পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৪ গোপাল দোকান দেখিবা মাত্রেই একটি বাঁশী লইয়া যেখানে বিপিন ও কামিনী খেলিতেছিল, সেইখানে চলিয়া গেল । সরলার নিকট একটিও পয়সা ছিল না, এ জন্য তিনি প্রমদাকে কহিলেন, "দিদি, একটা পয়সা ধার দেবে ?" দিদি অন্য সময়ে তিন ক্লোশের কথা শুনিতে পান, ঘরের দেয়ালে কণা সংলগ্ন করিয়া অভ্যন্তরস্থ শিশর সবনের কথা বলিয়া দিতে পারেন, কিন্ত এক্ষণে তাহার পাবে দাঁড়াইয়া সরলা যাহা বলিলেন, তাহা শুনিলেন না । সরলা এ জন্য পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “দিদি, এইটা পয়সা ধার দেবে ?" দিদি যেন সে দেশেও নাই । সরলা আবার জিজ্ঞাসা করিলেন । এবার কাছে একজন দড়িাইয়া ছিল, সে কহিল—“শুনতে পাওনা, ছোট বউ কি বলছে, উত্তর দাও না ?" অনেক ক্ষণ নিদ্রার পর জাগ্রত হইলে যেমন চেহারা হয়, প্রমদ তেমনি মুখভংগী করিয়া এক চক্ষ দ্বারা সরলার পানে দটি করিয়া কহিলেন--"কি, কি বলছে ?" সরলা কহিলেন, “একটা পয়সা ধার দিতে পার দিদি ?” প্রমদা । দিদি ত মহাজন নয় যে, ধার দেবে ? “যদি ধার না দাও ত গোপালকে এই বাঁশীটা কিনে দাও ।" প্রমদা । আমি ত আর কলপত্র হয়ে বসি নি যে, যে যা চাবে, তাই দেব । সরলা কহিলেন, “এ ত তোমার দান করা হচ্ছে না । গোপাল তোমার পর নয় । যেমন বিপিন কামিনী, তেমনি গোপালও তোমার একটি মনে কর না কেন ।” “লোকে যা মনে করে, তাই যদি হ’ত, তবে কি আর দুঃখ থাকতো ? আমি যদি মনে কলেই রাজরাণী হ’তে পাত্তাম, তা হ’লে কি আর আমি এমন ক’রে বেড়াই ?” সরলা, প্রমদার এই সমধর বাক্য শ্রবণ করিয়া অধোবদন হইয়া রহিলেন । প্রমদা বলিতে লাগিলেন, “কেমনই পৃথিবীর লোক, এদের যত দাও, ততই এদের আশা বন্ধি হয় । আমার যাহা মাসে মাসে আসে, আমি যদি তা রেখে চলতে পারতাম, তবে আমার ভাবনা কি ? কিন্তু তা তো হবার জো নাই । এক জন মাথায় মোট করে আনবে, আর পাঁচ জন তাই ঘরে বসে উড়াবে । ওরা যে বোকা, কিছ: বুঝে না । ওদের বন্ধি যদি থাকতো, তা হ’লে কি আজও ওর খেটে খেটে মাথার ঘাম পায়ে পড়তো । এত দিন টাকার ব্যতার উপর বসে থাকে না কেন ?" প্রমদা আরও বলিতেন, কিন্তু তাঁর স্বামী বোকা, এই দুঃখে একেবারে সহস্র ধারে অশ্রপাত করিতে লাগিলেন । পাড়ার কোন কোন গিন্নী, যাঁরা সময়ে সময়ে প্রমদা বড়ঘরের মেয়ে, কেমন শান্ত, কেমন সন্দের মুখখানি, কেমন সুন্দর পটল-চেরা চক্ষ দুটি, কেমন বাঁশীর মত নাকটি, ইত্যাদি অপক্ষপাতী সত্য কথা বলিয়া দরকারমত ননটক