পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রিংশ পরিচ্ছেদ : ১১১ গোপাল কহিলেন, “মহাশয়, আমি যেখানে আছি, সেইখানে থাকি। আমি বিছানায় যাব না।” হেমচন্দ্র দরজার নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “যাবে না ? বটি এখন শীঘ্র থামছে না । কত ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন ? গোপাল হেমচন্দ্রের কথা শুনিয়া বৈঠকখানায় আসিলেন এবং মাটিতে পা রাখিয়া তক্তাপোশের ধারে বসিলেন । হেমচন্দ্র কহিলেন, “উপরে এসে বসন ৷” গোপাল নিজের পায়ের দিকে দণ্টি নিক্ষেপ করিয়া কহিলেন, “না মহাশয়।" হেমচন্দ্ৰ কহিলেন "কেন ? কত ক্ষণ অমন ক’রে বসে থাকবেন ?" গোপাল কিঞ্চিৎ লজিত হইয়া অবনত মুখে কহিলেন, “আমার জয়তো ছোঁড়া, পায়ে কাদা লেগেছে, বিছানার উপর পা দিলে বিছানা নট হয়ে যাবে।" হেমচন্দ্র অবিলম্বে চাকরকে পা ধুইবার জল দিতে বলিলেন । গোপাল অত্যন্ত অনিচ্ছাপবেক পা ধুইয়া তত্ত্বাপোশের উপর বসিলেন । হেমচন্দ্র তাঁহার হাত ধরিয়া তাকিয়ার কাছে লইয়া বসাইলেন। একট বিলম্বে চাকর জলখাবার আনিল । হেম চাকরের নিকট হইতে রেকবখানি লইয়া গোপালকে খাইতে কহিলেন । হেমচন্দ্রের আদর দেখিয়া গোপাল প্রথমতঃ লজ্জিত হইলেন, পরে অবনত মুখে কহিলেন, “আমি কিছু খাব না। আমার এ সময় খাওয়া অভ্যাস নাই ।” হেমচন্দ্র গোপালের হাতে খাবার তলিয়া দিলেন । গোপাল অত্যন্ত অনিচ্ছাপবেক জল খাইলেন । বণ্টি ক্রমশঃই বধি হইতে লাগিল । চত-দিক অন্ধকার হইয়া আসিল । বাটীর সম্মুখের রাস্তা জলমগ্ন হইয়া গেল। লোকজনের চলা-ফেরা বন্ধ হইল । তদশনে গোপাল কহিলেন, “বটি আর এখন শীঘ্র থামবে না। সন্ধাও হ’ল, আমি এখন যাই ।” হেমচন্দ্র কহিলেন, “কি বলেন মহাশয় ? এই বটিতে যাবেন ?” গোপাল কহিলেন, “আমার বাটীতে প্রয়োজন আছে । এখন না গেলেই নয়।” হেমচন্দ্র কহিলেন, “আপনার কি প্রয়োজন ?” গোপাল প্রকৃত না কহিয়া বলিলেন, "কাপড়-চোপড় ভিজে গিয়েছে, না ছাড়লে অসুখ হবে ।” হেমচন্দ্র উত্তর করিলেন, “আপনি কি এখানে একখান কাপড় পাবেন না ?” এই বলিয়া চাকরকে একখানা ধতি আনিতে কহিলেন । গোপাল লজ্জিত হইয়া কহিলেন, “না মহাশয়, আমার কাপড় ছাড়বার তত প্রয়োজন নাই। আমার আরও কিছু প্রয়োজন আছে ।” হেমচন্দ্র গোপালের কাপড়ে হাত দিয়া দেখিলেন, কাপড় ভিজিয়া গিয়াছে । বিস্ময়াত্মক স্বরে কহিলেন, “কাপড় ছাড়বার প্রয়োজন নাই ? এত ভিজলেও যদি ছাড়ার প্রয়োজন না থাকে, তবে আর কখনই প্রয়োজন হয় না।”