পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ : ৯৫ এমন সময়ে দুইটি পথিক কৃষ্ণনগরাভিমুখে যাইতেছে। পথিক বয়ের বাম হতে একটি একটি ক্ষুদ্র ব্যাগ, দক্ষিণ হতে একটি একটি কাপড়ের ছাতি ; গায়ে পিরান, মস্তকে চাদরের উষ্ণৗষ, পদযুগ বিনামাশন্যে । যে অগ্ৰে যাইতেছে, তাহাকে দেখিলে বড় শ্রান্ত বোধ হয় না। কিন্তু যে পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতেছে, তাহার পদপ্রক্ষেপ দশন ফরিলে বোধ হয় যেন তাহার অত্যন্ত কষ্ট হইতেছে । সন্ধ্যাও হইল, পথিকদ্বয়ও এক গ্রামে প্রবেশ করিল। এত ক্ষণ তাহারা প সপরে কথা কহে নাই, কিন্তু গ্রামে প্রবেশ করিয়া পশ্চাদ্বন্তী অগ্রগামীকে সবোধন করিয়া কহিল, "দাদাঠাকুর, আজ আর চলে কাজ নেই, এই গ্রামেই থাকা যাউক ।" এই কথাটি এমন মদ স্বরে কহিল যে, কোন তৃতীয় ব্যক্তি শুনিলে অনায়াসেই বুঝিতে পারিত, পথিক কোন-না-কোন প্রকার ভয় পাইয়াছে। বোধ হয়, কথা শুনিয়া পাঠক বুঝিতে পারিয়াছেন যে, বক্তা নীলকমল এবং যাহাকে সম্বোধন করিয়া কহিল, তিনি আমাদের বিধুভুষণ । প্রথম বার কোন উত্তর না পাইয়া নীলকমল পুনরায় পৰববিৎ মদ বরে কহিল, "দাদাঠাকুর, পুজার সময় রাত্রে রাস্তা চলা কিছ না, এস আমরা এক বাড়ী থাকি, কাল রাত থাকতে থাকতে উঠে চলে যাব।” বিধ একটু হাসিয়া উত্তর করিলেন, "কেন নীলকমল, এখন ভয় করো কেন ? আগে ত তুমি চোরের ভয় করতে না ?" নীলকমল কহিল, “আগে কিছু ছিল না, এখন কিছু হয়েছে । কিন্তু যা বললাম, সে কথার কি ?" বিধভাষণ উত্তর করিলেন, “এই গ্রামের পরেই হাঁসখালি । হাঁসখালি গেলেই ত বাড়ী গেলাম । এই একটকের জন্যে এখানে থেকে কট পাওয়া কি ভাল ? তুমি যে ভয়ের কথা বলছো, এখানে সে ভয়ের কোনই কারণ নাই। এ কৃষ্ণনগরের নিকট, এখানে কি রাস্তার লোক কেউ মেরে নিতে পারে ?” “তবে চল । কিন্তু যদি আমার কথা শোন, তবে এইখানেই থাকা উচিত।" বিধভষণ নীলকমলের কথা না শুনিয়া অগ্রে অগ্ৰে চলিয়া যাইতে লাগিলেন । নীলকমলও ( অত্যন্ত অনিচ্ছাপবেক ) তাঁহার অনুসরণ করিল। কিয়দর নীরবে গমন করিয়া বিধভষেণ সমুখে অৎগলি নিন্দেশ করিয়া কহিলেন, “নীলকমল, সেই গাছতলা দেখা যাচ্ছে " নীলকমল একটা হাসিয়া উত্তর করিল, "দাদাঠাকুর, সেই এক দিন, আর এই এক দিন ।” পনবার কিয়ন্দর নীরবে গমন করিয়া সেই বক্ষের সমীপবৰ্ত্তী হইলে, বিধ কহিলেন, “নীলকমল, চলো—গাছতলায় বসে আর একবার তামাক খাই ।” নীলকমল উত্তর করিল, "দাদাঠাকুর, অন্ত্রার মা যা বলেছিল তাই, তুমি মনের কথা টেনে বলেছ ।” উভয়ে বক্ষমলে গিয়া বসিলেন । নীলকমল অঙ্গলি নিন্দেশ করিয়া দেখাইল, "দাদাঠাকুর, তুমি ঠিক যেখানে বসেছ, ঐখানেই বসেছিলে, আর