পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৫ তেলটকৈ লইয়া যান, তাঁহারা প্রমদার রোদনে একবারে গলিয়া গেলেন । কেহ কাঁদিতে লাগিলেন, দ্য এক জন সরলাকে তিরস্কার করিতেও তটি করিলেন না। এক জন বে'টে থলোকার বিধবা ছিলেন । তাঁহার বিশেষ বাজিয়া উঠিল ; তিনি কহিলেন, “ঠিক কথা বলবো, তার আর ভয় কি ? সরলার বড় লম্বা লম্বা কথা, ওর সোয়ামী রোজগার করে, তব প্রমদার মুখ একটা উচ কথা কেহ শনতে পায় না ।” একটা শগাল ডাকিয়া উঠিলে জগলের সব শগোল যেমন ডাকিয়া উঠে, তেমনি তথার যত বিধবা উপস্থিত ছিলেন, সকলেই দিগম্বরীর মতে মত দিয়া সরলার নিন্দ করিতে লাগিলেন । কথার প্রসঙ্গে কথা উঠে । সরলার কথা কহিতে আরম্ভ করিয়া কমে ক্ৰমে সমুদায় স্ত্রীলোকের চরিত্র সমালোচনা করিলেন । পরিশেষে স্থির হইল যে, এ-কেলে মেয়ে একটিও ভাল নয় ( প্রমদা ছাড়া ) । মানবপ্রকৃতির পযালোচনা করিয়া দেখিলে পাঠকবগ বুঝিতে পারিবেন, বন্ধেরা যদিও যবেকদিগকে ছেলেমানষে বলিয়া তুচ্ছ করেন, তথাপি তাঁহারা পুনরায় যবা হইতে পারলে তিলা-ধাও গৌণ করিতেন না । ফলতঃ যৌবনকালের তুল্য কাল নাই। সকলেই য়াবা হইবার নিমিত্ত শশব্যস্ত। বালকেরা কামাইয়া গোঁফ তোলে, বন্ধেরা কলপ দিয়া কলো করে । তবে যে প্রাচীনেরা ‘ছলেমানষে এই কথাটি গালিস্বরুপ পুয়োগ করেন, সেটি বস্তুতঃ তাঁহাদের প্রকৃত ভাব নয় । সরল সজল নয়নে কিয়ৎক্ষণ অবাক হইয়া রহিলেন । মনোহারী আর তথায় অপেক্ষ কর ব্যথা মনে করিয়া দোকান বধিতে আরম্ভ করিল । ৩দশ"নে সরলা অধিকতর ভীতা হইলেন । এ দিকে গোপাল কাছে নাই যে, বাঁশীটি ফিরাইয়া দেন, অথচ মলাদানেরও শক্তি নাই । কি করবেন ভাবিতেছেন, এমন সময়ে মনোহারী গমনে মুখ হইল। দিগম্বরী, সেই বে'টে হলোকার বিধবাটি কহিলেন, "তোমাব পয়সা নে গেলে না ?" মনোহারী উত্তর করিল, “আমি ও বাঁশীটির দাম চাই না, অনেক ব্যাপার কোরে থাকি, একটা মাল নয় অমান। দিলাম।" সরলা এই কথা শুনিয়া পৰবাপেক্ষাও অধিকতর দুঃখিত হইলেন । সবন্ধি মনোহারী তাহার মুখ পানে দটি নিক্ষেপ করিয়া বুঝিতে পারিল বিনা মল্যে দানের কথা বলা ভাল হয় নাই। এ জন্য পুনরায় কহিল, "আমি ত প্রায়ই এ-পাড়ায় আসি, এবার যে দিন আসবে, সেই দিন পয়সা নিয়ে যাব ।" সরলা এই কথা শুনিয়া যার-পর-নাই শান্তি লাভ করিলেন। প্রমদা যার-পর-নাই দুঃখিত হইলেন ; আর উপস্থিত গিন্নীরা পরস্পরের মুখাবলোকন করিতে লাগিলেন ।