পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি o “আশ্চৰ্য্য কিছুই নয় । যোগ্য শিক্ষালাভের জন্ত গুরুও সমান আগ্রহবান । আপনার ব্ৰত আমার ব্ৰত একই—উভয়েরই উদ্দেশ্য দেশমঙ্গলসাধন । পুরুষসঙ্কল্পের সহিত অাদ্যশিক্তির সহযোগেই প্রকৃতভাবে এ উদ্দেশ্য সিদ্ধ হ'তে পারে ।” “আপনি দেখছি বড় ভুল বুঝেছেন। আমি নিতান্ত শক্তিহীন দুৰ্ব্বল নারী । গুরুকে দান করার মত তেজ আমার নাই, আমি সম্পূর্ণভাবে তা’র কৃপাগ্রার্থী। এমন কি, যে পথ ধ’রে আমি চলেছি, তা’ও ঠিক কি না, আমি জানি না । দারুণ সংশয়ের মধ্যে আমি দিশাহার । আপনি যদি দিব্য দর্শক হ’ন ত আমার এই সংশয় মিটিয়ে দিন।” "তার অাগে আমার প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে । আপনি কি আমাকে গুরু ব’লে মানতে প্রস্তুত আছেন ?” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী হঠাৎ নীরব হইয়া পড়িলেন, কি উত্তর দিবেন ? তাহার মন ত এখনও ইহাকে গুরুরূপে ঠিক বরণ করিতে চাহিতেছে না । থামিয়া থামিয়া তিনি বলিলেন,—“যদি আমার সংশয় মেটাতে পারেন— " তিনি হাসিয়া কহিলেন, “পরীক্ষা চান ? নুতন বটে। গুরুকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করাই ত আমদের দেশের চিরন্তন প্রথা । যদি আমাকে গুরু ব’লে মানেন, তা’ হ’লে বিনা প্রশ্নে বিনা সন্দেহে আমার উপদেশ পালন করতে হবে।” আবার জ্যোতিৰ্ম্মল্পী নীরব হইয়া পড়িলেন । এক দিন তিনি ভগবানের নিকট গুরু-মিলন প্রার্থন করিয়াছেন, আর অগ্ৰজ গুরু-দর্শন পাইয়াও র্তাহার মন কেন অপ্রসন্ন ? ইহাতে কি সেই সৰ্ব্বশক্তিমানের দানকেই অগ্রাহ করা হইতেছে না ? তিনি সন্ন্যাসীর প্রশ্নের কোন উত্তর প্রদান না করিয়া সহসা জিজ্ঞাসা করিলেন—“আপনার কি কোন গুরু আছেন ?” “আছেন।” “কে তিনি ? কোনও সিদ্ধপুরুষ বোধ হয় ?” “না। স্বয়ং দেশমাতাই আমার গুরু।” “তিনি ত আমারও গুরু, কিন্তু আমি ত তা’র কথার সব অর্থ ঠিক বুঝতে পারি না, আপনি বুঝেন কিরূপে ? অামাকে সেইটুকু ব’লে দিন, দয়া कृ'एन्न ।" একটা পরিপূর্ণ আকুলতার স্বরে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী এই প্রশ্ন করিলেন। সন্ন্যাসী কহিলেন, “সাধক মাত্রেই ত তা’র অর্থ বুঝতে পারেন,—আপনিও ত এক ཧཱ་མ་ সাধক ৷” “ন, আমি বুঝতে পারিনে,—জ্ঞান-সাধকরা এ বিষয়ে কি বলেন, আপনি খুলে বলুন।" “সকলেই একবাক্যে বলছেন, ‘স্বরাজ চাই', স্বাধীন ভারত চাই । আকাশে বাতাসে এই কথা ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আর আপনি শুনতে পান না ?” “শুনতে পেয়েছি, কিন্তু উপায় কি, সে উপদেশ ত পাচ্ছি না—সেই কথাই আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি বলুন –বলুন আপনি, উপায় কি ?” উত্তর হইল -“শরীর-পতন কিংবা মন্ত্রের সাধন।” “কিন্তু সে মন্ত্র কি ? সেই মন্ত্রলাভের জন্তই ত উৎসুক হয়ে আছি।” রাজকুমারী অধীরভাবে এই কথা বলিলেন । সন্ন্যাসী ধীরভাবে কহিলেন— “সৰ্ব্বত্যাগী হ’তে পারেন যদি, তবেই সে মন্ত্র পাবেন ।” রাজকণ্ঠার মনে পড়িল শরৎকুমারকে , অন্তঃপ্রাণের মধ্যে দীর্ঘ-নিশ্বাস উঠিয়া সেইখানে আবদ্ধ রহিয়া গেল , তথাপি ইতিপূৰ্ব্বে শুামসুন্দরের পদতলে যাহার প্রেমকে বলিদান দিতে অপরাগ হইয়াছিলেন, আজ গুরুর মুখের দিকে চাহিয়৷ তাহাতেও স্বীকৃত হইয়া কম্পিত-কণ্ঠে কহিলেন, “পারব।” “পারবেন ? ঠিক বলছেন, পারবেন ?” - রাজকুমারী আবার কহিলেন, “পার্ব। ধৰ্ম্ম ছাড়া মায়ের চরণে, সুখ-শাস্তি ধন-জন সৰ্ব্বস্ব উৎসর্গ করতে প্রস্তুত আছি।” সন্ন্যাসীর বঙ্কিম অধরপ্রাস্তে ঈষৎ হাসির রেখা ফুটিল, তিনি তাহা সংযত করিয়া লইয়া গম্ভীরভাবেই কহিলেন “এই ত কুণ্ঠ রেখে বরেন। ধৰ্ম্ম কথাটা ত মস্ত ফাপা জিনিস, এক জন খৃষ্টানের পক্ষে যা’. ধৰ্ম্ম—এক জন হিন্দুর পক্ষে তা অধৰ্ম্ম। যোদ্ধার ধৰ্ম্ম নরহত্যা—কিন্তু সাধারণের পক্ষে এ কাজ মহাপাপ ।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী চিন্তা শক্তি হtয়াইয়া ফেলিয়া অজ্ঞানের মত বলিলেন, “আপনার উপদেশ কি ?” “গুরুর উপর বিশ্বাসস্থাপন করুন ; ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম তা’কে স্থির করতে দিন। আর আপনি তা’র আদেশ মেনে চলুন। যদি তা’ পারেন, তবেষ্ট দেশমাতার সেবার অধিকারী হবেন । পাবেন কি ? বলুন।” সন্ন্যাসী দীপ্ত নয়ন সমধিক প্রদীপ্ত করিয়া প্রতি অক্ষরে জোর দিয়া এই কথা বলিলেন। স্ত্রীলোক পুরুষের নিকটে ধে শক্তি, যে তেজ প্রত্যাশা করে— সেইরূপই শক্তিপুত তাহার এ বাণী ; জ্যোতিৰ্ম্মী