পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বলিতা : Y S 8 গোপাল। আজ আমার একে দেরি হয়েছে। তায় তেল কম হ’লে আরও কত বকবে । আজ আর আমি পড়বো না । গোপাল পড়িবার জন্যে শ্যামার বেতন হইতে পয়সা দিয়া তৈল কিনিয়া আনিতেন। প্রায়ই সেই তৈল হইতে মাঝে মাঝে ঘসে দিতে হইত। তাহা না হইলে বাবর স্মী বলিতেন, “সব চরি করিল।” গোপাল রন্ধনাদি করিয়া থালায় থালায় ভাত বাড়িয়া বাবকে, বাবর তাঁকে, কানাই বাবকে ও খোকা খাকীকে দিয়া আসিলেন। পরে শ্যামার জন্যে ভাত বাড়িয়া নিজে আহার করিতে বসিবেন, এমন সময় কানাই বাব কি চাহিলেন ; গোপাল গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আর আপনাদের কিছ: চাই ?” কত্তাবাব সক্রোধে কহিলন, “তুমি যে দিন দিন নবাব সেরাজদ্দৌলা হচ্ছ । ভাত দিয়ে একট দাঁড়াতে পার না ? অমন করলে আমার এখানে চাকরি করা পোষাবে না ।” কানাই বাবর মখে আর হাসি ধরে না। গোপাল অধোবদনে দাঁড়াইয়া রহিলেন । কানাই বাব কহিলেন, "সেরাজদ্দৌলা ! মাছ আছে আর " গোপাল সে দিবস বাবদিগের মনস্তাষ্টি করিবার জন্য যা কিছ ভাল জিনিস ছিল, সকলই বাবদিগকে দিয়াছিলেন, সতরাং কানাই বাবকে কহিলেন, “আর মাছ নাই ।” 闵 বাবরে স্ত্ৰী কহিলেন, “চার পয়সার মাছ সব ফরিয়ে গেল ?” গোপাল । সবই আপনাদের দিয়েছি । কানাই বাব কহিলেন, “আচছা, তরকারির জায়গাখান দেখি ।” গোপাল নিজের জন্যে ও শ্যামার জন্যে যাহা পাতে রাখিয়াছিলেন, একত্র করিয়া কানাই বাবর কাছে লইয়া দেখাইলেন। কানাই বাব দেখিয়া বলিলেন, “তুমি নীচে রেখে এসেছ ” গোপাল দুঃখিত হইয়া কহিলেন, "তবে আমি এইখানে থাকি, আপনাদের আহার হলে আমার সঙ্গে আসিয়া দেখন।" কানাই বাব রাগ করিয়া কহিলেন, “যত বড় মুখ তত বড় কথা ?” গোপাল আর উত্তর করিলেন না । বাবদিগের আহারাদি হইলে নীচে আসিয়া শ্যামাকে কহিলেন, “দিদি, তমি খাও ; আজ আমি খাব না।" শ্যামা জিজ্ঞাসা করিল, “কেন খাবে না ?” বাবদিগের কথা শুনিয়া গোপালের অত্যন্ত কষ্ট হইয়াছিল। কিন্ত তিনি সে কথা না বলিয়া কহিলেন, “আজ হেমবাবদের বাড়ী জল খেয়ে আমার আর ক্ষুধা নাই ।” গোপাল কি জন্যে আহার করিলেন না, শ্যামা বঝিতে পারিল এবং নিজেও আহার না করিয়া শয়ন করিতে গেল ।