পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৮ বসিয়া পড়িলাম,—তখন ধুতীর উপরেও দুই এক স্থানে রক্তের দাগ লক্ষ্য করিলাম। কাপড়খানা কাচিতে আবার জলে নামিলাম । ঐ, ঐ, আবার পদশব্দ । তাড়াতাড়ি উঠিয়৷ বেীপের মধ্যে বসিলাম। পদশব্দ ক্রমশঃ সুস্পষ্ট হইয়া উঠিল, দীর্ঘকায় দুই জন লোক বেীপের কাছাকাছি আসিয়া দঁাড়াইয়। জলের দিকে নামিল : আমি ধীরে ধীরে জালাময় রুদ্ধ-নিশ্বাস ত্যাগ করিয়৷ দেখিলাম – তাহারা ধীবর, নৌকাখানা জলে টানিয়া দাড় বাfহয় যখন তাহার। চলিয়া গেল--তখন মনে হইল, আমিও ত উহাদের সহিত যাইতে পারিতাম ; নিশ্চয়ই বলিলে উহারা আমাকে লইয়া যাইত । কিন্তু চায় ! তখন সময় চলিয়া গিয়াছে ! আবার পদ্ধশব্দ । উকি মারিয়া চাহিলাম — লালপাগড়ীর চুড়া নজরে পড়িল । আর রক্ষা নাই ! গল। শুকাইয়া কাঠ হইয়া গেল ; কিন্তু পাগড়ীধারী এদিকে আসিল না ; অন্স পথে চলিয়া গেল ; হাফ ফেলিয়া, ধীরে ধীরে উঠিয়া উজলে নমিলাম । কি তৃষ্ণা ! ধেন মুমূৰু ব্যক্তির পিপাস । জলপান না করিতে পারিলে এখনই প্রাণ বাহির হইয়। যাইবে । অঞ্জলি ভবয়া অমৃত পান করিলাম, দেহে বলসঞ্চার করিয়৷ চারিদিকে চাহিয়া দেখলাম--তখনও স্বৰ্য্যোদয় হয় নাই--পুৰ্ব্বগগন লাল হইয়া উঠিয়া— র্তাহারই উদয় অপেক্ষা করিতেছে,—এখনও নদীতীর নির্জন, সবেমাত্ৰ হই এক জন বৃদ্ধ অনতিদূরে ঘাটে নমিতেছেন ; দুই এক জন চাষ। লাঙ্গলধারী বলদ লইয়। মাঠের দিকে চলিতেছে । জমাদারবাড়ীর ঘড়িতে ঢং ঢং করিয়া ছয়ট বাজিল । মাত্র দুই ঘণ্টা আমি এই তীরে ঘোর-ফেরা করিতেছি ; মনে হইল, এই দুই ঘণ্টার মধ্যে যুগ-যুগান্তর আমার মাথার উপর দিয়া চলিয় গেছে ! কোথায় লুকাই ! কোথায় পালাই! হে ভগবান, রক্ষা কর, পথ দেখাও ; এই অসহায় বালককে আশ্রয় দাও । অামি একমনে সেই বিপদের কাওারীকে ডাকিতে লাগিলাম। আবার পদশব্দ ! উঠিবীর শক্তি হারাইলাম। নিদারুণ ঔৎস্থক্যে হৃৎপিণ্ড যেন ভাঙ্গিয়া পড়িবার উপক্রম হইল, আমি সকল শক্তি হায়াইলাম । এ কষ্টের অপেক্ষ বন্দী হওয়৷ ত ভাল ! ভগবান সে প্রার্থন গ্রাহ করিলেন। হুই জন লোক হস্ ইন করিয়া আমার নিকটেই স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী এবার অসিতে লাগিল । এক জন বলিল, “এই যে --এই যে ! দেখ দেখি, ও কে এক জন 'সে ওখানে ?” মুহূৰ্ত্তমধ্যে উভয়েই মামার পাশে মাসিয়া দাড়াইল, আমি বন্দী হইলাম । 豪 疊 豪 肇 রাজনীতিক বন্দীর যে কিরূপ অবস্থায় দিন কাটে-— তাঙ্গর বিশদ বর্ণনা নিম্প্রয়োজন। ভারতবর্ষের এক প্রান্ত হইতে অন্ত প্রান্তে ইহা এখন আলোচ্য বিষয় হইয়া দাড়াইয়াছে ! বস্তুতঃ এ জাতীয় জীবের অবস্থা করতি-মধ্যবৰ্ত্তী শঙ্খেব ন্তীয় শোচনীয় । একদিকে নির্জন কায়াবাসের মানসিক পীড়ন, অন্যদিকে স্বীকার-গৃহের শারীরিক পীড়ন । এই উভয়বিধ নৈষ্ঠুৰ্য্যই যে সূক্ষ্মাতি-সুক্ষ্ম হইতে বৃহত্তম মাহাষ্ম্যে মুসভ্য-জাতির মহন্তম কীৰ্ত্তি ঘোষণা করিতেছে, তাঙ্গতে সন্দেহমাত্র নাই । এই মহাপীড়ন সহ করিয়াও বন্দী বালকেরা যে বাচিয়া ফিরে, ইহাও কম আশ্চর্য্যের বিষয় নহে! তাহারা মহাপ্রাণ বা মহা পাযtণ ! ব্যাটারির আঘাতে হাত-পা ভাঙ্গে না ; কিন্তু হাড়ে হাডে যে ভীষণ বেদন অনুভূত হয়, তাহীতে মানুষকে পাগল করিয়া তোলে । ইহা ছাড়া আরও দুই একরূপ ভয়ঙ্কর পীড়ন আছে, তাং লেখনীমুখে প্রকাশযোগ্য নহে । কেন যে দুৰ্ব্বলপ্রকৃতির লোক এই পীড়ন-মুখে approver হইয় দাডার, তাহ সহজেই বুঝা যায়। আমি কিন্তু এতদিনে বুঝিলাম —আমি কাপুরুষ মহি । নরম কথায় আমি যতই টলমল করি না কেন, পীড়ন-কষ্টে আমি অটল ছিলাম । তবে সে কষ্ট হইতে ক্ষণিক নিস্কৃতিলাভের জন্য মিথ্যা কথা অজস্র বলিয়া যাইতাম । এ সব উপায়ে আগে হইতেই শিক্ষিত হইয়াছিলাম । পুলিসকে ধাধা দিলার জন্য স্বীকার উক্তিতে প্রায়ই অজানা-অচেনা এমন সব জমীদারপুভ্রের নামোল্লে"; করিতাম যাহাঁদের ধরা-ছোয়াও সহজ নয় এবং বিদ্রোহিত করাও সম্ভব নয় । কিন্তু আজিকালকার কালে কি যে সম্ভব, কি যে অসম্ভব, তাহা ত বুঝ যায় না । পুলিস মহাজনরা সেই সব কল্পিত সহযোগীদের সন্ধানে শূন্তে ফাদ পাতিতে ছাড়িতেন না ! একবার কিন্তু সত্য সত্যই বড় অনর্থ ঘটিয়া ছিল । শাস্তিপুরের জমাদারপুত্র শশধর আমাদের এক জন সহযোগী, এই খবরটা আমি পুলিসকে