পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্ন না কি চলিতে চলিতে সে ঘলিল, "ভূতের সঙ্গে লড়াই করব কি, মশাই, চ’লে এস, আপনি ৷” আমি তাড়াতাড়ি তাহার কোমরের কাপড় ধরিলাম, বাধা পাইয়া মুহূৰ্ত্তকাল সে স্তম্ভিত হইয়া দাড়াইয়া রহিল, আমি তাহার কোমরের ছোরখানা টানিয়া লইলাম । আবার সে দ্রুত চলিতে চলিতে বলিল, “থাম, মশাই, একটু সবুব কর । রাস্তা ছেড়ে না, আমি ওঝা নিয়ে আসছি।” বলিতে বলিতে সে অন্তৰ্দ্ধান করিল। ت পাহাড়ের কোন দিক্ হইতে অস্ফুট মনুষ্যনাদ উঠিয়া কোন দিকে যে মিলাইয় গেল, বুঝিতে পারিলাম না । মগরা থাকিলে তাহ বলিতে পারিত ; কিন্তু সে ত চলিয়া গিয়াছে । ঐ পাহাড়স্তম্ভের পাদমূলে সত্যই কি তবে কোন গুহা আছে না কি ? আর সেখান হইতেই কি ঐ ধ্বনি উঠিল ? তখনও অন্ধকার হয় নাই। পড়ন্ত স্বৰ্য্যালোকে চারিদিক বেশ স্পষ্ট দেখা যাইতেছিল। আমি তরু-পত্ৰঢাকা সেই পাহাড়তলে আসিয়া উৎকর্ণ হইয়। দাড়াইলাম ; কিন্তু কৈ, কোন শব্দই ত শুনিতে পাওয়া যায় না । ফিরিতে গিয়া হঠাৎ গাছের শিকড়ে পা বাধিয়া গেল, পা ছাড়াইতে গিয়া হোচট খাইয় একটা পাতরের উপর বসিয়া পড়িলাম। কি আশ্চর্য্য ! পাশেই কি ঐ একটা গুহার মুখ নছে ? কে যেন পাতরখান সরাইয়া ভিতরে চুকিয়াছিল ; বাহির হইবার সময় তাড়াতাড়িতে গুহামুখ বন্ধ করিতে ভুলিয়া গিয়াছে। একটা উগ্র কৌতুহল আমাকে উদ্রিক্ত করিয়া তুলিল, আমি ঝু কিয় পড়িঃ দেখিলাম, সত্যই ইহু! একটা সুড়ঙ্গ-মুখ, মুখটা নিতান্ত ছোটও নহে ! আমি আস্তে আস্তে মাথা ঢুকাইয়। ভিতরটা দেখিতে চেষ্টা করিলাম, স্থানটা খুব অন্ধকার মনে হইল না, পাশের একটা কোন ফাক দিয়া সেখানে আলো ঢুকিতেছিল । সঙ্গে সঙ্গে ঝরণার মৃদু মৃদ্ধ শব্দ কর্ণে প্রবেশ করিল । কে জানে, এই শব্দই বা তখন গুহাগহবরে প্রতিধ্বনিত হইয়। মতুষ্য-কণ্ঠের ন্যায় প্রতীত হইয়াছিল কি না । একবার মনে হইল, ৬ষ্ঠ–২৯ ২২৫ ফিরিয়া যাই, কিন্তু কি যেন একটা অলৌকিক শক্তি পিছন হইতে আমাকে গুহামধ্যে ঠেলিয়া দিল। প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, সম্মুখের পরিসর নিতান্ত কম নহে, কিন্তু দাডাইয়া চলিপার উপায় নাই- কারণ, পাহাড় মাথায় ঠেকে। ষে পথে আলোক প্রবেশ করিতেছিল, আমি সেই দিক লক্ষ্য করিয়া হামাগুড়ি দিয়া চলিলাম। একটা বাক৷ পথে ঢুকিতেই হঠাৎ উর্দ্ধদেশ যেন ফাক হইয়া পড়িল । আমি সহজভাবে দাড়াইয়। তখন আর মাথায় কোন ঠোকর পাইলাম না। আর একটু অগ্রসর হইয়া দেখিলাম, ইহা একটা ঝরণার ধার। উৎক্ষিপ্ত জলরাশির ছিটায় আমাকে এমন আর্দ্র করিয়া তুলিল যে, আমি আর সেখানে দাড়াইতে পারিলাম না। কিন্তু ফিরিয়া পুৰ্ব্ব-বাকের পরিবর্তে ভুলক্রমে অপর একটা বাকপথে চুকিয়া পড়িলাম। সেখানকার দৃপ্ত দেখিয়া চক্ষু স্থির হইয়া গেল। পাহাড়গাত্র সত্যই মনুষ্যকঙ্কালে পরিপূর্ণ। এতক্ষণ পরে আমার সর্বাঙ্গে একটা আতঙ্ক-শিহরণ উঠিল । দুই এক পা অগ্রসর হইতে না হইতেই পদে বাধা প্রাপ্ত হইয় একটা মৃতদেহের উপর পড়িয়া গেলাম। কিন্তু ইহা কি মৃতদেহ ৪ নহে ত ; ইহার নিশ্বাসস্পর্শ যে অমুভব করিতেছি । এই ব্যক্তিই কি তখন আৰ্ত্তনাদ করিয়াছিল ? কিন্তু এ ত আষ্টে পৃষ্ঠে বাধা পডিয়া অঙ্গীন হইয়া আছে । কোমরের ছেfরাখান লইয়। তৎক্ষণাৎ তাহার বন্ধন কাটিয়া দিলাম, তাঙ্গার পর আর্দ্র উড়ানিথান নিঙড়াইয়। তাহার মুখে চোখে জল দিতে লাগিলাম। হঠাৎ সে সচেতন হইয়া উঠিয়া বসিল ; ভীতভাবে আমার দিকে চাহিয়া, ভূপতিত ছোৱাখান তুলিয়া লইয়। আমাকে মারিতে উদ্যত হইল। তাহার দুৰ্ব্বল হস্ত হইতে সহজে যদি ছোরাখনি টানিয়া লইতে না পারিতাম, তাহ হইলে এই গুছাই যে আমার কবর হইত, তাহতে অfর সন্দেহ নাই । সে আর একবার ভীত কটাক্ষে আমার দিকে চাহিল, তাহার পর সস্ত্রস্ত-পদে উঠিয়া ঝরণার ধারের একটা গাছ ধরিয়া নামিয়া পড়িল । বাচিল কি মরিল, কে জানে ? তাহার আতঙ্কবৃষ্টিতে বুঝিলাম, সে ভাবিয়াছিল, আমি তাহাকে হত্যা করিতে হাসিয়াছি । সে চলিয়া যাইবার পর আমি মুহূৰ্ত্তকাল স্তম্ভিত