পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১১০ নীলকমলের মাতা কহিল, "ওরা বলেই বা বাছা হনুমান, তুমি ক্ষ্যাপো কেন ?" নীলকমল কহিল, “ওরা ত পর—বলবেই, তুমিই বলতে আরম্ভ করলে ? আমার দেশে থাকা হ’ল না।” এই বলিয়া আপনার বস্ত্ৰাদি সেই কেভিসের ব্যাগটির মধ্যে লইয়া বাটী হইতে বাহির হইল। নীলকমলের মাতা তাহাকে ফিরাইবার জন্য বিস্তর যত্ন করিলেন, কিন্তু নীলকমল কোন ক্ৰমেই তাঁহার কথা শুনিল না। নীলকমল চলিল, বালকেরাও পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল। যত ক্ষণ পয্যন্ত নিজগ্রামে ছিল, তত ক্ষণ সেই গ্রামের বালকেরা তাহাকে ক্ষেপাইতে লাগিল । নিজগ্রাম পরিত্যাগ করিলে আবার সেই নতন গ্রামের বালকেরা জটিল । কৃষ্ণকমল ও রামকমল বাটী আসিয়া মাতার নিকট বিবরণ জ্ঞাত হইয়া নীলকমলের উদ্দেশে গেল, কিন্তু দেখা পাইল না। পরদিবসও গেল, তথাপি দেখা পাইল না ; রামনগর হইতে চারি পাঁচ ক্লোশ দরে গিয়া শুনিল যে, এক জন "বাছা হনুমান" বললে ক্ষেপে, এমন লোক এসেছিল বটে, কিন্ত সে যে কোথায় গিয়াছে, বলিতে পারিল না । ত্রিংশ পরিচ্ছেদ গোপাল ও হেমচন্দ্র কলিকাতার বকফুলতলা ট্রীটে হেমচন্দ্রের বাসা । দ-তলা বাটী, কিন্ত; উপর তলায় একটি মাত্র ঘর। সে ঘরটি হেমচন্দ্রের শয়নাগার। নীচের তলার রাস্তার ধারের ঘরটি বৈঠকখানা । ঐ বৈঠকখানায় হেমচন্দ্র অধ্যয়নাদি করেন । হেমচন্দ্রের বাসার একট দক্ষিণে এক বাটীতে গোপাল থাকেন । গোপাল ডফ সাহেবের ইসকলে পড়েন, ইসকলে যাইবার সময় হেমচন্দ্রের বাসার সম্মুখ দিয়া যাইতে হয়। হেমচন্দ্র প্রত্যহই গোপালকে দেখিতে পান। গোপাল তাঁহার ঘড়ি সবরপে । গোপালকে যাইতে দেখিলেই হেমচন্দ্র ইসকলে যাইবার জন্য প্রস্তত হন। এক দিবস ইসকলের ছয়টির পর গোপাল বাটী আসিতেছেন। টিপ টিপ করিয়া ব্যটি হইতেছে। গোপালের ছাতি নাই । সেলেটখানির উপর পস্তকগুলি রাখিয়া উপড় করিয়া মাথায় দিয়া আসিতেছেন । হেমচন্দ্রের বাটীর নিকট আসিলে প্রবল বেগে বটি আরম্ভ হইল। গোপাল দৌড়িয়া আসিয়া হেমচন্দ্রের দরজায় গিয়া দাঁড়াইল । হেমচন্দ্র একটু পম্বে বাসায় আসিয়াছেন । গোপালকে প্রত্যহ তাঁহার বাসার ধার দিয়া যাইতে দেখিয়া তাঁহার মনে ইচ্ছা হইয়াছিল, গোপালের সহিত আলাপ করেন। এত দিন সে অভীষ্ট সিদ্ধ হয় নাই । আজি গোপালকে দরজায় দেখিয়া হেমচন্দ্র তাঁহাকে বিছানায় আসিয়া বসিতে বলিলেন ।