পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১১২ গোপাল কহিলেন, "মহাশয়, আমি এখন কাপড় ছাড়বো না। আমি বাসায় যাই ।” এই বলিয়া উঠিবার উদ্যোগ করিলেন। - হেমচন্দ্র গোপালের হাত ধরিয়া বসাইলেন ; কহিলেন, “এ সময় আমি আপনাকে যেতে দিতে পারি না।" গোপাল লৎজাবনত মুখে কাতর সবরে কহিলেন, "মহাশয়, আপনার সহিত আলাপ করা আমার বহ কাল বাসনা ছিল । আমি পুস্তক কিনিতে পারি না । আপনার নিকট হ’তে দু-একখানি নিয়ে বাব মনে করতাম, আজ আপনার সহিত দৈবাৎ আলাপ হয়ে আমার বড় আহলাদ হয়েছে । আমার যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্ত বিশেষ প্রযোজন আছে ; না গেলেই নয়।” “আপনার আবার বিশেষ প্রয়োজন কি ? ' “আপনি আমার উপর যে অন.গ্রহ করেছেন, তাতে না বলে আমার পক্ষে অকৃতজ্ঞতা হয়। আমি এক বাসায় পাকশাক করে এবং বেতন স্বরপ সেইখানে থাকি আর খাই ।” গোপাল এই কথা বলিয়া মাটির দিকে মুখ নামাইয়া বসিলেন । হেমচন্দ্র গোপালের কাতর বর ও কথা শুনিয়া অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন এবং উপস্থিত বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে কথা ফিরাইবার জন্য জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার সহিত এত দিন আলাপ করতে ইচ্ছা ছিল, করেন নাই কেন ?" গোপাল কহিলেন, “আপনারা বড়মানুষ ; কি জানি, যদি আপনি কথা না কন, এই ভয়ে এত দিন আপনার এখানে আসি নাই। আজ ব্যটি এলো, কি করি ?" হেমচন্দ্র হাসিয়া কহিলেন, "ক আমি বড়মানুষ ? আমি ত আপনার চাইতে অধিক বড় না। যদি অধিক হই, তবে এক ইঞ্চি লবাহবো।" গোপাল হাসিয়া কহিলেন, “আমি সে বড়র কথা বলছি না।” হেমচন্দ্র কহিলেন, “সে যাহা হউক, এখন এই ধতিখানা পরনে দেখি ” গোপাল কি করেন, ধুতিখানি পরিলেন এবং আপনারখানি হাতে করিয়া লইতে গেলেন । হেমচন্দ্ৰ লইতে দিলেন না । কহিলেন, “কাপড় ও বই এইখানেই থাকক, কাল সকলে যাবার সময় নিয়ে যাবেন।” এই বলিয়া একটি ছাতি দিলেন ও চাকরের হাতে আগে আগে একটি লণ্ঠন দিয়া পাঠাইলেন। গোপাল যে বাটীতে থাকিতেন, সেই বাটীতে কানাই নামে তাঁহার সমবয়স্ক একটি বালক ছিল । তিনি বাবর জ্যেষ্ঠ পত্র। গোপালকে দেখিয়া তিনি কহিলেন, "তব ভাল, গোপালবাবর সঙ্গে দেখা পাওয়া গেল । বাব বুঝি এখন ল"ঠন নৈলে চলতে পারেন না ?" গোপাল কহিলেন, “কানাই বাব, আমার অপরাধ হয়েছে। বটিতে আসতে পারি নাই। একট চাপ করন, কত্তাবাব টের পাবেন।” কানাই। কত্তাবাব; আর আমি কি পথিক ? তিনি তা টের পেয়েছেন ।