পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وفا ہ&۔ পিতার নিকট হইতে দূরে পড়িয়াছেন– এই গানটি বেন ভাল করিয়া তাহাকে এই কথা বুঝাইয়া দিল । গানের মুরতান-ভরা প্রত্যেক শব্দটি কি তাহার প্রতি ভৎসন নহে । রাজকন্তু একরূপ মোহাচ্ছন্ন ভাবেই নতজানু হইয়া পিতার পুষ্ঠে মুখ রক্ষা করিলেন । রাজা চমকিয়া গান বন্ধ করিয়া কহিলেন, “রাণি !” সে স্বর কি সেগনন্দপূর্ণ। এই কণ্ঠ হইতেই কি মুহূৰ্ত্ত-পূৰ্ব্বে অমন বুকফাটা বিষাদবেদন ধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছিল! রাণী কোন উত্তর করিলেন না, পিতার গলা জড়াইয়া ধরিয়া চুপ করিয়া রছিলেন ; উত্তপ্ত অশ্রবিন্দুতে রাজার স্কন্ধদেশ ভিজিয়া গেল। তিনি বুঝিলেন, তাহার দুঃখের গানে বালিকা ব্যথা পাইস্বাছে। তাঙ্গকে কাছে টানিয়া লইয়া শিরশ,স্বনপুৰ্ব্বক ভুলাইবার ছলে সহস্যে বলিলেন, “কে মেরেছে রাণীকে মোর, কে কোরেছে মন, তার সঙ্গে কোমর দেধে করব গিয়ে দ্বন্দ্ব ।” রাণী তখন হাসিলেন । রাজা বলিলেন, “অনেক দিন সেতার বাজাসনি–রাণি—বাজ দেখি ” জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর সেতার-তানপুরাও ভৃত্য সেইখানে আনিয়া রাখির ছিল—রাজা সেতারটি তাহার হাতে তুলিয়া দিলেন । জ্যোতিৰ্ম্মী সেতার ধরিয়া একটু বিষঃ হাসি হাসিয়া কহিলেন, “বাবা ।”

  • কেন রাণি ?” “ও গানটি কি তুমি সম্প্রতি রচনা করেছ ?” রাজা তাহার মনের ভাব বুঝিলেন, - বুঝিয়া বলিলেন, “ন। রাণি—অনেক দিন ।”

জ্যোতিৰ্ম্মী আর কোন প্রশ্ন করিলেন না, বুঝিয়া লইলেন—এই অনেক দিনের অর্থ কি ! তখন যেন একটু মুস্থবোধ করিলেন । সেতারটার পরদগগুল ঠিক করিতে করিতে কহিলেন, “বাব], আমি তোমার পুরাণ গানের খাত থেকে একটি গান পেয়েছি—ঠিক আমার মনের মত ।” রাজা কছিলেন, “আমার কোন গানটি তোর মনের মত নয়—সেইটি বল দেখি রাণি ।” “এ গানটি বাঘt—সব-চেয়ে আমার মনে বসেছে। যেন অমারি মনের কথা তুমি প্রকাশ করেছ। একটি স্বর বসিয়ে নিয়েছি,—শুনৰে বাবা গানটি ?” রাজা তাহার পৃষ্ঠে সাদর হস্ত বুলাইয়া কহিলেন, *বেশ, গাও হে তুমি গুণী— - আমার গানটি তোমার তানে ভাল ক’রে শুনি।” স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী সেতারের পরিবর্তে তানপুরাট হাতে তুলিয়৷ লইয়। তাহাতে ঝঙ্কার দিয়া রাজকুমারী গানধরিলেন— বড় সাধ, বড় আশী, বড় অকিঞ্চন পরীতে, জননি, তোরে রত্ন-আভরণ ! জানি, দীন হীন অতি, ক্ষুদ্রবল, ক্ষুদ্র মতি, অপার অণকাজক্ষা তবু না মানে বারণ ! বাসনার বলে বলী, কেবলি আপনা ছণি অসাধ্য-সাধন-তরে প্রয়াস যতন ৷ শ্রাস্ত ক্লাস্ত প্রতিদিন, নিরাশায় অাশাক্ষীণ, তবুও দুরাশা মনে নহে সম্বরণ ! এ দুৰ্ব্বল বহু জোরে বিদূরি ভূধর-বরে তুলিবারে চাহি হীরা মাণিক রতন। মাটী তুলি ফেলি আর উঠে কাচ-শিলা ভার তাহাঙ্ক চরণে আনি করি সমপণ । মাগো, এ জীবন সারা–কাটবে কি এই ধারা ! প্রাণের বাসনা আশ শুধু কি স্বপন ? গান শেয করিয়া তানপুরাটা যখন জ্যোতিৰ্ম্মী নামাইয়া রাখিলেন, তথম তাহার নজরে পড়িল,বিছানার এক প্রান্তে শরৎ ও অনাদি আসিয়া বসিয়াছেন। রাজাও সেইদিকে চাহিয়া আলাদসহকারে বলিয়া উঠিলেন, “আরে, ডাক্তার যে ” শরৎ হাসিয়া বলিলেন, “গান শোনার লোভ সম্বরণ দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিলো—ক্ষমা করবেন।” “ক্ষমা ! আজি আমাদের গানের মজলিস যথার্থই সার্থক। কতদিন তুমি আস নি, বল দেখি ! ওঃ, কি ভাবনাটাই লাগিয়ে দিয়েছিলে হে ।” শরৎকে দেখিয়। জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর হৃদয় আনন্দে উথলিয়া উঠিল, কিন্তু মেঘগ্রস্ত পূর্ণচন্দ্রের ন্যায়—সে আনন্দ সহসা নিরানন্দের মধ্যেই ঢাকিয়া পড়িল । শরৎ যখন বলিলেন, “রাজকুমারি, আর একবার গানটি গাবেন ?” তখন রাজকুমারী কহিলেন, “বড় শ্রাস্ত মনে হচ্ছে ডাক্তার-দা, গাইতে ইচ্ছা হচ্ছে না আর ” শরৎ আর কিছু বলিলেন না। রাজা বলিলেন,-- “আজি বে তোমার মামা তোমাকে দেখতে আসছেন শরৎ । প্রতি মুহূর্বে তার অপেক্ষা করছি—এতক্ষণ ত আসা উচিত ছিল, বোধ হয় ট্রেণ লেট হয়েছে।” বিষাদকাতর মন লইয়া রাজকন্যার আর এখন অন্ত কাহারও সহিত দেখা করিতে ইচ্ছা হইল না। তিনি তাড়াতাড়ি বলিলেন, "তবে আমি এখন যাই