপর হাত রাখিয়া দাড়াইলেন। রাজা তখন মুখ তুলিয়া ঘডির দিকে চকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া কহিলেন, “তাই ত—৪টে বেজে গেছে যে ! আচ্ছ তুই একটুখানি অপেক্ষ কর রাণী, আমি এখনি আসছি ।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী দেখিলেন,- টেবিলের উপর খুব দামী ফ্রেমে ঠাট কালীঘাটেয় দুই পয়সা মূল্যের একখানি কালীর পট। সেই ছবিখানি হাতে লইয়া তিনি মনোনিবেশপুৰ্ব্বক দেখিতে লাগিলেন ।-- এ কি ভীষণ মূৰ্ত্তি জগদম্ব প্রকৃতির । শিবকে পদদলিত করিয়া তিনি এখন ভয়ঙ্করা,--নিষ্ঠুরী ! কিন্তু প্রকৃতির পক্ষে এই নিষ্ঠুর ভাবেরও যে প্রয়োজন। প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার জন্যই অন্যায় দমনকারিণী প্রকৃতি এখন মুণ্ডমালিনী, ভীমা ! দেয়ালে আধুনিক কোন চিত্রকর-অঙ্কিত মাতৃমূৰ্ত্তির একখানি পট টাঙ্গান ছিল। নয়ন তুলিয়। একবার মুগ্ধ দৃষ্টিভে তিনি তাহার দিকে নিরীক্ষণ করিলেন। বিশ্বমাতার এই স্নেহ-করুণীরূপিণী ভাব কি মুন্দর –র্তাহার এই ভুবনমোহিনী মাধুরীই ত প্রয়োজনে করালী কালীরূপে রূপান্তরিত হষ্টআছে ! বালিকার জীবনের মধুরভাবও প্রয়োজনের পদতলে সম্ভবতঃ এইরূপ বিসর্জন দিতে হইবে, ●*--२७ --মাতৃরূপ হইবার সৌভাগ্য লইয়া ত সকলে জন্ম গ্রহণ করে ন৷ ” জ্যোতিৰ্ম্মীর কোমল-মধুর স্বভাবের অংশে একটা দারুণ শিহরণ উঠিল,--তিনি চক্ষু মুদ্রিত করিলেন । রাজা সেই সময় প্রস্তুত হইয়া দ্বারদেশে পদার্পণ করিয়া বলিয়া উঠিলেন, “ঐ পটখানি মা আমাকে বাধাবার জন্তে দিয়েছিলেন, বেঁধে এসেছে, তাকে পাঠাতে ভুলে গেছি।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ছবিখানি টেবিলে রাখিয়া কহিলেন, “এখন এইখানেই থাকৃ। ফিরে এসে অামি ঠাকুরমার কাছে নিজেই এখানি নিয়ে যাব।” ষোড়শ পরিচ্ছেদ পণ্ডিত মহাশয় ও কুন্দবালার গল্পও বেশ জমিয়া উঠিয়ছিল। রাজকুমারী পড়িতে না আসায় দুজনের কেহই ক্ষতি বিবেচনা করেন নাই ! ব্যায়াম-উৎসবে কুন্দ উপস্থিত না থাকায় ষোল আন উৎসবই যে শাস্ত্রীমঙ্গশয়ের পক্ষে বুথ গিয়াছে, এই কথাই তিনি পুনঃ পুনঃ বলিতেছিলেন । এই পোনরুক্তিতে অসহিষ্ণুস্বভাব কুন্দবালার যে ধৈর্য্যচু্যতি হইতেছিল না— ইহাই আশ্চর্য্য ! পণ্ডিত মহাশয় তাহার বিলম্বিত দাড়িতে হাত বুলাইতে বুলাইতে শতবারের পর আর একবার বলিলেন, “সত্যি বলছি কুন্দ, তুমি ছিলে না—আমি দুই চক্ষে অন্ধকার দেখেছি।” কুন্দ বলিল, “কিন্তু এতে আপনি দুঃখ করছেন কেন ? দুঃখ করবার কথা ত আমারি । এমন মহাসমারোহু আমি চৰ্ম্মচক্ষে দেখতে পেলাম না ! আপনি বরঞ্চ সেদিনের বিবরণ খুঁটিনাটি ক’রে বর্ণনা করুন—আমি কানে শুনেও তৃপ্তিলাভ করি।” “তা যদি বল,—এমন নূতন কিছু বলার কথা নেই,—সবই গতানুগতিক অনুবৃত্তি ; অভিনন্দন,— অভিভাষণ,— ব্যায়াম আর বাহৰ প্ৰদান,— এই চতুৰ্ব্বিধ বিধানেরই আবৰ্ত্তন বিবর্তন — তবে—” “থামলেন যে--? বলুন না ।” *একটি মাত্র আকস্মিক অপ্রত্যাশিত ঘটেছিল।” “বলুন ন! ! আগ্রহে যে দম ফেটে উঠলো ! দেখবেন, শেষে নারীবধের পাতক লাগবে আপনাকে " ঘটনা