পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একত্রিংশ পরিচ্ছেদ : ১১৭ রজনী প্রভাত হইলে হেমচন্দ্র শয্যা হইতে গাত্ৰোখান করিয়া বৈঠকখানায় গিয়া বসিলেন। একটা এ-পুস্তক ও-পাতক পাঠ করিয়া হীরে নামক চাকরকে ডাকিয়া গোপালকে ডাকিয়া আনিবার জন্য পাঠাইয়া দিলেন । গোপাল প্রাতঃকালে রন্ধনাদিতে ব্যস্ত থাকেন, সতরাং হেমের নিকট আপিতে পারিলেন না । কিন্ত বলিয়া পাঠাইলেন, তিনি ইসকলে যাইবার সময় হেমবাবর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া যাইবেন। অন্যান্য দিবস অপেক্ষা অদ্য গোপাল সত্বরে পাকশাক সমাধা করিয়া বাবদিগকে আহার করাইলেন এবং নিজে চারিটি নাকে মখে দিয়া কলে যাইবার জন্য বাহির হইলেন । হেমবাবর ধতিখানি যত্নগবেক পাট করিয়া একখানি কাগজে মড়িয়া লইয়া চলিলেন । হেমবাবর বাসার কাছে আসিয়া গোপালের যেন শরীর কম্পিত হইতে লাগিল । রাস্তায় একটু থামিয়া পনবার চলিলেন। হেমবাব রাস্তার ধারে জানালার কাছে বসিয়া ছিলেন ; গোপালকে দেখিতে পাইয়া সত্বরে বাহির আসিয়া গোপালের হাত ধরিয়া লইয়া তক্তাপোশের উপর বসাইলেন । গোপাল ধতিখানি আস্তে আস্তে বিছানার উপর রাখিলেন । হেম জিজ্ঞাসিলেন, “এ কি ? আপনি এ আনলেন কেন ?” গোপাল কহিলেন, "যখন আপনার চাকর গিয়েছিল, তখন শাখায় নি ব’লে পাঠিয়ে দিতে পারি নাই ।” হেমচন্দ্র কিঞ্চিৎ লজ্জিত হইয়া কহিলেন, “আমি হীরেকে কাপড়ের জন্যে পাঠাই নাই । আপনাকে ডাকতে পাঠিয়েছিলাম।” গোপাল কথা কহিলেন না । হেম পুনরায় কহিলেন, “কাল রাত্রে আমি এক বিষয় সিথর করেছি । আপনাকে বলবো মনে করেছি, কিন্ত বলতে শঙ্কা হচ্ছে ।" গোপাল মুখ তলিয়া একট: হাসিয়া কহিলেন, ‘আমার সহিত আপনি কথা কন, এ আপনার অনুগ্রহ। শংকা কি ?" হেমচন্দ্র উত্তর করিলেন, “তবও শঙ্কা হচ্ছে। আপনি যদি কিছ মনে না করেন, ত বলি।” গোপাল কহিলেন, “আমি আর কি মনে করবো ? কিন্ত এই মাত্র অনুরোধ করিতে ইচ্ছা করি যে, আপনি আমাকে ‘আজ্ঞা মহাশয় ব'লে কথা কবেন না ।" হেম হাসিয়া উঠিলেন । গোপালও হাসিয়া কহিলেন, “আমি রসয়ে বামন ; আমাকে ‘আজ্ঞা মহাশয়’ বলে কথা কইলে আমার বড় লৎজা হয় ; আর লোকেই বা শনে কি বলবে ?" হেম হাসিতে হাসিতে কহিলেন, “তবে কি বলবো ?" গোপাল কহিলেন, আমার নাম ধরে ডাকবেন ।” হেমচন্দ্র কহিলেন, “তবে আমার একটা কথা আপনার রাখতে হবে ।” গোপাল । কি কথা ?