পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৪৪ খাজাঞ্জি কহিলেন, “আমার এক আপত্তি আছে । সকলে যেখানে এক গ্ৰহয়েছি, সেখানে মনের কথা খালে বলাই ভাল । আমার ভয় হচেছ, ম্যানেজার হ’লে এখন যে দু-এক পয়সা পাচিছ, তাও পাব না।” এই কথা শুনিয়া সকলেই একটু ভাবিত হইলেন । কিন্ত; রামসুন্দর বাব কহিলেন, “সে আপনাদের ভ্রান্তি মাত্র । ম্যানেজার নিযুক্ত হইলে সে বিষয়ে সুবিধা ছাড়া অসুবিধা হবে না। শশীবাব যেমন সব বিষয়ে খোঁজ রাখে, ম্যানেজার তা করবে না। কাগজপত্র সাফ সাফাই আর তহবিল দরক্ত রাখতে পারলেই হ’ল । বিশেষ এখন যে কাজে পাঁচ টাকা ব্যয় হয়, তখন তাতে পনের টাকা হ'লেও কেউ কিছু বলবে না। কোম্পানীর রেটের বেশী না হ’লেই হ'ল। রামসুন্দর বাবর কথায় সকলেই অনুমোদন করিলেন । অতঃপর সভা ভংগ করিয়া যে যাহার বাটী চলিয়া গেলেন । সরলার মতার পর দশ দিনের দিন শ্ৰাদ্ধ হইল। সেটি বন্ধ করিবার জো নাই । বংগদেশের কি চমৎকার প্রথা ! জীবিতাবস্থায় যাহার জন্যে লোকে এক টাকা ব্যয় করিতে কঠিত হয়, সে মরিলে তাহার শ্রান্ধে অনায়াসে দশ টাকা ব্যয় করিতে পারে। যদি শ্রান্ধের টাকা দিয়া লোকে চিকিৎসা করিত, তাহা হইলে বোধ হয়, অনেক অকালমৃত্য রহিত হইতে পারিত । সরলার মত অবধি বিধভষেণের চিত্তে উদাসীনের ন্যায় ভাব হইল । কোনখানে যান না ; কোন কাজকমে’ মনোনিবেশ করিতে পারেন না ; নিয়তই এক স্থানে বসিয়া ভাবেন ও মাঝে মাঝে নিঃশব্দে আশ্রপাত করেন। শ্যামা বিধভষেণকে একাকী থাকিতে দেয় না । সম্ববাদাই গোপালকে তাঁহার নিকট বসাইয়া রাখে। গোপাল বাটী না থাকিলে নিজেই তাঁহার নিকট বসিয়া তাঁহার সহিত নানাবিধ গল্প করে। একদিবস গল্প করিতে করিতে বিধভাষণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “শ্যামা, তোমরা কি আমার একখানাও চিঠি পাও নাই ? শ্যামা উত্তর করিল, “না ।" “তবে রেজেন্টরী চিঠিতে গোপালের নামে কে রসিদ দিত ?” শ্যামা কহিল, গোপালের নামে কখন কোন চিঠি আসেও নি, সে রসিদও দেয় নি। . গদাধর রেজেন্টরী চিঠি পেত, সে রসিদ-টসিদ দিত। কিন্তু গোপাল ত কখন দিত না ।” বিধভাষণ বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, গদাধর কোথা থেকে রেজেন্টরী চিঠি পেত ?” শ্যামা । তার মামা না কি ডাকে টাকা পাঠিয়ে দিত । বিধভষেণ বসিয়াছিলেন, শ্যামার কথা শুনিয়া অবিলবে উঠিয়া দডিাইলেন এবং চাদর লইয়া কহিলেন, “শ্যামা, টের পেয়েছি। সব চিঠিগুলো আর টাকা ঐ গদাই নিয়েছে।” এই বলিয়া তৎক্ষণাৎ ঘরের বাহির হইলেন। শ্যামা বঝিতে পারিল না, কি প্রকারে তাঁহার চিঠি গদাধরের হস্তগত হইবার সম্ভব । এ জন্য