পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্ন না কি ? মাতুলাপ্রয় শিমুলতলায় আছে । আমাদের বাড়ীর নিকটেই থাকে। মাতুল কাৰ্য্যবশতঃ আপাততঃ কলিকাতায় ; ভূত্যেরাও সব সময় বাড়ী থাকে নী ; মাতা তখনও রন্ধনশালায়। মনোরম দুপুরবেলা আহারের পর ঘরে আসিয়া একটু বিশ্রাম করিতেছিল, হঠাৎ কে যেন তাহার নাম ধরিয়া ডাকিল । স্বর পরিচিতের মত, কিন্তু তখন তাহার একটু তন্দ্ৰ আসিয়াছিল, ঠিক বুঝিতে পারিল না-- কাহার গলা । সে তাড়াতাড়ি উঠিয়া প্রাচীরের দ্বার খুলিয়া বাহিরে অসিবণমাত্র হঠাৎ কে একজন পিছন হইতে তাহার মুখ বাধিস্থ ফেলিয়া কোলে উঠাইয়। একেবারে বনপথে প্রবেশ করিল। তাহার পর কি হইল, সে কিছুই জানে না ; কারণ, সে অজ্ঞান হইয় পড়িয়ছিল । - আহা ! বালিকার মাত কন্সাকে এতক্ষণ ন cদখিয়া না জানি কিরূপ শোকোম্মত্ত অবস্থায় আছেন । দিদি মগরাকে কিছু বকৃশিশ দিয়া সেই রাত্রিতেই তাছার মাতার নিকট কন্যার সংবাদ পাঠাইলেন ; তিনিও ক্ষণবিলম্ব না করিয়৷ মগরায় সহিত এখানে চলিয়া আসিলেন । শোকোচ্ছাসের মতই সেই ব্যথাকাতর মিলনদৃপ্ত আমাদিগকেও কিরূপ অভিভূত ও আনন্দপীড়িত করিয়াছিল, তাই লেখনীতে প্রকাশ করিতে আমি অক্ষম—কবি হইলে হয় ত বা পারিতাম । দুঃখের বিষয়, আমি কবি নহি ; আর স্বথের বিষয় এই যে, শোকের তীব্রত কিম্বা আনন্দের উগ্রত মানুষের মনে চিরদিন সমভাবে স্থিতিলাভ করিতে পারে না। তাহা হইলে পৃথিবীর কি অবস্থা হইত ? র্তাহার প্রাণাধিক কন্যাকে সুস্থ অক্ষতভাবে চিতাগ্নি হইতে যেন ফিরিয়া পাইয়াছেন, এই আশাতীত অসম্ভব ঘটনা যখন সত্য বলিয়া মাতার মনে প্রতীতি জন্মিল, তখন তাহার আনন্দও ক্রমশঃ স্বাভাবিক ভাব ধারণ করিল এবং কন্যার অপহরণবৃত্তান্ত তিনি আমাদিগকে খুলিয়া যলিবার অবস পাইলেন। - ইহার স্বামী হরনাথ মিত্র স্বনামগঞ্জের জনৈক জমীদার ; কয়েক বৎসর বাবৎ হৃদরোগে ভুগিয়া মাস কয়েকমাত্র ইহলোক ত্যাগ করিয়াছেন। অনেক দিন . হইতেই তিনি বিষয়কৰ্ম্ম নিজে তত্ত্বাবধান করিতে পারিতেন না, কিন্তু সে জঙ্ক তাহার মনে ২২৭ কোন উদ্বেগ ছিল না। র্তাহার অর্জুসম্পৰ্কীয় প্রিয়-বন্ধু ঘনশুমে ঘোষের হস্তে এই ভtয় দিয়া তিনি খুবই নিশ্চিন্ত ছিলেন । ইহার উপর তাহার এতই বিশ্বাস ছিল যে, উইলেও ঘনশুমে বাবুকে তিনি কৰ্ম্মকর্তা করিয়া গিয়াছেন । ইছাদের দুইটি সন্তান ;–একটি পুত্র ও একটি কন্ত । বিষয়ের অধিকারী পুত্রটি সম্প্রতি বিলাতে অধ্যয়ন করিতে গিয়াছে, ৩৪ বৎসর পরে ফিরিয়া অtfসবে ; কিন্তু ক?tকেও তিনি উইলে একখানি বাড়ী ও ৫০ হাজার টাকা দিয়া গিয়াছেন ; বিবাহের সময় স্বদে-আসলে ধৌতুকস্বরূপ ইহা তাহার প্রাপ্য। দিদি ইহা শুনিয়া বলিলেন, “মেয়েকে ত মিত্র মশায় বেশ দিয়ে গেছেন ।” মিত্রাণী বলিয়া উঠিলেন, “আর যত অনর্থ ত এর জন্তই ঘটুছে ।” দিদি বলিলেন, “ঘনগুiম বাবু তার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে টাকাটা হাত কববার চেষ্টায় আছেন বুঝি? ছেলেটি কি সুপাত্র নয় ?” মিত্রাণী বলিলেন, তা নয় গে। তা নয়, তার নিজের দৃষ্টিই এই দিকে পড়েছে।” “তবে যে তুমি বললে, তোমার স্বামীর ধন্ধু! তাই আমি ভেবেছিলাম, তিনি বুড় মানুহ ।” “বুড় নয় ত কি ? নাতী-নাতনীতে ঘর ভরা। হালে পরিবার মায় গেছে, এখন আমার রত্নটি গ্রাস করবার চেষ্টায় আছেন ।” দিদি হাসিয়া বলিলেন, “সাবাস রে বুড়ে ।” মিত্রাণী বলিলেন, “তুমি ত ভাই হাসছ, কিন্তু সেই ভয়ে আমি দেশছাড়া হয়ে শিমুলতলায় দাদার অtশ্রয়ে পালিয়ে এসেছি ; কিন্তু এখানেও নিস্তার নেই। আজ তোমরা রক্ষা না করলে আমাদের যে কি অবস্থা হ’ত বল দেখি ?" আমি জদুরে নীরবে বসিয় তাহাদের কথাবার্তা শুনিতেছিলাম । মিত্রাণী কৃতজ্ঞতাপূর্ণ নেত্বে প্রথমে আমার দিকে চাহিয়া পরে দিদির পদধূলি গ্রহণ করিলেন । দিদি ব্যস্তসমস্তভাবে প্রতিনমস্কায় করিয়৷ বলিলেন, “ও কি কয় ভাই ! রক্ষণ করেছেন ভগবান, আমরা উপলক্ষমাত্র । কিন্তু তুমি কি মনে কর, ঘনশুiম বাৰু সত্যই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ?”

  • fনশ্চয়ই ! তাতে কোন সন্দেহই নেই।