পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৯৬ আমিও এইখানে এসে বসেছিলাম । তুমি আমাকে দেখে ডরিয়ে উঠেছিলে ।” বিধভষণ চতুদিক দটি নিক্ষেপ করিয়া দীঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন । হায়! আমাদের যে দিনটি যায়, সেটির মতন আর আইসে না । বিদ্যালয় হইতে বাহির হইয়া কে ক'দিন সুখভোগ করিয়াছেন ? কাহার চিত্ত আর নবযৌবনের ন্যায় সোঁহাদ" বা প্রণয়রসে অভিষিক্ত হইয়াছে ? মবভাবের শোভা দশনে কাহার অন্তঃকরণে আর সেরপ প্রীতির সঞ্চার হইয়াছে ? সংসার, তোমাকে ধন্যবাদ ! তোমাতে প্রবেশ করা আর বিস্মৃতিত্বদে অবগাহন করা, উভয়ই সমান। বিদ্যালয়ে থাকিতে যে সহোদকে অবলোকন করিলে ভাবনা চিন্তা দরে হইয়া যাইত, যাহার মুখে হাসি দেখিলে হৃদয়াকাশে শরচ্চন্দ্রের জ্যোতির ন্যায় প্রভা বিকীর্ণ’ হইত, যাহার বিরহ মাত্য অপেক্ষাও অধিক ক্লেশকর বোধ হইত, সখে দুঃখে সম্পদে বিপদে যাহার চিরসহচর হইব মনে হইত, এখন সে প্রিয় সহদ কোথায় ? সকলেই সবাথপরতা-পাশে আবদ্ধ হইয়া আপনাপন চিন্তায় মগ্ন হইয়া রহিয়াছে। মুখ তলিয়া অগ্রপশ্চাতে কে আছে, দেখিবার অবকাশ নাই । চারি বৎসর অগ্রে বিধভষেণের চিত্ত একরপ ছিল। এখন আর একরপ হইয়াছে। অথোপা জনে প্রবত্ত হওয়া অবধি প্রকৃত সখের সঙ্গে চিরবিদায় লইয়াছেন । নবযৌবনের সখের সহিত সংসারের জালা-যন্ত্রণা তুলনা করিলে কাহার হৃদয়ে না শোকানল জনলিয়া উঠে ? কে দীঘনিশ্বাস না ছাড়িয়া থাকিতে পারে ? নীলকমল চকমকি ঠকিয়া আগন বাহির করিল। উভয়ে তামাক খাইয়া বক্ষমল হইতে পুনরায় যাত্রা করিলেন। বহুকাল বিদেশে থাকিয়া বাটী আসিবার সময় মনোমধ্যে কত প্রকার ভাবের উদয় হয়, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না । কখন কখন আনন্দে হৃদয় উচ্ছলিত হইতে থাকে, কখন কখন ভয়ে শরীরকে কম্পিত করে । যাহাদিগকে বাটী রাখিয়া গিয়াছিলাম, তাহাদিগকে সসথকায় দেখিতে পাইব, ভাবিলে মনে কতই আহলাদ হয়, কিন্তু তাহাই যে দেখিতে পাইব তাহারই বা প্রমাণ কি ? এরপ চিন্তায় হৃদয়কে শোকসাগরে নিমজ্জিত করিয়া ফেলে। বিধ ভাষণ পয্যায়ক্ৰমে ভাল মন্দ ভাবনা ভাবিতে ভাবিতে বাটীর বারের সমীপবৰ্ত্তী হইলেন । বাটী হইতে যাইবার সময় দেখিয়া গিয়াছিলেন,বাটীতে লোক ধরে না। তখন শশিভাষণের নতন বাটী প্রস্তুত হয় নাই। শশিভাষণ, তাঁহার সন্তানাদি, গদাধরচন্দ্র ও তদীয় জননী প্রভৃতি সকলেই এক বাটীতে থাকিতেন । সুতরাং অহনিশি বাটীতে গোলমাল থাকিত । বিধভষণ এখন বাটীর নিকটবত্তী হইয়া গোলমালের চিহ্ন মাত্রও শনিতে পাইলেন না। ভয়ে তাঁহার শরীর কপিত হইতে লাগিল । বারে দ"ডায়মান হইয়া নীলকমলকে কহিলেন, “নীলকমল, তমি ডাক দেখি একবার, ‘বাড়ী কে আছে’ ব’লে ?” বিধভষেণের নিজে উচ্চ কথা কহিবার সামথ্য হইল না । নীলকমল উচ্চৈঃস্বরে “বাড়ী কে আছে" বলিয়া দুই তিন বার চীৎকার