পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১০৬ রমেশ "যে আজ্ঞা" বলিয়া ডায়রিতে চারি জন কনস্টেবলের নাম লিখিয়া শশীবাবর বাটীতে পাহারায় থাকিবার জন্য পাঠাইয়া দিল । পরে ভাবিতে লাগিল, “গদাধরকে এ বিষয়ে সংবাদ দেবো কি না ?” অনেক ক্ষণ আন্দোলন করিয়া স্থির করিল, এত চক্ষলৎজা থাকিলে পলিসে চাকরি করা সুকঠিন হইবে। গদাধর নিশ্চিত হইয়া আছেন । বিধভষেণ বাটী প্রত্যাগমন করিলে তিন চারি দিবস অত্যন্ত উৎকন্ঠায় কাল যাপন করেন। কিন্তু যখন দেখিলেন, চার পাঁচ দিবস কোন গোল উপস্থিত হইল না, তখন ভাবিলেন, আর ভয় নাই । বিধভষেণের সহিত যে তিনি দেখা করিতে গিয়াছিলেন, সে কেবল তাঁহার নিদোষিতা দেখাইবার জন্য। রাত্রিতে শশিভষণের বাটী কনটেবল পাহারা দিল, কিন্ত তাহা শশিভাষণ কিবা তাঁহার বাটীর আর কেহ টের পাইল না। পরদিন প্রত্যুষে শশিভাষণ বস্ত্ৰাদি পরিধান করিয়া কাছারি যাইবেন, সম্মখে একজন কনটেবলকে দেখিতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কি মনে ক’রে ?” কনটেবল কহিল, "আপনি একটা দেরি ক'রে কাছারি যাবেন । আমাদের বাব এখানে আসছেন । এই বাটীতে আমাদের আসামী আছে ।" শশিভাষণ বিমিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার বাড়ী কিসের আসামী ?" কনণ্টেবল কহিল, “গদাধর বাব পরের নামের রেজেস্টরী চিঠি নিজের বলে নিয়েছেন, তাই এখন প্রকাশ হয়েছে । আমরা গদাধরকে ধরতে এসেছি।" শশিভাষণের তখন মরণ হইল, গদাধর একখান রেজেন্টরী চিঠি পাইয়াছিল। সে সময় তাহার সে বিষয়ে কোন সন্দেহ হয় নাই। সুতরাং তাহার কোন অনুসন্ধানও করেন নাই। গদাধর বলিয়াছিলেন, চিঠি পে’ছিবে না ভয়ে তাহার মামা রেজেন্টরী চিঠি পাঠাইয়াছেন । শশিভাষণ তাহাই বিশ্বাস করিয়াছিলেন। কনষ্টেবলের মখে প্রকৃত বিষয় শনিয়া তিনি রাগত হইয়া গদাধরকে ডাকিলেন । গদাধর নিকটে আসিলে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি যে তোমার মামার রেজেন্টরী চিঠি পেয়েছিলে, সেই চিঠিখানা আন দেখি ” গদাধর শশিভষেণের রাগত ভাব ও কনটেবলকে দেখিয়া দৌড়িয়া খিড়কীর দরজার দিকে গেল । অতঃপরে প্রমদার সহিত দেখা হইল। প্রমদা জিজ্ঞাসা করিলেন, “গদাধরচন্দ্র, দৌড়াচ্ছ কেন : গদাধর উত্তর না করিয়া একেবারে খিড়কীর দরজায় গিয়া উপস্থিত হইল। প্রমদা ও প্রমদার মাতা কারণ জানিবার জন্য গদাধরের পশ্চাৎ পশ্চাৎ দোঁড়িলেন । গদাধর খিড়কীর দরজা খুলিয়া বাহির হইয়া যাইবে, এমন সময় তথায় আর এক জন কনস্টেবল দেখিতে পাইয়া “বাবা রে" বলিয়া বেগে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিল। গদাধরের মাতা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি গদাধরচন্দ্র ?" গদাধর উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিয়া কহিল, "আর গড়াধর চণ্ড ! গড়াধরচন্ড: এই বার মোলো।"