পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১০ ০ বিধভষণ বাড়ীর মধ্যে আসিয়া, সরলকে নিদ্রিত দেখিয়া শ্যামাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “শ্যামা, সেই ঘমে এখনও ভাঙ্গে নাই ?" শ্যামা কহিল, “না” শয্যার শিয়রে বসিয়া সরলার কপালে হাত দিলেন । কপাল যেন হিম পাথর। বিধভাষণ কিঞ্চিৎ ভীত হইয়া “সরলা, সরলা" বলিয়া তিন চারি বার ডাকিলেন । সরলা চক্ষ মেলিয়া বিধভষেণকে দেখিতে পাইলেন। পাইয়া বিস্ময়াত্মক স্বরে কহিলেন, “কে তুমি ?” বিধভষেণের উত্তর দিবার পবেই পুনৰবার কহিলেন, “না, আমার ভাল হয়েছিল। চিনেছি। এখন, তুমি বঝি আমার গোপালকে নিতে এসেছ ? তা পাবে না । আমি যাচিছ।” সরলা প্রলাপ বকিতেছেন । বিধভষেণ তিন চারি বার বড় বড় করিয়া সরলার নাম ধরিয়া ডাকিলেন । সরলা উত্তর করিলেন, “কি ? এক-শ বার ডাক কেন ? এই যাচ্চি ।" এই বলিয়া সরলা পনরায় চক্ষ মুদ্রিত করিলেন । বিধভাষণ রোদন করিতে করিতে ঘরের বাহিরে আসিলেন । শ্যামাকে ডাকিয়া কহিলেন, “শ্যামা, সরলা বুঝি ফাঁকি দিলে । তুমি ঘরে যাও, আমি দেখি, যদি একজন ডাক্তার পাই ।" শ্যামা উদ্ধশ্বাসে দৌড়িয়া ঘরে আসিল । দেখিল, সরলা পৰববিৎ নিদ্রা যাইতেছেন। "খড়ী-মা,” “খড়ী-মা" করিয়া ডাকিল, সরলা উত্তর করিলেন না। নিশ্বাস স্বাভাবিক বহিতেছে, মুখভঙ্গী সবাভাবিক আছে । কিন্ত সরলার শরীর শীতল হইয়াছে । শ্যামা পায়ের কাছে বসিয়া সরলার পায়ে হাত বলাইতে লাগিল । গোপাল অনেক দিনের পর আজি মাতাকে একটা ভাল দেখিয়া ভবনের সহিত খেলা করিতে গিয়াছে। বিধভষণ ডাক্তার ডাকিতে যাইবার সময় ভবনদের বাড়ী ভবনের মাতাকে সরলার অবস্থা জানাইয়া গোপালকে সে রাত্রে সেইখানে রাখিতে বলিয়া গেলেন । প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে বিধুভুষণ ডাক্তার সমভিব্যাহারে ফিরিমা আসিলেন । ডাক্তার বাব আসিয়াই রোগীকে একট: আরক খাওয়াইয়া দিলেন। পরে বসিয়া শ্যামা ও বিধভষণের নিকট সমুদায় বিবরণ অবগত হইলেন। ঘড়ি খলিয়া সরলার নাড়ীর গতিক দেখিলেন, তৎপরে সম্প্রদবারা সরলার বক্ষ ও পাঠদেশ পরীক্ষা করিলেন। তখন বিধভাষণ চিন্তাকলচিত্তে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন দেখলেন মশায় ?” ডাক্তার উত্তর করিলেন, রোগ সাংঘাতিক। বাংগালাম ইহাকে যক্ষমা বলে । এ রোগ কখনও আরাম হয় না । পুস্তকে লেখে বটে যে, দৈবাৎ আরোগ্য হ’লেও হতে পারে, কিন্তু আমি এই ৩০ বৎসরের মধ্যে একটিকেও আরাম হ’তে দেখি নাই । রোগীর চেহারায় বোধ হচেছ, চার পাঁচ বৎসর এ রোগের সত্ৰপাত হয়েছে । বোধ হয় প্রথমাবধি যত্ন করলে আরও দুই এক বৎসর বাঁচার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু