পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ : ১•১ সে অনমান মাত্র । এ রোগে কখন মৃত্যু হয়, তার স্থিরতা নাই। এখন যে এত মন্দ দেখা যাচ্ছে, তবুও এমন হতে পারে যে, এখনও পাঁচ ছয় মাস বেচে থাকলেও থাকতে পারেন । কিন্তু তা নিতান্ত অসম্ভব । আমার বোধ হচ্ছে, আজ শেষ রাত্রেই এ’্যার প্রাণত্যাগ হবে । আজ সকাল বেলা হ’তে দুই প্রহর পৰ্য্যন্ত ভাল ছিলেন ; সে কেবল আপনার আগমনপ্রযুক্ত। তাতেই রোগীর মনে উৎসাহ উৎপাদিত হয়েছিল। কখন কখন সুসমাচার পেলে অন্তঃজলের রোগীও প.নরায় সংজ্ঞা লাভ করে, চার পাঁচ দিন বেচেও থাকে । বোধ হয়, আপনি যদি এমন সময় বাড়ী না ভাসতেন, তা হ’লে আরও কিছু কাল বেচে থাকতেন । কোন উৎসাহ হ’লেই কিঞ্চিৎ পরে তাহার বিপরীত ফলোৎপত্তি হয় । রোগীর তাই হয়েছে । বাঁচতেও পারেন, নাও পারেন । কিন্তু আজ বাঁচলেও অধিক দিন জীবিত থাকবেন না।" ডাক্তারের কথা শুনিয়ে বিধুভুষণ মিয়মাণ হইলেন । "হায়, আমিই সরলার মতে,ার কারণ” বলিয়া ক্লন্দন করিয়া উঠিলেন। ডাক্তার বাব কহিলেন, “আপনি যদি অমন ছেলেমানষের মতন কাঁদেন, তাহা হ’লে আপনি এ ঘরে থাকবার যোগ্য নন। এখনও বলা যায় না কি হবে । হয় ত বাঁচতে পারেন । কিন্ত অমন গোলমাল করলে সে সম্ভাবনা তত থাকবে না।" বিধভযণ কহিলেন, “মহাশয়, আর না, আর কদিবো না । কিন্ত বিবেচনা ক’রে দেখন, আমি বাড়ী না এলে আর কিছু কাল বেচে থাকবার সম্ভাবনা ছিল—এ কথা শুনে কি আমি না কে’দে থাকতে পারি ?” ডাক্তার সনেহে বিধভ.ষণের হস্ত ধারণ করিয়া কহিলেন, “সে অনুমান মাত্র, আমি ত পৰেবই বলেছি । কিন্তু তা না হ’লেও গত বিষয় ল’য়ে কাট পাবার দরকার কি ? যে বিষয় আর সংশোধিত হবার জো নাই, তা মনে না করাই ভাল ।” বিধভষণ চপ করিয়া বসিলেন । ডাঞ্জার বাব অনন্যমনা হইয়া সরলার মুখপানে নিরীক্ষণ করিয়া রহিলেন । ক্ষণকাল পরে সরলার ঠোঁট নড়িল । সরলা অপটিস্বরে যেন জল জল বলিলেন, শ্যামা জল দিতে গেল । ডাক্তার বাব শ্যামার হস্ত হইতে গেলাস লইয়া একটি ঝিনকে একটা জল ও আর একট আবক একত্র করিয়া সরলাকে খাওয়াইয়া দিলেন । সরলা খাইয়া মুখ বক্ৰ করিয়া কহিলেন, “বড় ঝাল । ক্ৰমে ক্ৰমে সরলার চৈতন্য হইল । বিধুভুষণ আর থাকিতে পারিলেন না। কাঁদিতে কাঁদিতে সরলকে কহিলেন, “সরলা, তোমার আর এক দিনের তরে সুখ হ’ল না।” - সরলার এক্ষণে উত্তম জ্ঞান হইয়াছে। মত্যর অগ্নে প্রায় সকলেরই হইয়া থাকে। একদণ্টে বিধভষেণের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “তুমি কাঁদছো কেন ?