পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি ধালকের দ্যায় কহিলেন,– “তার রাজা বাহাদুর ?” রাজা বাহাদুরের চুরুট তখন বেশ ধরিয়া উঠিয়াছে-ধূমথোর না হইয়াও মঙ্গগুলভাবে তাহাতে ছ’ চার টান দিয়া ছ’ চারবার তিনি শূন্তে ধূম উড়াইয়া দিলেন—তাহার পর সিগারেট মুখ হইতে নামাইয়া ছাইদানীতে তাহ পুন: সংস্থাপিত করিয়া রুমাল দিয়া ওষ্ঠাধর মুছিতে মুছিতে বলিলেন,— "রায় খুড়র জিবের ডগা থেকে কথাগুলা বার হ'তে না হ’তে তার মনের মংলবখানা ষে কাকাবাহান্থর বুঝে ফেলেছিলেন—তা ত বুঝতেই পাৰ্ব ছেন ? এখন ভাবুন দেখি, কাকার কি বিপদ । হয় ধনুক যায়, নয় বিয়ে ভাঙ্গে ! আপনি এ অবস্থায় পড়লে কি কবৃতেন বলুন দেখি, গাঙ্গুলি ?” রাজা হাসিয়া এই প্রশ্ন করিলেন, গাঙ্গুলি-মহাশয় গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িয়া বলিলেন,—“বলতে পারি না, রাজা বাহাদুর। মাথায় ত এখন কোন বুদ্ধিই যোগাচ্ছে না ।” রাজা বলিলেন,– “তবে শুকুন, কাকা বাহাঙ্গুরও বড় কম ফনীবাজ ছিলেন ন— ” রাজার কথা সম্পূর্ণ না হইতেই শুiমাচরণ কহিলেন,—“ত। ত বোঝাই যাচ্ছে, নইলে কি রায় মহাশয়ের এই চক্রান্তের মধ্যে তিমি টিকৃতে পারতেন ?” রাজী সহস্তে অনুমোদমবাক্যে কহিলেন,— "তা ঠিক! কাকা মহাশয় রায় পুড়কে সবিনয়ে জানালেন যে, এ স্থলে তার রায়দাদা কেবল বরকৰ্ত্তা নন, রায়-বংশেরও কর্তী ব্যক্তি ; অতএব গুরুজনের আদেশ দেবাদেশের ন্যায় তার শিরোধাৰ্য্য। কিন্তু গুপ্তভাণ্ডারে রক্ষিত লৌহ-ধন্থক সভায় আনতে একটু ত সময় লাগবে, ততক্ষণ জামাতা অন্তঃপুরে স্ত্রী-অ{চার পর্ব শেয ক’রে আন্ধন, মইলে লগ্ন ভ্ৰষ্ট হয়ে যেতে পারে।” গুণমাচন্ত্রণের মুখে এতক্ষণ পরে হাসি বাহির হইল, তিনি প্রফুল্লভাবে কছিলেন,—“হা, একেই বলে চতুরে চতুরে । প্রস্তাবে রায়-মশায় রাজী মা হ’য়ে জার কি করবেন ?” “তবে দেখছি, খুড়কে আপনি এথমে চেনেননি! তিনি এ প্রস্তাবে একেবারেই বেঁকে বসলেম । বরকে সভাস্থল হ’তে তথনি তিনি উঠিয়ে মিয়ে যেতে উদ্যত, চারিদিকে হুলস্থল পড়ে গেল, বর ধদি ক্তিতরে ভিতরে আমাদের পক্ষ না হতেন, তা পর, సీరీ হ’লে এ বিয়ে কিছুতেই ঘটতে পেত না। জামাই সভ্যস্থল হ’তে উঠে রায়-পুড়র অনুসরণ না ক’রে কাকার সঙ্গে অন্তঃপুরে চলে আসেন, এবং সেখানেই বিবাহপৰ্ব্ব শেষ হয় ।” শুীমাচরণ আনন্দের ও ঔৎসুক্যের দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন,--“আtঃ, বাচা গেল, বাচ। গেল, বিশ্নেটা তা হ’লে হ’য়ে গেল ! রায়-খুড় শুনে কি কলেন ?” “করবেন আর কি, পৈতে ছিড়ে শাপ দিলেন ।” “মুখের বিষয় ব্ৰহ্মশাপে এখন আর বঞ্জাগ্নি ছোটে না ।” “কিন্তু বাক্যাগ্নির জালাটা এ যুগেও ত কিছু কমেছে বলে মনে হয় না । বরঞ্চ অনেক সময়ে সে জালা এমনই সঙ্গীন হয়ে ওঠে যে, তখন বেল পড়লে উড়ন্ত কাককেও আমরা কারণ ব’লে মেনে নিই। হাজার হোক স্মৰ্ত্তচূড়ামণির সস্তান ত আমরা। অনাদি জন্মাবার কিছুদিন পরে তার পিতা যখন মারা গেলেন, মা তখন কাতরূচিত্তে সেই শাপাস্তের জন্ত স্বস্ত্যয়ন আরম্ভ ক’রে দিলেন ; আর রায় খুড় উল্লসিত হয়ে উঠে, তার চামুণ্ডামন্দির ছাগমহিষ-রক্তে ভরিয়ে তুললেন । নরবলির উপায় থাকৃলে বোধ হয় আনন্দের সহিতই তিমি সে কায কতেন।” “কি পাষও ! এ যে ঠিক উপন্যাসের কথা ! যা হোকৃ, তার মতলবটা যে সিদ্ধ হয় নি, এতেই বড় আহলাদ হচ্ছে।” "এর পর আর একবার তিনি ধনুক লুঠের চেষ্টা করেন---কাকা বাহাদুরের শ্রাদ্ধের সময় । প্রসাদপুরের কোন রাজার দেহস্তি হ'লে, পিণ্ডদাতাকে প্ৰাদ্ধক্ষেত্রে সৰ্ব্বাগ্রে সনাতন ধনুকের পূজা করতে হয়। খুড় ভাবলেন, ধনুক লুঠের এ মহা অবসর তিনি ছাড়বেন না।” “কি বিপদ!” হামাচরণের এই উৎকণ্ঠাপূর্ণ বাক্যে রাজা হাসিয়া বলিলেন,—"বড় বেশী বিপদ হয় নি সেবার, আমরা খুবই সতর্ক ছিলুম, তারই দু’চার জন লোক জখম হয়েছিল।” “ত বেশ । আশা করি, এ ঘটনা থেকে তিনি শিক্ষা লাভ করেছিলেন ?” “হ্যা, তার পর থেকে আর ধনুক লুঠেয় চেষ্টা করেন নি বটে, কিন্তু উপরোধ-অমুরোধের জালায় আমাদের অতিষ্ঠ ক’রে তুলেছিলেন। তবে যখন দেখলেন, পাষাণ তাতে গলবার নয়, তখন থেকে শাসনবাক্য ধরেছেন যে, তিনি আমার মামে