পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ : ৯৯ ঠাকরণদিদি কহিলেন, “সরলা, তুমি এমন কাহিল হয়েছ, আমাকে এক দিনও বলো নাই ?” সরলা একট: হাসিলেন, আর উত্তর করিলেন না। বিধভষণ অনেক টাকা লইয়া বাটী আসিয়াছেন, এ কথা মহত্তমধ্যে সবন্ত প্রচার হইয়া পড়িল । সকলেই দেখা করিতে শশব্যস্ত । অন্য লোকের কথা দরে থাকক, গদাধরচন্দ্র স্বয়ং আসিলেন । আগে যাহারা ঘণায় কথা কহিত না, এক্ষণে যেন তাহারা চিরসহদের ন্যায় হইয়া উঠিল । “রজতে"র কি মহিমা ! লোকের সহিত আলাপ করিতে বিধভষেণের প্রায় সমস্ত দিন অতিবাহিত হইল ! বাটীর মধ্যে আসিয়া যে সরলার কাছে দু-দণ্ড বসেন, সন্ধ্যার অগ্রে তাহার এমন অবকাশ হইল না। সন্ধ্যার সময় সকলে চলিয়া গেলে বিধ্যভাষণ বাটীর মধ্যে আসিলেন । সরলা প্রাতঃকালে শরীরে এরুপ বল পাইয়াছিলেন যে, তাহার মনে হইয়াছিল, তিনি যেন পবের ন্যায় নীরোগ অবস্থাতেই আছেন। বেলা দুই প্রহর পয্যন্ত সরলা সহাস্যবদনে ব্যস্তসমস্ত হইয়া কাজকৰ্ম্ম করিলেন । কিন্ত দই প্রহরের পর হইতে তাঁহার হস্ত পদ বলশন্য হইয়া আসিতে লাগিল। কাহাকে কিছ না বলিয়া আপনার ঘরে গিয়া শয়ন করিলেন । শ্যামা যে-কোন কায্যেই ব্যাপাত থাকক, তাহার এক চক্ষ নিয়তই সরলার উপর থাকিত । সরলা শয়ন করিলে শ্যামা তাঁহার বিছানার নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “খড়ী-মা আবার শলে যে ?" সরলা উত্তর করিলেন, “শ্যামা, কাল রাত্রে আমার ঘুম হয় নাই । ঘমে আমার শরীর অবসন্ন হয়ে আসছে। আমাকে জাগাইও না, আমি একটা ঘামাই ।” সরলা এই বলিয়া পাব পরিবত্তন করিয়া শয়ন করিলেন । শ্যামা আপনার কাজ করিতে গেল । ক্ষণকাল পরে শ্যামা আবার সরলার বিছানার নিকটে গেল । সরলা এখনও নিদ্রা যাইতেছেন । মুখমন্ডলে আর কোন চিন্তার লক্ষণ নাই ; প্রফল কমলের ন্যায় শোভা পাইতেছে । এত ব্যটি হইয়া গিয়াছে, বায় শীতল হইয়াছে, তথাপি সরলার ঘন্ম হইতেছে। শ্যামা অঞ্চল দ্বারা আপনার হস্ত পরিকার করিয়া আস্তে আস্তে সরলার কপাল সপশ করিল। কপাল শীতল। কিন্ত শ্যামার হস্তপশে সরলা চমকিয়া উঠিলেন । পাছে তাঁহার নিদ্রাভঙ্গ হয়, এই আশংকায় শ্যামা নিঃশব্দপদসঞ্চারে তথা হইতে চলিয়া আসিল । শ্যামা বাহিরে আসিয়া ভাবিল, “এখন গ্রীষ্ম কিছু নেই, তব গা ঘামে কেন ?" কিন্ত সরলা বহ কাল শয্যাগত ছিলেন, আজি উঠিয়া বেড়াইয়া কাজকৰ্ম্ম করিয়াছেন, সতরাং শ্যামার কোন ভয় হইল না। পরন্ত মনে করিল, শ্রান্তিপ্রযক্ত সরলার শরীরে ঘন্ম হইতেছে। ক্রমে রুমে সন্ধ্যা সমাগত হইল, সরলার তথাপি নিদ্রাভঙ্গ হইল না।