পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি উঠিলেন। কিন্তু চেতনালাভ করিয়াও র্তাহার মোহাবিষ্ট উদভ্ৰান্ত চিন্তু তখনে পূর্ণমাত্রায় প্রকৃতিস্থ হইতে পরিল না । চেকখানা বামহস্তে সবলে মুষ্টিবদ্ধ করিয়া ধরিয়া ঘুমের ঘোৱেই যেন তিনি দ্রুত অব তরণে বাগানে আসিয়া পৌছিলেন । মান ভাদ্র ; ভাঁদ্রের চতুর্দশ দিবসে জ্যোতিৰ্ম্মী জন্মগ্রন্থণ করিয়াছিলেন,-সে দিন জন্মাষ্টমী ছিল ; কিন্তু এবার তাহার কিছু পূর্বেই তিথি প্রতিপদে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী উনবিংশ বৎসর বয়ঃক্রম পূর্ণ করিলেন। রাজ বন্দী হওয়া পৰ্য্যন্ত কন্সার জন্মদিনের সমারোহ-পৰ্ব্ব যে উঠিয়া গিয়াছে, তাহ পাঠক জানেন। লোকসমাগম এ সময় একেবারেই থামিয়া গিয়ছে । একমাত্র কৃষ্ণলাল কেবল বিন নিমন্ত্রণেও হাসিকে লইয়া এ দিনে আসিয়া দেখা দেন এবং আন্তরিক সথ্যালাপে এ হেন দুঃসময়েও ইহাদিগকে প্রফুল্প করিয়া তোলেন । এবারও অনাদি পূৰ্ব্বাস্তুে তাইদের আনিতে গিয়াছে ; কিন্তু ট্রেণ ফেল করিয়া সকালে তাহার অসিতে পারেন নাই, সম্ভবতঃ সন্ধ্যায় আসিম পৌছিবেন । শ্রাবণে এবার অতিরিক্ত বর্ষ হইয়া গিযাছে। তাই বুঝি কৃচিত কোনও দিন রোদ-বৃষ্টির ক্ষণিক অভিনয়-থেল ছাড়া “মাহ ভগদরের” এই আধাআধি সময় পর্য্যস্ত ভরা ভাদরের” কোন লক্ষণ দেথা যায় নাই। অনেক দিন পরে হঠাৎ কিন্তু আজি শেষ বেলায় আকাশে কালে মেঘের এমনি ঘোরঘটা লাগিয়া গেল যে, মনে হইতে লাগিল, এখনই যেন ধরাতল রসাতলে যাইবে । কড়াক্কড় মেঘগর্জনে, ঘনঘন বিদ্যুৎফুরণে, প্রলয়দেবের তাওব নৃত্য স্বচিত হইল। কিন্তু দেবী পৰ্ব্বতী মনে মনে ইহাতে প্রমাদ গণিলেন, দেবচরণে অভিমান অশ্রুলিন্দু ঢালিয়া অচিরাৎ তাহার রুদ্রভাব নির্বাপিত করিয়া দিলেন । ফলে ক্ষণকাল সজোরে বৃষ্টিধারা নামিয়াই অবিলম্বে আকাশ বর্ষণক্ষান্ত হইল । মেঘান্ধকার তৰু কিন্তু মথাশীঘ্ৰ ঘুচিল না। ধীরে বিচ্ছিন্ন জলদমালার মধ্যেই লুকাইয়া স্বৰ্য্যদেব অস্তগমন করিলেন । কনক-আভারঞ্জনবিহীন এই ম্রিামীণ অপরাহ্লে তাহারই যেন সচেতন প্রতিমূৰ্ত্তির দ্যায় জ্যোতিৰ্ম্ময়ী বাগানে লতামণ্ডপতলে আসিয়া দাড়াইলেন। রাজা বন্দী হওয়া অবধি বাগানের অfর তেমন সেবা-ষত্ব নাই, অযত্ন-রক্ষিতা লতাবলী তৰু ফুলঙ্গীন নহে । বালিক তলদেশে আসিয়া দাড়াইবামাত্র দুই চারিটি ফুল খসিয়া পডিয়া স্বাগত অাদরে তাহার মঙ্গ চুম্বনাস্তে পদতলে লুটাষ্টয়া পড়িল। এই ছঃখের ఫిలి সময়ও রাজকন্ত ফুলসখাদের এই আদর অভ্যর্থন অগ্রাহ করিলেন না । মাট হইতে তুলিয়া সেগুলিকে র্তাহার শিথিল কবরীভুক্ত করিয়া লইয়া মওপারে রক্ষিত চীন কারিকরের নিপুণ হস্তনির্মিত কৃত্রিন কাও সনে বসিয়া শূন্তনমনে সম্মুখবন্তী সোমানদীর দিকে চাহিয়া রহিলেন । বর্মীর ভর নদীর জলে তথন আকাশ ভাঙ্গিম। পড়িয়াছিল । তরঙ্গোৎক্ষিপ্ত শ্বেতকণা-লহরী মেঘের কালো বর্ণ অঙ্গে মাথিয়া বাগানের পীড়ে ধাক্কা দিতেছিল । উদ্যান-প্রান্তে পরিচ্ছিন্ন সসীম জলতরঙ্গের উপর অসীম পারাবারের একটি মহাদৃগু জ্যোতিস্মীর নেত্রপথে ভাসিয়া উঠিয়ছিল,—একখানি ডুৰোডুবে ক্ষুদ্র তরণী উঠিয়া পড়িয়া এই পারাবার বাহিয়া উধাও হইয়া চলিতেছিল । কোথায় ইহার গতি ? ইচfর চালকষ্ট বা কে ? বৰ্ত্তমানেব দিকে চাহিয়া বালিকার মন তখন অতীতে মগ্ন হষ্টল । তাহার বিশ্বাস-বুদ্ধিহার জীবনতরী ও এক দিন এমনট ডুবো-ডুবো হইয়াছিল । যে বাদুকর নাবিক তাহার মায়ুকাঠির স্পর্শে অচেতন, সেই জড়কেও মুহূর্বে জ্ঞানে প্রেমে পরিপূর্ণ মানবরূপ দান করিয়াছিলেন–র্তাহর সহিত জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর জীবন ত আজি সম্বন্ধবিচ্ছিন্ন ? সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন ? কিন্তু তবু ত ঠাহীকে তিনি স্মৃতি-বিচ্ছিন্ন করিতে পারিতেছেন না ! পদয়ের সে স্মৃতি কাহিনী উৎসের মতই উঠিয়া আকাশ-বাতাস যে ছাইঃ ফেলিয়াছে ! সে দিন যে জীবনের একটি মহা পৰ্ব্বদিন ! কেমন করিয়া জ্যোতিৰ্ম্মী সে দিনটি ভুলিবেন ? সন্ন্যাসীর সহিত বাদানুবাদে র্তiহার চিত্ত যপন সংশয়দোলায় অধীর, অস্তির, তখন যাহার প্রেমোজ্জল ধ্ৰুবধৃষ্টি, আনন্দময় স্পর্শ বালিকার সেই উদ্বেলিত উদূত্রান্ত চিত্তে মঙ্গল বিশ্বাস ঢালিয়া দিয়াছিল, তাহাকে ভুলিবেন কি করিয়া ? পরবর্তী কত না সুগভীর দুঃথনৈরাশু সেই স্মৃতির প্রভাবে সহনীয় হইয়াছে । আজিও প্রাতঃকালে সে দৃষ্টির অরুণ রেখাপাত তাহার হৃদয়াকাশে কত না আনন্দ-মধুর উযালোক রচনা করিয়াছিল । সে ত শুধু মুহূৰ্ত্ত পুর্বের কথা ; আর এখন ? সে স্কৃতি শুধু আলোকদণৰনিলের বিস্তুত ঝলক ! বালিকা উদ্ধমুখী হইয়া মুদ্রিত নয়নে একমনে ভগবৎ-কুপা প্রার্থনা করিতে লাগিলেন । অনভিজ্ঞ বাল-জীবনে নিরাশ অবিশ্বাস দৃঢ়মূল হইতে পারে না । সে প্রার্থনায় তাহার মন প্রাণ পুনরায় আশবিশ্বাসপুত হক্টরা উঠিল ; নয়ন খুলিয়া তিনি