পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১১৬ হইতেই প্রথমে নিগত করাইবেন ইচ্ছা করিয়াছিলেন। সতরাং রামকমার সে সম্বন্ধে কিছু না বলায় কিঞ্চিৎ দুঃখিত হইলেন । একটু পরে আবার কহিলেন, “আচছা রামকমার, আমরা যদি হঠাৎ গরিক হয়ে যাই, তা হলে কি হবে ?" রামকুমার একটা গভীর হইয়া কহিল, “মা কালীর ইচ্ছায় তা তোমরা হবে না । যদি বিদ্যা শিখিতে পার, তবে তোমার টাকার ভাবনা কি ?” রামকুমার তথাপি পথে আইল না । হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “আচ্ছা, যদি বিদ্যা না শিখবার আগেই গরিব হই, তা হলে আমাদেরও হয় ত কারর বাড়ী ভাত রানতে হবে।” রামকুমার কহিল, “না না । এমন কথা মুখের আগায়ও আনতে নাই ।” এমন সময় আহারের জায়গা করিয়া ব্রাহ্মণ হেমবাবকে আহার করিতে ডাকিল। হেমবাব বিরস বদনে আহার করিতে গেলেন । আহারাতে উপরে গিয়া শয়ন করিলেন । ক্ষণকাল বিলম্বে রামকুমারও আহার করিয়া উপরে গেল । রামকমার বাবর শয়ন ঘরেই শুইয়া থাকে। হেমচন্দ্র পান খাইতে খাইতে পুনরায় কহিলেন, "রামকুমার আমরা খাওয়াদাওয়া ক’রে শলাম ; কিন্ত সে ছেলেটি বোধ হয় এখনও রাঁধছে ।” রামকমার উত্তর করিল, “সকলের অদেষ্ট কি সমান ? তা হ’লে পথিবী চলতো না । সকলেই ত তা হলে মনৌব হ’ত । চাকোর আর পাওয়া যেত না ।” রামকুমারের কথা শুনিয়া হেম ক্ষণকাল চপ করিয়া রহিলেন, পরে কহিলেন, “রামকমার, ছেলেটিকে দেখে আমার বড় দঃখ হয়েছে । আমার ইচ্ছা করছে, ওকে এনে আমার এইখানে রাখি । তা হ’লে ওর কট থাকবে না, অনায়াসে চারটি রাধা-ভাত পাবে ।” বালককালাবধি হেমচন্দুের যাহা যখন ইচছা হইয়াছে, তাহাই সম্পাদিত হইয়াছে। বিশেষ, তাহার মাতার কাল হওয়া অবধি তহিকে কেহ উচ্চ কথাটি কহে নাই । রামকমার হেমের কথা শুনিয়া কহিল, “তোমার ইচেছ হয়ে থাকে আন ।" হেম কহিলেন, “বাবা কি কিছু বলবেন ?" রামকমার উত্তর করিল, “তিনি কি কখন কিছ তোমাকে বলেছেন যে আজ বলবেন ? তিনি চারটি ভাত দিতে কাতর ? শত শত লোক দগার আশীবাদে তোমাদের বাড়ীতে খাচ্ছে। আজ একজনের কথা শুনেই কি তিনি রাগ করবেন ?" হেম । তবে তাঁকে একখানা পত্র লিখি ; আর ও ছেলেটিকেও কাল এখানে আনি । রাম । পত্র লিখলেও হয়, না লিখলেও হয় । হেম, রামকমারের আশ্বাস-বাক্যে যার-পর-পর-নাই সন্তুষ্ট হইলেন। প্রফলচিত্ত হইয়া নিদ্রা যাইবার উদ্যোগ করিলেন। কিন্ত সহসা নিদ্রা না হওয়ায় উঠিয়া বসিলেন এবং প্রদীপ জালিয়া পত্র লিখিতে লাগিলেন ।